নরসিংদীতে আ.লীগের দুপক্ষে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ নিহত ২

নিজস্ব প্রতিবেদক, নরসিংদী
| আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:৫৪ | প্রকাশিত : ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:২৩

আধিপত্য বিস্তার ও গ্রামে ফেরাকে কেন্দ্র করে নরসিংদী রায়পুরার বাশঁগাড়ী ও মির্জাচরে আওয়ামী লীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধসহ দুজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১০ জন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে নূরুল নামে একজনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার পর থেকে এলাকা দুটিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। খবর পেয়ে রায়পুরা থানা পুলিশসহ অতিরিক্ত পুলিশ এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। রবিবার সকালে রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চল বাশঁগাড়ী ও মির্জাচর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতদের মধ্যে রুবেল মিয়া (৩২) রায়পুরার মির্জাচরের মানিক মিয়ার ছেলে। তিনি মির্জাচরের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুকুল ইসলামের চাচাতভাই।

নিহত আরেকজন মির্জাচর গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে মামুন মিয়া (৩০)। তিনি মির্জাচর ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিক সমর্থক।

এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত নূরুল হক (১৯) বাশঁগাড়ী গ্রামের সাধন মিয়ার ছেলে। নুরুল ও নিহত রুবেল নরসিংদীর রায়পুরার বাশঁগাড়ী ইউনিয়নের সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হকের সমর্থক।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, এলাকার আধিপত্য ও নির্বাচনী সংহিংসতার জের ধরে দীর্ঘদিন যাবৎ নরসিংদী রায়পুরার বাশঁগাড়ী ইউনিয়নের সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হকের সঙ্গে বাশঁগাড়ী ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান জাকির হোসেন রাতুলের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।

দ্বন্দ্বের জের ধরে তাদের মধ্যে একাধিকবার হামলা-পাল্টা-হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটে। এসব হামলায় একাধিক লোক নিহতসহ প্রায় তিন শতাধিক মানুষ আহত হয়। এরই মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পায় তৎকালীন চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হক। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন জাকির হোসেন রাতুল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়।

এদিকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে নির্বাচনের দিন ভোর থেকেই কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালায়। এরই জের ধরে রাত ৩টার দিকে নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান জাকির হোসেন রাতুলের সমর্থকরা দেশি-বিদেশি অস্ত্র-সস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হকের সমর্থকদের উপর হামলা চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

সংঘর্ষে নির্বাচনের দিন সকালে নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান রাতুলের দুজন সমর্থক ও আশ্রাফুলের একজন সমর্থক নিহত হয়। আহত হয় কমপক্ষে শতাধিক মানুষ। ১১ নভেম্বর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন রাতুল বিজয়ী হওয়ার পর এলাকা ছাড়া হয়ে পড়ে সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হক ও তার সমর্থকরা। এদিকে নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর পরাজয়ের পর মির্জাচর ইউনিয়নের ফারুকুল ইসলাম ও তার সমর্থকরাও গ্রাম ছাড়া হয়ে পড়েন।

প্রায় আড়াই মাস গ্রাম ছাড়া থাকার পর বাশঁগাড়ী ও মির্জাচরের নৌকা প্রতীকের লোকজন সম্মিলিত হয়। পরে রবিবার সকালে প্রথমে তারা আশ্রাফুল হক ও তার সমর্থকদের নিয়ে বাশঁগাড়ী গ্রামে ফেরেন। এতে বাধা দেয় বাশঁগাড়ীর বর্তমান চেয়ারম্যান রাতুল সমর্থকরা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে একজন গুলিবিদ্ধসহ ছয়জন আহত হয়।

পরে আশ্রাফুল হক ও তার সমর্থকরা গ্রামে ফেরার পর তাদের সহায়তা নিয়ে মির্জাচর ইউনিয়নের ফারুকুল ইসলামের সমর্থকরা মির্জাচর গ্রামে ফেরার চেষ্টা চালায়। ওই সময় মির্জাচরের নব-নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিক সমর্থকরা বাধা দেয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে ফারুকুল ইসলামের চাচাতভাই রুবেল মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আহত হন আরও পাঁচজন।

আহতদের মধ্যে মামুন মিয়ার হাত কেটে নেয় প্রতিপক্ষরা। গুরুতর আহত অবস্থায় মামুন মিয়াকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ভৈরব হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাল সাড়ে ৫টায় তার মৃত্যু হয়। এদিকে মির্জাচর ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিক সমর্থকদের সঙ্গে মামলা, সংঘর্ষ ও বাধার মুখে ফারুকুল সমর্থকরা গ্রামে ডুকতে পারেনি। খবর পেয়ে রায়পুরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সাবেক চেয়ারম্যান ফারুকুল ইসলাম বলেন, বাশঁগাড়ীর সাবেক চেয়ারম্যান আশ্রাফুলের লোকজনকে গ্রামে তুলে দিতে মির্জাচর থেকে লোকজন বাশঁগাড়ী যায়। সেখানে তাদের ধাওয়া দিয়ে মির্জাচর পাঠালে বাশঁগাড়ীর রাতুল চেয়ারম্যানের হয়ে মির্জাচরের মানিক চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের উপর হামলা চালায়। এ সময় প্রতিপক্ষের ছোঁড়া গুলিতে আমার চাচাতভাই রুবেল মারা যান।

অভিযোগ অস্বীকার করে মির্জাচর ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিক সাংবাদিকদের বলেন, মূলত বাশঁগাড়ীর সাবেক চেয়ারম্যান আশ্রাফুল ও মির্জাচরের ফারুকুল ইসলাম এক গ্রুপ। তারা একে অন্যকে বরাবরই সহায়তা করে। রবিবার আশ্রাফুলের লোকজনকে গ্রামে তুলে দিতে ফারুকুলের লোকজন লাঠিয়াল হিসেবে বাশঁগাড়ী যায়। সেখানে রাতুল চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের বাধা দেয় এবং ধাওয়া দিয়ে মির্জাচর এনে গন্ডগোল করেন। এতে দুজন নিহত হয়। এর মধ্যে একজন আমার সমর্থক, অন্যজন ফারুকুলের সমর্থক।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান জানান, গ্রামে ফেরাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার তথ্য পেয়েছি। এই মুহূর্তে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরবর্তী সংহিসতা রোধে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৩০জানুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :