ফেনীতে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন

এম শরীফ ভূঞা, ফেনী
  প্রকাশিত : ১৭ মার্চ ২০২২, ১৭:০১
অ- অ+

ফেনীর দাগনভূঞা ও সোনাগাজীতে সমুদ্র উপকূলীয় বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের ভূমিগুলো বছরের পর বছর অনাবাদি ও পতিত থাকলেও বর্তমানে সেখানে তরমুজ চাষ হচ্ছে। সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি ও বাজারজাতকরণে সুবিধা থাকায় এখানকার সুস্বাদু ও মিষ্টি তরমুজ চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলার ভোক্তার কাছে। দুই বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে এসব এলাকায় তরমুজ চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কৃষক। বেড়েছে তরমুজের আবাদ।

জানা যায়, ফেনীর চরাঞ্চলে আগে কখনো তরমুজ চাষ হয়নি। ২০১৭ সালে নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে আগত এক কৃষক পরীক্ষামূলক সোনাগাজীর চরদরবেশ ইউনিয়নে তরমুজ চাষ করেন। ওই বছর তার সাফল্য দেখে ২০১৯ সালে ৮-১০ জন কৃষক তাদের জমিতে রবি মৌসুমে তরমুজ চাষ করে লাভবান হন। উৎপাদনে সম্ভাবনা ও ভালো দাম পায়।

পরে নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকা থেকে আসা পেশাদার তরমুজ চাষিরা ২০২০ সালে সোনাগাজীর সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় ১০৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ শুরু করেন। তাদের দেখে ২০২১ সালে ৩১৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়। চলতি মৌসুমে সোনাগাজীর বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলে ভিক্টর সুগার, ওশেন সুগার, ব্লাক বেরী ও দেশীয় জাতের ৩৪৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোনাগাজীর চরাঞ্চলে যুগের পর যুগ অনাবাদি অবস্থায় থাকা জনমানবশূন্য বিস্তৃর্ণ ভূমি এখন তরমুজ চাষে সবুজে পরিণত হয়েছে। উপজেলার চরদরবেশ, চরছান্দিয়া ও সোনাগাজী সদর ইউনিয়নে যতদূর চোখ যাবে, দেখা মেলবে তরমুজের আবাদ। অন্যদিকে দাগনভূঞার পূর্বচন্দ্রপুর ও জায়লস্করসহ বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে চাষাবাদ শুরু করেছে।

একইভাবে ১৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন মো. হানিফ।

তিনি বলেন, সোনাগাজীতে উৎপাদিত তরমুজের আকার, স্বাদ ও পুষ্টিগুণ ভালো থাকায় কম সময়ে পাইকারদের আকৃষ্ট করা গেছে। তাছাড়া গত বছর সোনাগাজী-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে সাহেবের হাট সেতু উদ্বোধনের পর নোয়াখালী ও ফেনীতে যাতায়াত সুবিধা সৃষ্টি হয়। ফলে সোনাগাজীর চরাঞ্চলে উৎপাদিত ফসলের বাজারজাত সহজ হয়ে ওঠায় পাইকারি ক্রেতাদের কাছে এখানকার তরমুজের চাহিদা বেড়ে গেছে। সড়ক ব্যবস্থার উন্নতির ফলে সোনাগাজী থেকে সংগৃহীত তরমুজ সহজেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া যায়।

নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ থেকে তরমুজ চাষ করতে আসা কৃষক খেতের মাঝেই ‘টংঘর’ স্থাপন করে থাকা-খাওয়া আর বিশ্রাম করছেন। মরু-সাদৃশ্য ভূমিতে রোদের উত্তাপ এড়িয়ে কৃষক এখন তরমুজ খেতে আগাছা ও পোকা দমনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পরিবেশ ভালো হওয়ায় এরই মধ্যে কিছু কিছু খেতে খুচরা পর্যায়ে তরমুজ বিক্রি শুরু হলেও আগামী সপ্তাহ থেকে জমে উঠবে তরমুজের বেচাকেনা।

নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে আসা তরমুজ চাষি শাহরাজ সর্দার জানান, তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে পাঁচ মাসের জন্য প্রায় ৭০ একর জমি লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করেছেন। প্রতি একরে উৎপাদন ও পরিচর্যা ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা। প্রতি একর থেকে তিনি দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা তার।

তিনি আরও জানান, তরমুজ চাষে ক্ষতির আশঙ্কা তেমন নেই। সময় কম লাগে। লাভও ভালো। প্রতি বছর তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করে আসছেন। তরমুজ বিক্রি শেষে তিনি আবার নিজ এলাকায় চলে যাবেন।

দাগনভূঞা উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মারুফ জানান, বাজারজাতকরণে সুবিধা ও কম সময়ে ভালো লাভ হওয়ায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থেকে অনেক কৃষক ফেনীর সোনাগাজীতে তরমুজ চাষ করতে এসেছেন। চরদরবেশ ইউনিয়নের স্থানীয় কৃষক থেকে লিজ নেয়া অন্তত ১৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করা হয়েছে। গত সপ্তাহে দুই কাভার্ডভ্যান আগাম জাতের তরমুজ বিক্রি হয়েছে। পাইকাররা তরমুজের ক্ষেত পরিদর্শন করে দরদাম করে যাচ্ছেন।

সোনাগাজী উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান চৌধুরী জানান, এবার সোনাগাজীতে ব্লাক জায়ান্ট, গ্লোরি, সুগার বেবি, ট্রপিক্যাল ড্রাগন, বঙ্গলিংক ও ভিক্টর সুগার জাতের তরমুজ বেশি চাষ হয়েছে। নিয়মিত তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শন করে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মূল্যায়ন কর্মকর্তা আবু নঈম মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন জানান, সোনাগাজীতে প্রকল্পের আওতায় ১০ জন কৃষককে তরমুজ চাষের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। আশা করি প্রদর্শনীর উৎপাদন ও লাভ দেখে কৃষক তরমুজ চাষে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ হবেন।

সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, চরাঞ্চলে তরমুজের ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন আবাদ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে উপজেলার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এরই মধ্যে উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি শুরু হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় আগামীতে আরো বেশি তরমুজ আবাদের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলাম জানান, সোনাগাজীতে তরমুজের আবাদ ও ফলন বাড়ায় কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরিদর্শন ও পরামর্শদানসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চালিয়ে আসছেন। এছাড়া স্থানীয় কৃষকদের আবাদে উৎসাহী করে তুলতে পাঁচ জেলা উন্নয়ন প্রকল্প থেকে জেলাজুড়ে তরমুজ চাষের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৭মার্চ/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এক ঝাঁক অভিনেত্রীর সঙ্গে মোশাররফ করিমের ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’
আজাদ জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দারা ঘরে ফিরেছেন, ‘ভারতের উপর বিশ্বাস নেই', তাই বাঙ্কার রেখেছেন
স্বর্ণকণার জাদু: রেটিনাল রোগে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে পারে সোনার ন্যানোপার্টিকল
হজ পালনে সৌদি আরব পৌঁছেছেন ৩৮ হাজার ৫৭০ বাংলাদেশি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা