করোনার ঊর্ধ্বগতি: কক্সবাজারে বাতিল হচ্ছে হোটেল-মোটেল বুকিং

ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার
  প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:১২| আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:২৩
অ- অ+

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়। কমে আসছে পর্যটকদের আনাগোনা। হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে কম রুম বুকিং হচ্ছে। আবার অনেকে রুম বুকিং দিয়ে করোনায় আক্রান্ত ও বিধি নিষেধে অনেকটা বুকিং বাতিল করছে। ভিড় নেই সমুদ্র সৈকত, রেস্টুরেন্ট ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের দোকানসহ স্পটগুলোতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কারণে মানুষ আতঙ্কিত। অনেকটা ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি ও যেকোন মুহূর্তে লকডাউনের ঘোষণা আসতে পারে, এমন আতঙ্কে পর্যটকদের আনাগোনা কমেছে।

পর্যটন মৌসুমে স্বাভাবিকভাবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়াও সবসময় অন্তত ৫০ ভাগ রুম বুকিং থাকে। কিন্তু নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে রুম বুকিং এখন ২০ শতাংশে নেমেছে। আবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ৭০-৮০ শতাংশ রুম বুকিং থাকে। সেটিও ৪০ শতাংশে নেমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে নতুন করে পর্যটন ব্যবসায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কলাতলির হোটেল বে-মেরিনার ম্যানেজার রফিক উল্লাহ জানান, করোনার বিধিনিষেধে অনেকটা কমতে শুরু করেছে পর্যটক। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার উপলক্ষে বেশ কয়েকটি রুম বুকিং ছিলো। কিন্তু করোনায় আক্রান্তের অজুহাতে বেশিরভাগ রুমের বুকিং বাতিল করেছে। এভাবে চললে আবার ধস নামবে ব্যবসায়।

সেন্টমার্টিন নৌ-রুটের জাহাজ কেয়ারী ট্যুরস অ্যান্ড লিমিটেডের কক্সবাজার অফিস ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ ছিদ্দিকী জানান, গেল কয়েকদিনে বড় বড় তিনটি গ্রুপ জাহাজের বুকিং বাতিল করেছেন। সরকারি ছুটি বাতিল হওয়ায় প্রশাসনের ৯৫ জনের একটি গ্রুপ বুকিং বাতিল করেছে। প্রতিদিন জাহাজে সিট খালি যাচ্ছে এখন।

নুর মোহাম্মদ জানান, সরকার আবার কখন লকডাউন দেয় তা নিয়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে আছে। এর কারণেও অনেকে আসার সাহস করছে না।

ঢাকার সাভার থেকে বেড়াতে আসা মাহফুজুর রহমান নিপু জানান, অনেকদিন পর কক্সবাজারে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসে খুবই ভালো লেগেছে। তবে করোনা ও প্রশাসনের বিধি নিষেধের খবর দেখে দুদিন আগে বাড়িতে চলে যেতে হচ্ছে।

একই অবস্থা নামি-দামি খাবারের হোটেল রেস্তোরাঁয়ও। বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের আইটেম প্রস্তুত করলেও ভোজনরসিক পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় অনেক খাবার নষ্ট হচ্ছে। এমনকি নতুন করে লকডাউনের ঘোষণা এলে বড় ধরনের লোকসান আতঙ্ক কাজ করছে তাদের মাঝে।

কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁর চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, মাত্র ২১ দিন আগে তার প্রতিষ্ঠান কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁর একটি শাখা খুলেছেন। কোটি টাকা ইনভেস্ট করে এখন শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে পর্যটকনির্ভর হওয়ায় করোনা আতঙ্কের পর থেকে বেচাকেনা কমে গেছে। তবে শুক্রবার হিসেবে মোটামুটি ভিড় ছিল।

হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানিয়েছেন, শুধু করোনার কারণে নয়, বিভিন্ন কারণে পর্যটকদের আনাগোনা কমেছে। করোনার পাশাপাশি এতোদিন স্কুল খোলা ছিল, স্কুলের ট্যুরও বন্ধ। এখানে যারা আসেন বেশিরভাগ ফ্যামেলি ট্যুরে আসেন। সেই হিসেবে ফ্যামেলির কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে আর আসা হয় না।

কাশেম সিকদার জানান, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। বিশেষ করে যারা আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়েছেন তারা ভয়ে আসতে চায় না।

প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে করোনা। নতুন করে যুক্ত হয়েছে ওমিক্রন। এ কারণে আতঙ্ক কাজ করলেও মাস্ক পড়া নিশ্চিত করাসহ সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে প্রতিদিন তিন-চারটি টিম নিয়ে প্রতিনিয়ত হোটেল মোটেল জোনসহ শহরের বিভিন্ন স্পটে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান।

এই সরকারি কর্মকর্তা জানান, নিয়মিত অভিযান হিসেবে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে হোটেলগুলোতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোনো বিষয়ে অসঙ্গতি পেলে জরিমানাও করা হচ্ছে।

বিশেষ করে পর্যটকদের মাস্ক ছাড়া সমুদ্র সৈকতে ঘুরাফেরা করতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। মাস্ক পড়া নিশ্চিত করতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

(ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ভেষজ পেয়ারা ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের মোক্ষম দাওয়াই
বান্দরবানের রুমায় সেনা অভিযানে কেএনএ কমান্ডারসহ দুইজন নিহত, অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার
মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বিআরটিএ’র নতুন নির্দেশনা জারি
যেসব এলাকায় আজ ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা