মাছ চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছেন হাওরপারের যুবকরা

জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, সুনামগঞ্জ
  প্রকাশিত : ০২ জানুয়ারি ২০২২, ১৪:৪৫
অ- অ+

যুগ যুগ ধরে বোরো ফসলি জমির ওপর নির্ভর করেই কোনোরকমে চলত প্রত্যন্ত হাওরপারের মানুষের জীবন-জীবিকা। বছরে একবার বোরো ধান চাষ করেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানির কারণে প্রতিবছর লোকসান গুণতে হতো তাদের। ঘরে ঘরে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব লেগেই থাকত। কর্মসংস্থানের অভাবে দলে দলে গ্রামের বেকার যুবকরা ঢাকামুখী হতো কিংবা বিদেশ পাড়ি জমাত। তবুও কাটত না এখনকার অর্থনৈতিক দুরাবস্থা। তবে হাওরপারের অর্থনৈতিক এই বেহাল দৃশ্যপট এখন পাল্টে গেছে।

বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার প্রত্যন্ত হাওরপারের এলাকার যুবকরা এখন স্বাবলম্বী হচ্ছেন। মাছ উৎপাদন, আহরণ, পরিবহন এবং বাজারজাতকরণ কাজে শত শত বেকার যুবকের সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানের। পাশাপাশি মিটছে আমিষের চাহিদাও।

উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের যুবক সোহেল আহমদ অর্থনৈতিক টানাপোড়নে কর্মসংস্থানের জন্য পাড়ি জমিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। সেখানে প্রায় এক দশক প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করেছেন তিনি। ২০১৬ সালে বিদেশের কাজ ছেড়ে এলাকায় এসে থিতু হন। গ্রামে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেও ভাগ্যের চাকা পাল্টায়নি তার। পরে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে শুরু করেন বাণিজ্যকভাবে মাছ চাষ। বর্তমানে তার ৩০০ শতাংশ জমির একটি বিশাল পুকুরসহ ছোট্ট বড় আরও ৪-৫টি পুকুর রয়েছে। এখানে মাছ চাষ করে প্রতিবছর কয়েক লাখ টাকা লাভ করছেন তিনি।

সোহেল আহমদ বলেন, 'প্রবাসে যেই সময় ব্যয় করেছি দেশে তার চেয়ে কম সময় ব্যয় করেও এখন অধিক উপার্জন করছি। বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করে আমি লাভবান। দেশে এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে আছি। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মাছ চাষের খামারকে আরও সম্প্রসারণ করা। শুধু সরকারি চাকরি আর বিদেশগামী না হয়ে দেশের প্রতিটি এলাকার যুবকদের প্রত্যেকের নিজ এলাকায় আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করা উচিত।'

শুধু বিদেশফেরত যুবক সোহেল আহমদ একাই নয়, তার মতো আলীপুর গ্রামের সিরাজ মিয়া, হাবীবুর রহমান, আব্দুস শহীদ, সজীব মিয়াসহ আশপাশের গ্রামের বেকার যুবকরা এখন মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। মাছ চাষ ও ব্যবসায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই গ্রাম থেকে কয়েকজন মৎস্যখামারি ইতোমধ্যে একাধিকবার জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষির স্বীকৃতি ও সম্মাননা পেয়েছেন। সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর ছাড়াও নূরপুর, টেংরাটিলা, বৈঠাখাই, সোনাপুর ও নন্দীগ্রামে কনছখাই এবং কানলার হাওরপাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে শত শত বাণিজ্যিক মাছ চাষের পুকুর। এসব পুকুরে চাষ হচ্ছে পাঙাশ, তেলাপিয়া, কাতলাসহ সকল প্রকার বিদেশি জাতের কার্প জাতীয় মাছ। গ্রামের প্রধান সড়ক ও হাওরের পাশে একের পর এক পুকুর দেখে মনে হয় প্রতিটি গ্রাম যেন পুকুরে ঘেরা।

আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা জেলার শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষি সম্মাননাপ্রাপ্ত আব্দুর রহিম ও নূরুল ইসলাম বলেন, 'প্রশিক্ষণ ও সহজে ঋণপ্রাপ্তি এবংসড়ক যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা গেলে অদূর ভবিষ্যতে হাওরপারে মৎস্য বিপ্লব ঘটবে। হাওরপারের এই প্রত্যন্ত এলাকা হবে দেশের মাছ উৎপাদনের রোল মডেল।'

দোয়ারাবাজার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি বর্মন বলেন, 'পুরো উপজেলায় ৪ হাজার ৬৬৬টি মাছ চাষের পুকুর রয়েছে। হাওরপারে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের পুকুরের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। সেখানকার আবহাওয়া ও মাটি মাছ চাষ উপযোগী, যেকারণে সেখানে মাছের উৎপাদন হয় ভালো। আমরা চাষিদের মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সকল ধরনের পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা করে আসছি।'

(ঢাকাটাইমস/২জানুয়ারি/এলএ/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ছাগলকাণ্ডের সেই ছাগলটির খোঁজ মিলল
গাইবান্ধায় বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষ, নিহত ৩
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ঈদের আগে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ 
সিরাজগঞ্জে যমুনায় পানি বৃদ্ধি, ডুবে গেছে ফসলি জমি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা