অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা কমলে দেশ মহাসংকটে পড়বে: মঞ্জু

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতা এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার সংঘাত ও ভুল বোঝাবুঝি জাতিকে ক্রমশ হতাশ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা কমলে দেশ মহাসংকটে পড়বে। সংস্কার, খুনিদের বিচার ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন সবই তখন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে এবি পার্টি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মঞ্জু বলেন, সকলের সমর্থনে অন্তর্বর্তী সরকার যাত্রা শুরু করলেও ক্রমশ গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে দুটি পক্ষ তৈরি হয়ে গেছে। কার কত অবদান সে নিয়েও শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব ও একে অপরকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রতিযোগিতা। ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করার পর সকল পক্ষের ঐক্য সুসংহত করা তো দূরের কথা সে ঐক্য ধরে রাখার জন্যও সরকার কোনো চেষ্টা করেনি। এর ফলে আজ সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা কমে যাচ্ছে। নানা সন্দেহ-সংশয়ের জন্ম নিচ্ছে। এ অনাস্থা মহা সংকটের জন্ম দিচ্ছে।
সকল পক্ষকে জিদ ও হঠকারিতা পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ কথা ভুলে যাবেন না পরাজিত ফ্যাসিবাদের পক্ষে নির্লজ্জ অবস্থান নিয়েছে প্রতিবেশী আগ্রাসী রাষ্ট্র ভারত।
এসময় চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যার আশু সমাধান, বন্দর ও মানবিক করিডোর নিয়ে সকলের ঐকমত্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি জানান মঞ্জু।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, এবি পার্টির নতুন প্রজন্মের রাজনীতি হচ্ছে সেবা ও সমস্যা সমাধানের রাজনীতি, যেটার মানে হলো জনগণের ভোগান্তি দূর করবার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের রাজনীতি মানে হলো অনাবাদি জমিকে আবাদ করা, উন্নয়নের নামে যে লুটপাট হয়েছে তা বন্ধ করা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে পরিচালনা করা যাতে জনগণের টাকা লুটপাট না হয়, বন্যার পানিতে জলাবদ্ধতায় যেন লক্ষ লক্ষ নাগরিক কষ্ট না পায়, চট্রগ্রামের বিশাল প্রবাসী জনগোষ্ঠী ও তাদের পরিবারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, গণহত্যা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্টিকে নিরাপত্তার সাথে আরাকানে ফিরে পাঠাবার ব্যবস্থা করা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল সহ মাদকের কবল থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করা।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী/বাণিজ্য নগরীকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে- যার অংশ হিসেবে বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে। পাহাড়, সবুজ সমতল আর সমুদ্রকে ঘিরে আমাদের বিশাল পর্যটন শিল্প গড়ে তুলে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব। সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ রক্ষা করতে গিয়ে সেখানকার হাজার হাজার স্থানীয় জনগণ ও তাদের অর্থনীতিকে পথে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সমুদ্রকে ঘিরে যে বিশাল আধুনিক মৎস্য শিল্প গড়ে তুলবার সুযোগ ছিল তা আমরা দেখতে পাচ্ছি না, জাহাজ ভাঙ্গা ও নতুন জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে, অথচ সেটার মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হওয়া সম্ভব। দেশ ও জনগণের অধিকার সমুন্নত রেখেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়াটাই হচ্ছে এবি পার্টির রাজনীতি।
এবি পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মহানগর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম মহানগর যুব পার্টি আহ্বায়ক আব্দুর রহমান মনিরের সঞ্চালনায় জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন- এবি পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল মো. দিদারুল আলম (অব.) ও লে. কর্নেল হেলাল উদ্দীন (অব.), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, এফসিএ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ আবুল কাশেম, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আশরাফ মাহমুদ রুমেল, সহ- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম বাদল, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সমন্বয়ক ন. ম. জিয়াউল হক চৌধুরী, এবি যুব পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব হাদিউজ্জামান খোকন, চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জায়েদ হাসান চৌধুরী ও শহীদুল ইসলাম (বাবুল), কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আতাউর রহমান নুর, বোরহান উদ্দিন ও মোরশেদ চৌধুরী প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/১৬মে/জেবি/এমআর)

মন্তব্য করুন