তালাক দেওয়ায় প্রতিশোধ নিতেই শিশু সামিউল হত্যাকাণ্ড!

স্ত্রী তালাক দেয়ায় প্রতিশোধ নিতেই বগুড়ার মাদ্রাসা ছাত্র শিশু সামিউল ইসলাম সাব্বিরকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। হত্যার সঙ্গে জড়িত নিহত সামিউলের সৎ বাবা ফজলুল হক ও তার সহযোগী অনিতা রানীকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৭ মে) শাজাহানপুর থানার মানিকদীপা কমলা চাপড় গ্রামের একটি লাউ ক্ষেত থেকে সামিউল ইসলাম সাব্বিরের (১০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে লাশটি অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করলেও পরে পুলিশ জানতে পারে উদ্ধারকৃত লাশটি একই উপজেলার সাজাপুর পুর্ব দক্ষিণপাড়া তালিমুল কোরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্র। এরপর নিহতের মা সাজাপুর গ্রামের মৃত তালেব আলীর মেয়ে সালেহা বেগম তার সন্তানকে শনাক্ত করেন।
পুলিশ সুপার বলেন, লাশ শনাক্তের পর সালেহা বেগম পুলিশকে জানান, ১২ বছর আগে মাঝিড়া কাগজিপাড়া গ্রামের মৃত মনছুর আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্ত তার স্বামী মাদকসেবী হওয়ায় তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। যে কারণে প্রায় দেড়মাস আগে প্রথম স্বামী জাহাঙ্গীর আলমকে তালাক দিয়ে ১০ বছরের ছেলে সামিউলকে নিয়েই দিন মজুর ফজলুল হককে বিয়ে করেন সালেহা। কিন্তু ফজলুল হক শিশুটিকে মেনে নেননি৷ তিনি সামিউলকে মারধর করে না খাইয়ে রাখতেন। আর সালেহাকে বলতেন শিশুটিকে নানী অথবা খালার কাছে রেখে আসতে। এক পর্যায়ে সালেহা চলতি মাসের ১১ তারিখে ফজলুল হককেই তালাক দিয়ে ছেলেকে নিয়ে বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। গত ১০ মে ছেলেকে সাজাপুর পূর্ব দক্ষিণ পাড়ায় তালিমুল হাফিজিয়া মাদ্রাসায় রেখে আসেন।
এদিকে, ফজলুল হক গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশকে জানায়, তালাক দেয়ায় কারণে সাহেলার ওপর ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। সালেহার সন্তানের কারণেই তাকে তালাক দেয়ায় ফজলুল হক সালেহার সন্তানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সেই অনুয়ায়ী সোমবার (১৬ মে) বিকালে ফজলুল হক মাদ্রাসায় গিয়ে সাব্বিরকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। এ সময় মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষক আবু মুছা জানিয়ে দেন মায়ের অনুমতি ছাড়া সাব্বিরকে তার কাছে দেয়া যাবে না। এসময় ফজলুল হক গ্রেপ্তারকৃত অনিতা রানীকে সাব্বিরের মা সাজিয়ে ফোন করান। অনিতা রানী ফোনে সালেহা সেজে তার ছেলে সাব্বিরকে ফজলুল হকের কাছে দেয়ার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষককে অনুরোধ করেন। একারণে সাব্বিরকে ফজলুল হকের সঙ্গে ছেড়ে দেয়। ফজলুল হক সাব্বিরকে সঙ্গে নিয়ে খরনা ইউনিয়নের মানিকদীপা কলমা চাপড় গ্রামের মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে একটি লাউ ক্ষেতে রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর বাঁশের খুঁটির সাথে বেঁধে রেখে চলে যায়।
পুলিশ সুপার বলেন, মঙ্গলবার সকালে লাশ উদ্ধারের পর ডিবি ও থানা পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামে। পুলিশ পরিচয় শনাক্তের পর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিকেলের মধ্যেই ফজলুল হক ও তার সহযোগী অনিতা রানীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার দুজনকে দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে তাদের। তাদের ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হবে।
(ঢাকাটাইমস/১৮মে/এআর)

মন্তব্য করুন