২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব অর্থনীতি সমিতির

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২২ মে ২০২২, ১৭:১৫| আপডেট : ২২ মে ২০২২, ১৭:২০
অ- অ+

আগামী দশ বছরের মধ্যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে একটি আলোকিত-শক্তিশালী-টেকসই মধ্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে রূপান্তর করতে জনকল্যানমূখী বাজেট চায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। তারা আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার একটি বিকল্প বাজেট প্রস্তাব দিয়েছে।

রবিবার বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২২-২৩: একটি জনগণতান্ত্রিকবাজেট প্রস্তাব’ তুলে ধরেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত।

অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাবিত বাজেটের পরিমান ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থ বছরের বাজেটের তুলনায় ৩.৪ শতাংশ বেশি। তাদের এই বিকল্প বাজেটকে সম্প্রসারণশীল বাজেট বলছেন অধ্যাপক বারাকাত।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘সরকারের বাজেট শুরুই হয় টাকা-পয়সাকে মূল লক্ষ্যবস্তু ধরে নিয়ে। আমরা মনে করি সমাজ নির্মাণে এই পদ্ধতির শুরুটাই ভ্রান্ত। কারণ টাকা-পয়সা কখনো মূল লক্ষ্য হতে পারে না। লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যম হতে পারে মাত্র।’

‘আমাদের বাজেট প্রণয়নের কর্মকাণ্ড শুরু হচ্ছে শোভন জীবন নির্মাণে দেশের মানুষের জন্য কী কী প্রয়োজন তা দিয়ে। এর মধ্যে আছে, মানুষের সুস্বাস্থ্য, সুস্থ দীর্ঘায়ু। আমাদের দেশে উন্নয়নের কথা বললে বলা হয়, ৭১ বছর আয়ু। আমরা ৭১ বছর আয়ু গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। এক দিকে জনগণের চাহিদা, অন্য দিকে টাকা-পয়সা। আমরা বাজেট ব্যালেন্সের পক্ষে নই। আমরা অর্থনীতি ব্যালেন্সেরও পক্ষে নই। আমরা সোশ্যাল ব্যালেন্সের পক্ষে।’

অর্থনীতি সমিতি বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনায় ৩৩৮টি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— বৈষম্য-অসমতা-দারিদ্র্য দূর করতে আগামী অন্তত ৫ বছর সমাজ থেকে আয়, সম্পদ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বৈষম্য ক্রমাগত হ্রাস করে এক সময় নির্মূল করার লক্ষ্যে যেতে হবে। সেই সাথে বাজেটে আয় ও ব্যয়ের মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন হতে হবে। বাজেটে অর্থায়নের উৎস নির্ধারণে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, বিত্তহীন, প্রান্তিক, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্য মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর কোনো ধরনের কর দাসত্ব আরোপ করা যাবে না।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বাজেট প্রস্তাবনার পর্যালোচনায় দেখা যায়, দারিদ্র্য নিরসনের পাশাপাশি তাদের বিকল্প জনগণতান্ত্রিক বাজেটের মূল লক্ষ্য-অভীষ্টসমূহের মধ্যে আছে—

(১) আছে দেশে বৈষম্য-অসমতা-বহুমুখী দারিদ্র্য সম্ভাব্য-সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা।

(২) পরজীবী-লুটেরা ধনীক শ্রেণির সম্পদের যৌক্তিক অংশ দরিদ্র-প্রান্তিক-নিম্নবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের কাছে প্রবাহিত করা

(৩) দেশজ অর্থনীতিকে উন্নয়নকৌশলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া, দেশজ অর্থনীতির মধ্যে কৃষিকে—কৃষিভিত্তিক প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প এবং কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কার—সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া

(৪) মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক, উদ্ভাবনী শক্তি সঞ্চারিত আলোকিত করার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা—যেখানে মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন

(৫) নিরাপত্তা-সুরক্ষা—সবই হবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং

(৬) মানুষের জন্য শোভন কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।

অর্থনীতি সমিতির বাজেটের সাথে চলতি অর্থ বছরের বাজেটের তুলনা করলে দেখা যায়, তাদের প্রস্তাবিত বাজেট ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থ বছরের সরকারের পরিচালন ব্যয় যেখানে ছিলো ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা সেখানে অর্থনীতি সমিতির পরিচালন ব্যয় ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা।

