কেমন আছেন সাজেদা চৌধুরী?

মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১০ মে ২০২২, ১১:০৯ | প্রকাশিত : ১০ মে ২০২২, ০৮:১৪
সাজেদা চৌধুরী (ফাইল ফটো)

প্রায় ছয় মাস পর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন না দলের প্রবীণ নেতা প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। জাতীয় সংসদের সর্বশেষ অধিবেশনেও দেখা যায়নি এই সংসদ উপনেতাকে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির মাঠেও তেমন একটা সক্রিয় নন তিনি। কেমন আছেন সাতবারের সংসদ সদস্য সাজেদা চৌধুরী?

জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ৮৭তম জন্মদিন ছিল ৮ মে রবিবার। প্রবীণ এই নেত্রী শারীরিকভাবে বেশ নরম হয়ে গেছেন। তবে চলাফেরা করতে পারেন, নিজের খাবার নিজেই খেতে পারেন। বয়সের ভারে কিছুটা ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্যের।

একাধারে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাজেদা চৌধুরী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-২ আসন থেকে সপ্তমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাজেদা চৌধুরী ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে সরকারের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। টানা তৃতীয়বারের মতো সংসদ উপনেতা হয়েও রেকর্ড গড়লেন বর্ষীয়ান এ নেত্রী।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সহকারী একান্ত সচিব এবং আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির সদস্য মো. শফি উদ্দিন জানান, রবিবার সংসদ উপনেতার ৮৭তম জন্মদিন পারিবারিকভাবে সাদামাটা পরিবেশে উদযাপন করা হয়েছে।

সাজেদা চৌধুরীর বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. শফি উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আপা শারীরিকভাবে এখনো যথেষ্ট ভালো আছেন। তিনি নিজের মতো চলাফেরা করতে পারেন। নিজের টুকটাক কাজ করতে পারেন। তবে বয়সের ভারে কিছুটা ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে।’ নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা সময়মতো করানো হয় বলে জানান শফি উদ্দিন।

ধানমন্ডি লেকের পাড়ে ছোট ছেলের ফ্ল্যাটে এখন দিন কাটে সাজেদা চৌধুরীর। তাকে দেখতে নিয়মিতই আসেন একমাত্র মেয়ে জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী শামা রহমান এবং মেজ ছেলে আরেক নন্দিত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাজেদ আকবর। বাড়িটির তৃতীয় তলায় বসে কখনো কখনো মেয়ে শামা রহমানের সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীতে কণ্ঠও মেলান সাজেদা চৌধুরী।

করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে আর বয়স অনেক হওয়ায় বাইরের লোকজনকে তার সাথে তেমন দেখা করতে দেওয়া হয় না বলে জানান সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সহকারী একান্ত সচিব। বয়সজনিত কারণে আরও কিছু সমস্যা মোকাবিলা করছেন সাজেদা চৌধুরী। শফি উদ্দিন বলেন, ’ এ বয়সে এটা হওয়া তো স্বাভাবিক। এ সময়ে এগুলো সবারই হয়। কানে কিছুটা কম শোনা ইত্যাদি। এ ছাড়া তেমন গুরুতর কোনো সমস্যা নেই।’

মূলত বয়সজনিত শারীরিক দুর্বলতা, ভুলে যাওয়া আর কিছুটা কম শোনার প্রবণতার কারণে এখন আর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তেমন একটা অংশ নেন না ক্ষমতাসীন দলের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য। তার জন্মদিনের আগের দিন ৭ মে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক বসেছিল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাড়ি গণভবনে। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপস্থিত হতে পারেননি সাজেদা চৌধুরী। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২১ সালের নভেম্বরে সীমিত পরিসরে বৈঠকের পর শনিবার প্রথম বসে কার্যিনির্বাহী সংসদ।

একাদশ জাতীয় সংসদের বিভিন্ন অধিবেশনেও অনিয়মিত উপস্থিতি সংসদ উপনেতার। সর্বশেষ গত ২৮ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলা জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশনে যোগ দেননি তিনি। তবে এর আগে ১৬ জানুয়ারি শুরু হওয়া ১৬তম অধিবেশনে তিনি যোগ দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যখন হবে, তখন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ৯০-এর ঘরে পা দেবেন। এ বয়সে নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন কি না জানতে চাইলে মো. শফি উদ্দিন বলেন, ‘সামনে আরও সময় আছে। ওনার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে সবকিছু। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই এখানে চূড়ান্ত।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সামনের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সাজেদা চৌধুরীর আসনে (ফরিদপুর-২, নগরকান্দা-সালতা-সদরপুর) নৌকার টিকিট পেতে বেশ কয়েকজন মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয়। এর মধ্যে সাজেদা চৌধুরীর ছোট ছেলে শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবুও আছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও গুঞ্জন ছিল মায়ের আসনে লাবু টিকিট পেতে পারেন। সেবার দলের সভাপতি শেখ হাসিনার আগ্রহে প্রার্থী হন সাজেদা। জানা গেছে, বার্ধক্যজনিত কারণে সংসদীয় এলাকায় সাজেদা চৌধুরী যেতে না পারায় মায়ের হয়ে সব কাজ করেন লাবু।

১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরা জেলায় নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন সাজেদা চৌধুরী। তার বাবা সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ এবং মা সৈয়দা আছিয়া খাতুন। তার স্বামী গোলাম আকবর চৌধুরী। তিনি ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় স্থায়ীভাবে চলে আসেন তিনি। স্বামী ভাষাসৈনিক গোলাম আকবর চৌধুরীসহ চার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় আসার পর আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

১৯৬৯ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সাজেদা চৌধুরী। পরের বছর নির্বাচিত সাতজন নারী এমএনএর মধ্যে সাজেদা চৌধুরী ছিলেন অন্যতম।

কলকাতার বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলে তার প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১০মে/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :