শেরপুর জেলা বিএনপিতে বহিষ্কার-বহিষ্কার খেলা

সুজন সেন, শেরপুর
  প্রকাশিত : ০৭ মার্চ ২০২২, ১২:০১| আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২২, ১৩:৩৫
অ- অ+

শেরপুর জেলা বিএনপিতে চলছে বহিষ্কার-বহিষ্কার খেলা। পদ-পদবি বাণিজ্য ও দল পরিচালনায় অন্য নেতাদের পাশ কাটিয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত নেয়ার অভিযোগ উঠেছে দলের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। আর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার ঝড় বইছে।

ইতোমধ্যে সদ্য ঘোষিত মহিলা দলের ১ নম্বর উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম গেল ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই সম্পাদকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত করেছেন। সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার দেড় ঘণ্টার মাথায় তাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়। কেন্দ্র থেকে বহিষ্কারাদেশ আসে।

জেলা বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নামে পরিচালিত ফেসবুক আইডি থেকে বহিষ্কারের সেই চিঠি শেয়ার করা হয়েছে। গেল ১৬ ফেব্রুয়ারি শেরপুর জেলা ও শহর বিএনপির আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাসে বলা হয়- বিএনপিতে আবার যদি কেউ দলীয় শৃঙ্খলা নষ্ট করার পাঁয়তারা করে তাকে নুরজাহান বেগমের মতো দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। সতর্ক হয়ে যান কোনো ছাড় দেয়া হবে না। কারণ জেলা বিএনপি এখন বিগত দিনের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।

এই স্ট্যাটসের বিপরীতে টিপ্পনী কেটে কমেন্ট বক্সে সাজু আহমেদ নামের এক বিএনপির সমর্থক লেখেন- সবাইকে বহিষ্কার করে শেরপুরের মধ্যে একজন থাকলে আরও ভালো হবে। ক্ষমতায় নেই এখনই এই অবস্থা, ক্ষমতায় থাকলে তো মানুষ খুন করবে কথায় কথায়।

একই ফেসবুক আইডি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি আরেক স্ট্যাটাসে বলা হয়- ব্রেকিং নিউজ। খুব শিঘ্রই শেরপুর বিএনপি ও অঙ্গ দলের আরো কয়েকজনের বহিষ্কারের চিঠি আসতে পারে।

এই স্ট্যাটাসের বিপরীতে কমেন্ট বক্সে অনেকের মধ্যে তামিজ আহমেদ নামে এক বিএনপি সমর্থক লেখেন, ‘শেরপুরে ইদানীং ভাইয়ের রাজনীতি চলতাছে, যার যেমন খুশি দল চালাচ্ছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হতে গড়া দল বিএনপিকে তারা অন্তর থেকে চায় না, দিনে বিএনপি রাতে আওয়ামী লীগ। দলকে সুসংগঠিত না করে ধ্বংস করতেছে তারা। প্রকৃত দোষীর শাস্তি হোক, তবে ভাইয়ের রাজনীতি চাই না।’

জয়নাল আবেদীন নামে আরেকজন লেখেন, ‘কম্বলের লোম বাছলে তো কম্বলই শেষ হয়ে যাবে।’

বহিষ্কার হওয়া জেলা মহিলা দলের ১ নং উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম জানান, ৭৯ সাল থেকে তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জেলা শহরের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে মহিলা দলের সভানেত্রী, শহর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের কার্যকরী কমিটির সদস্য এবং জেলা মহিলা দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভানেত্রী হিসাবে প্রায় ১১ বছর দায়িত্ব পালন করেন।

নুরজাহান বেগম জানান, জেলা মহিলা দলের নতুন কমিটি গঠনের লক্যেসভ প্রায় চার মাস আগে পুরনো কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

গেল ৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে সুলতানা রাজিয়াকে সভাপতি এবং রায়হানা আক্তার লিপিকে সাধারণ সম্পাদক করে মহিলা দল শেরপুর জেলা শাখার ৬৬ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কার্যকরী কমিটি ঘোষণা করা হয়। আর ওই কমিটিতে নুরজাহান বেগমকে ১ নং উপদেষ্টা পদে রাখা হয়।

নুরজাহান বেগম অভিযোগ করে বলেন, ওই ৬৬ জন সদস্যের মধ্যে ৪-৫ জন ছাড়া বাকিরা কেউ কোনো দিন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না। এটি অবৈধ এবং মনগড়া পকেট কমিটি। লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী ও দলের আরও একজন নীতিনির্ধারক এই কমিটি অনুমোদনে সহায়তা করেছেন। শুধু তাই না দলের অন্য সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী টাকা দিলে পদে থাকছে আর না দিলে পদবঞ্চিত হচ্ছেন।

নুরজাহান বেগম আরও অভিযোগ করে বলেন, জেলার পাঁচ উপজেলায় বিএনপিতে পদে আসতে দশ হাজার থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে।

এ ছাড়া দলে এ রকম অরাজগতা চলমান থাকায় বহু নেতাকর্মী ঝিমিয়ে পড়েছে। এ কারণে সাধারণ সম্পাদক তার অনুসারীদের নিয়ে নিজ বাড়িতে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেন বলে অভিযোগ করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবদলের দায়িত্বশীল পদে থাকা বেশ কয়েকজন নেতা অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ সম্পাদক তার একক সিদ্ধান্তে দল পরিচালনা করছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল পরিচালনায় প্রতিটি পদক্ষেপ দলীয় ফোরামে আলোচনার জন্য বলা হলেও ওই বিষয়টিকে তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন।

দলের পদ-পদবি কেনাবেচার বিষয়ে জানাতে চাইলে ওই নেতারা জানান, এ ধরনের কথা অনেকেই বলছেন। তবে তাদের সামনে এ ধরনের লেনদেন হয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে ওই নেতারা জানান, দলে এখন বহিষ্কার-বহিষ্কার খেলা শুরু হয়েছে। তাই তারা নিজেদের পদ বাঁচানোর তাগিদে সংবাদে নিজের নাম পরিচয় প্রকাশ করতে আগ্রহী না।

টাকার বিনিময়ে দলীয় পদ-পদবি বিক্রি করছেন কর্মীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী এই প্রতিবেদকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। বলেন, ‘আপনি একজন শিল্পপতির সাথে কথা বলছেন। তাই অভিযোগের লিখিত ডকুমেন্ট হাতে নিয়ে কথা বলবেন। এ ধরনের প্রশ্ন করার সাহস কীভাবে পেলেন!’

একপর্যায়ে তিনি এই প্রতিবেদকের প্রতি উল্টো অভিযোগ এনে বলেন, ‘অন্যের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে ওই সব মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যের জবাব নেয়ার চেষ্টা করছেন আপনি।’

এর আগে ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম স্বপন দলে কোন্দলের বিষয়ে সমালোচনা করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়ায় তাকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/৭মার্চ/এলএ/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
শেখ মুজিবের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বহাল রেখে সংশোধিত খসড়া উঠছে উপদেষ্টা পরিষদে
ঘুষ কম দেওয়ায় সেবাগ্রহিতার মাথা ফাটালেন অফিস সহকারী
এস আলম গ্রুপের অপকর্মের সহযোগী সাবেক জামায়াত নেতা ফখরুলের বিএনপির মনোনয়ন বাসনা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ হুমকির মামলা!
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা