যুদ্ধের শিকার দেশকে সাহায্যে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ অনন্য নজির: জয়

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে বিশ্ব বিবেককে নাড়িয়ে দেওয়া ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ যুদ্ধের শিকার দেশকে সাহায্য করে নজির স্থাপন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের বর্বরতার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে আয়োজন করা হয় ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। এই আয়োজনে যুক্ত ছিলেন জর্জ হ্যারিসন, বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন আর পন্ডিত রবিশঙ্করের মতো বিশ্বখ্যাত সঙ্গীতকাররা।
সজীব ওয়াজেদ জয় তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এর স্মৃতিচারণা করেন। ওই পোস্টে তিনি স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে নিউইয়র্কের ঐতিহাসিক ম্যাডিসন স্কয়ারে অনুষ্ঠিত ‘গোল্ডেন জুবিলি বাংলাদেশ কনসার্ট’ বিষয়েও কথা বলেন।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুক স্টাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো:
‘১৯৭১ সাল, হাজার হাজার মাইল সাগর দূরত্বের একটি দেশ তার লাল-সবুজ পতাকা রক্ষায় রক্ত ঝরাচ্ছিল। আর বন্ধুর মুখে সেই দেশটির গল্প গভীরভাবে নাড়া দিল বিশ্ব সঙ্গীতের ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় একজন শিল্পীকে।
পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গুলিতে নিরস্ত্র মানুষ হত্যা, অসংখ্য নারীদের ধর্ষণ আর অনাহারে শিশুদের মৃত্যু তাকে মর্মাহত করলো।
ঠিক তখনই কিছু কাব্যিক শব্দ একটি অবিস্মরণীয় গানের লিরিক আকারে ফুটে উঠল:
“চোখ ভরা বিষাদ নিয়ে
আমার বন্ধু আমার কাছে এসেছিল,
তার দেশ শেষ হয়ে যাবার আগে
পাশে দাঁড়ানো দরকার বলে আমাকে জানিয়েছিল।”
মনে যা এসেছিল, শুধু তাই দিয়ে গানটি রচনা করলেন না বিটলস-এর তারকা জর্জ হ্যারিসন। বরং ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস একটি গণহত্যার শিকার হওয়া বাংলাদেশের জনগণকে সাহায্য করার চিন্তায় মগ্ন তখন। ছুটে গেলেন বব ডিলান এবং এরিক ক্ল্যাপটনের মতো কিংবদন্তীদের কাছে। তারাও বাংলাদেশকে সমর্থন জোগাতে সম্মত হন। আর বাকিটাতো ইতিহাস। ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এর মাধ্যদমে তারা যুদ্ধের শিকার দেশকে সাহায্য করার নজির স্থাপন করেছে।
যখনই আমি এটি ইউটিউবে দেখি, এটি আমাকে একটি সোনালী মুহুর্তে ফিরিয়ে নিয়ে যায় - জর্জ হ্যারিসন বাংলাদেশ গানটি গাইছেন, কানে ভাসছে বব ডিলানের ‘হাউ মেনি রোডস অ্যা ম্যান মাস্ট ওয়াক ডাউন (কতটা পথ পেরুলে বলো পথিক হওয়া যায়)’, ঝড়ের মতো তার সেতারে সুর তুলছেন পন্ডিত রবিশঙ্কর। একই মঞ্চে সকল তারাদের মেলা!
গত সপ্তাহে আমি সেই মুহূর্তটিকে পুনরুজ্জীবিত করেছি, বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীতে আরেকটি কনসার্টের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি তাদের সেই মানবতার জন্য সঙ্গীতের আয়োজনের প্রতি। বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রকস্টার ও গানের সম্রাটরা যেমনটি স্বপ্ন দেখেছিলেন, বাংলাদেশের স্বপ্ন সত্যি হল। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ বিধ্বস্ত সেই দেশটি এখন টেকসই অগ্রগতি এবং উন্নয়নের একটি প্রতিকৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
স্থাপত্যের দৃষ্টিনন্দন কর্মযজ্ঞ পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে আধুনিক প্রযুক্তির বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট—এক অণুপ্রেরণার ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ।
তবুও সব সাফল্যের গল্পের বিপক্ষে কতিপয় মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে বিরোধিতা করবেই। যুদ্ধাপরাধীদের প্রেতাত্মারা যাতে অন্ধকার অধ্যায় ফিরিয়ে আনতে না পারে সেজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ধর্ম ব্যবসায়ীদের প্রতি আমাদের জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। এই সুবর্ণ জয়ন্তীতে সোনার বাংলার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতিতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আসুন হ্যারিসনের বাংলাদেশ গানটি আরও একবার গাই এবং বিশ্ব আবার শুনুক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়াই হল এবারের সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমাদের প্রতিশ্রুতি।’
(ঢাকাটাইমস/১২মে/এমএইচ/ডিএম)

মন্তব্য করুন