আবার চলতি অর্থ বছরের সরকারের উন্নয়ন ব্যয় ছিলো ২ লাখ ৩৭ হাজার ০৭৮ কোটি টাকা সমিতি সেখানে ব্যয় নির্ধারণ করেছে ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের সরকারের মোট ঘাটতি যেখানে ২ লাখ ১১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা সেখানে সমিতির এত বিশাল বাজেটে ঘাটতি দেখানো হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী কর্তৃক পেশকৃত ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মোট রাজস্ব ধরা হয়েছিল ৩ লক্ষ ৯২ হাজার ৪৯ কোটি টাকা। আর সমিতির আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বিকল্প বাজেটে ওই আয় ৪.৭৬ গুণ বৃদ্ধি করে ১৮ লক্ষ ৭০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা প্রস্তাব করেছে।

এজন্য অর্থনীতি সমিতি কিছু নতুন উৎস উল্লেখ করেছে। সেগুলি হলো: ১. কালোটাকা উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি; ২. অর্থ পাচার উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি; ৩. সম্পদ কর; ৪. অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর (অনলাইন ব্যবসা-বাণিজ্যসহ); ৫. বিলাসী দ্রব্য/পণ্যের ওপর কর; ৬. সংসদ সদস্যসহ অন্যদের ওপর গাড়ির শুল্ক মওকুফ বাতিল-উদ্ভূত আহরণ; ৭. বিদেশি নাগরিকদের ওপর কর; ৮. সেবা থেকে প্রাপ্ত কর; ৯. বিমান পরিবহন ও ভ্রমণ কর; ১০. রয়্যালটি ও সম্পদ থেকে আয়; ১১. প্রতিরক্ষাবাবদ প্রাপ্তি; ১২. রেলপথ; ১৩. ডাক বিভাগ; ১৪. সরকারের সম্পদ বিক্রয়; ১৫. সেচবাবদ প্রাপ্তি; ১৬. তার ও টেলিফোন বোর্ড; ১৭. টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন; ১৮. এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন; ১৯. ইনস্যুরেন্স রেগুলেটরি কমিশন; ২০. সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন; ২১. বিআইডাব্লিউটিএ; ২২. পৌর হোল্ডিং কর; ২৩. ডিজি থেলথ: বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়গনস্টিক সেন্টার অনুমতি ও নবায়ন ফিস; ২৪. ডিজি ড্রাগস: ঔষুধ প্রস্তুতকারী কোং লাইসেন্স এবং নবায়ন ফিস; ২৫. বিউটিপার্লার সেবালব্ধ কর; ২৬. আবাসিক হোটেল/গেস্ট হাউস ক্যাপাসিটি কর এবং ২৭. বিদেশি পরামর্শ ফিস।

চলমান অর্থবছরে ‘কর ব্যতীত প্রাপ্তি’ উপখাতে সরকারের প্রস্তাব ৪৬ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। তা ১১.৫ গুণ বৃদ্ধি করে সমিতি প্রস্তাব করেছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩১০ কোটি টাকা।

তাদের প্রস্তাবনা হলো: লভ্যাংশ ও মুনাফা খাতে এখনকার (২০২১- ২২ অর্থবছরের) ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা থেকে ১৪.৬ গুণ বৃদ্ধি করে ৩০ হাজার ২০০ কোটি টাকা জরিমানা, দণ্ড ও বাজেয়াপ্তকরণ উপখাতে ৪৬৩ কোটি টাকা থেকে ১৭৩ গুণ বৃদ্ধি করে ৮০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা; কর ব্যতীত অন্যান্য রাজস্ব প্রাপ্তিতে ৭ হাজার ১১২ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

সমিতি বলছে, মাত্র ৫টি উৎস থেকেই ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৬০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে পারে সরকার, যা মোট আয়ের ৩১.৬ শতাংশ। আর এই খাতগুলো হলো: ১. সম্পদ কর (২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা), (২) অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর (৭৫ হাজার কোটি টাকা), (৩) অর্থ পাচার রোধ থেকে প্রাপ্তি ৭৯ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা, (৪) কালোটাকা উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ২২৮ কোটি টাকা, এবং (৫) বিলাসী দ্রব্য/ পণ্যের ওপর কর (আমদানি শুল্কের আওতায়) থেকে প্রাপ্তি ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা।

(ঢাকাটাইমস/২২মে/এস/ডিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
৫ অতিরিক্ত ডিআইজিসহ ১৬ পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি
ফরিদা পারভীনের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা মির্জা ফখরুলের 
ফুটবলার ঋতুপর্ণার ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের পাশে তারেক রহমান
ত্রিপুরায় রেড অ্যালার্ট, কুমিল্লায় আতঙ্কে বাড়ি ছাড়ছে গোমতীপারের মানুষ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা