বিশিষ্ট রাজনীতিক ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিনের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী ২৪ মে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৯ মে ২০২৪, ২১:০৯ | প্রকাশিত : ০৯ মে ২০২৪, ২০:৫৭

মহান ভাষা আন্দোলনের সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও ফরিদপুর-৩ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিনের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী আগামী ২৪ মে।

এ উপলক্ষে বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টিসহ বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন নানান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এর মধ্যে রয়েছে স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে ১৮৪ মধ্য বাসাবোতে বাদ আসর দোয়া মাহফিল, ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার বনমালিদিয়া শাহ সৈয়দ হাবিবুল্লাহ মাজার মসজিদ ও ঢাকার বনানী কবরস্থানে বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির উদ্যোগে দোয়া মাহফিল।

পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ, ১৯৭০, ফরিদপুর-২) ও গণপরিষদ সদস্য (এমসিএ-১৯৭২) ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন ১৯৩৭ সালের ২ জুলাই ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অবিভক্ত ভারতবর্ষের কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক সংগ্রাম শুরু করেন। বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল হালিম ছিলেন অল বেঙ্গল মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং দাদা সৈয়দ আব্দুল করিম অবিভক্ত ভারতবর্ষে কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিন ১৯৫২’র মহান ভাষা আন্দোলনে রাজবন্দি হিসাবে ১৯৫৩ সালে বরিশালের তৎকালীন বিএম ইনস্টিটিউট থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫৬ সালে বাগেরহাটের পিসি কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ১৯৫৯ সালে যশোরের মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে বিএ পাস করে তিনি ১৯৬৩ সালে লন্ডন গমন করেন। সেখানে ইনার টেম্পল থেকে ১৯৬৮ সালে ব্যারিস্টারি পাস করে ১৯৬৯ কুইন্স কাউন্সিলর (কিউসি) নির্বাচিত হন। পরে তিনি ব্রিটিশ হাইকোর্টের কুইন্সবেঞ্চ ডিভিশনে আইনপেশা শুরু করেন। তিনি ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসেরও একজন সদস্য ছিলেন।

ছাত্রজীবন থেকে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিন রাজনৈতিক কারণে মাত্র ১৩ বছর বয়সে কারারুদ্ধ হন। তিনি ১৯৫২ সালে বরিশাল টাউন ইয়ূথ লীগের সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভূমিকা পালন করেন। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ বরিশাল শহরের এক প্রতিবাদ মিছিল থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি লন্ডনে প্রবাসী বাঙালি ছাত্রসংগঠন “পাক ইয়ূথ ফেডারেশন” গঠন করেন এবং তার নেতৃত্বে প্রবাসী ছাত্র-জনতা ১৯৬৮’র ৭ জুলাই লন্ডনস্থ পাকিস্তান হাইকমিশন ভবন দখল করে অসহযোগ আন্দোলনের ওপর জনমত গড়ে তোলেন। ১৯৬৮ সালে তিনি “The Right of East Pakistan Defense Front” গঠন করে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তার উদ্যোগে ব্রিটিশ এমপি ও কুইন্স কাউন্সিলর স্যার টমাস উইলিয়ামকে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে শেখ মুজিবুর রহমানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে আইনি সুরক্ষার জন্য পাঠানো হয়। স্বাধিকার আন্দোলনে যোগদানের জন্য ব্রিটিশ সরকারের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে তিনি দেশে ফিরে ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে তৎকালীন ফরিদপুর-২ থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। ১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ২৬ মার্চ ১৯৭১ তার নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে।

১৮ মার্চ ১৯৭১ ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী ডাকবাংলোর সামনে বিশাল জনসমাবেশে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে নিজ এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন।

এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিভিন্ন মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প তত্ত্বাবধান করেন ও রাজনৈতিক প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭২ সালে গণপরিষদের সদস্য (এমসিএ) হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশের সংবিধানে স্বাক্ষরদান করেন। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ (বর্তমান ফরিদপুর-১, মধুখালী-বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা) থেকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়ে মওলানা ভাসানীর ন্যাপে যোগদান করে সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত সৎ, নির্ভীক, প্রচারবিমুখ, সহজ-সরল জীবনযাপনকারী ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন।

১৯৮৩ সালের ২৪ মে তৎকালীন ঢাকার পিজি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন এই বরেণ্য রাজনীতিক। বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

মরহুমের স্মৃতিকে সংরক্ষণের লক্ষ্যে ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার বনমালিদিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন টেকনিক্যাল কলেজ। তাকে নিয়ে ‘ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিন: জীবন ও রাজনীতি’ নামক একটি গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৯মে/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে অটোরিকশা বন্ধ অমানবিক: বাংলাদেশ ন্যাপ 

অটোরিকশাচালকদের ওপর সরকার স্টিম রোলার চালাচ্ছে: রিজভী 

মহানগর মহিলা দলের ৬ থানার কমিটি বাতিল, নেত্রীদের গণপদত্যাগ

কেন্দ্রীয় সম্মেলন নয় শূন্যপদ পূরণ করবে বিএনপি 

আমাদের সবার বিকল্প আছে, শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নাই: পরশ

‘শেখ হাসিনার সততা, ন্যায়নিষ্ঠা ও সংগ্রামের কথা শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে’

দেশটা এখন মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে: মির্জা ফখরুল

বিএনপি-জামায়াত দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে: কামরুল ইসলাম

বিএনপি এখন জনগণের আস্থার স্থল: সালাম

অর্থনৈতিক দুরাবস্থা ও রিজার্ভ সংকট জাতির জন্য অশনি সংকেত: ১২ দলীয় জোট

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :