ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বেতন নিয়ে নয়ছয়ের অভিযোগ ৫৩ কর্মচারীর

২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালের ৫৩ জন কর্মচারী আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে কাজ করেন। মাস শেষ হলেও বেতনের টাকা পাচ্ছেন না তারা। কিছু বলতে গেলেই চাকরিচ্যুতির হুমকি দেন হাসপাতালের ঠিকাদাররা।
ঠিকাদাররা কর্মচারীদের হুমকি দিয়ে বলেন, মানুষের অভাব নাই, আরও কম টাকায় চাকরি করার মানুষও আছে।
তবু পেটের দায়ে, স্বজনদের কথা চিন্তা করে কাজ করেন এই কর্মচারীরা।
এসব খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী মানুষগুলোর অভিযোগ, বেতনের সিংহভাগই চলে যাচ্ছে ঠিকাদারের পকেটে। বঞ্চিত হচ্ছে শ্রমজীবীরা।
এদের কেউ নৈশ প্রহরী, কেউ টয়লেট পরিষ্কার করেন, কেউবা আবার হাসপাতালে ঝাড়ু দেন। হাসপাতালের প্রহরী থেকে শুরু করে লাশ ঘর পর্যন্ত পুরো আঙ্গিনাকে পরিপাটি করে রাখার দায়িত্ব তাদের।
জানা গেছে, সরকার থেকে ঠিকাদারের কাছে তাদের বেতন আসে ২১ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু তারা পান মাত্র ৬ হাজার টাকা। বাকি টাকা যায় ঠিকাদারের পকেটে। ঠিকাদার মাস শেষে চেকে সই করিয়ে বেতনের টাকা নিয়ে সেখান থেকে মাত্র ছয় হাজার টাকা দেন।
সরস্বতী দাস নামে এক নারী বলেন, লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে বাথরুম পরিষ্কার করি, মানুষের ময়লা, প্রস্রাব-পায়খানা পরিষ্কার করি, মাস শেষে পরিশ্রমের টাকাটাও ঠিকমতো পাই না।
লাইলী নামে এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলেন, বেতনের দুই ভাগই চলে যায় ঠিকাদারের পকেটে। দুই ঈদে দুটো বোনাস আসে তার কানা-কড়িও পাই না। এ বিষয়ে তারা মৌখিক অভিযোগ ও মানববন্ধন করেও কোন ফল পাননি।
জাকির হোসেন নামে এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আমাদের নামে। টাকা তোলেন আরেকজন। এখন ৬ হাজার টাকা পেলেও অনেক বছর বিনা বেতনেই কাজ করতে হয়েছে। মানুষ খুশি হয়ে দু-চার পয়সা দিলে তা দিয়েই চলতে হয়।
জোসনা নামের আরেক কর্মচারী বলেন, আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্ট করি, আর টাকা যায় আরেক জনের পেটে।
ঠিকাদার জানে আলম বেতন কম দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তিনি সব নিয়ম মেনেই বেতন দিচ্ছেন। তার সব ডকুমেন্টসও আছে। সরকারের কাছ থেকে চলতি বছর টাকা এখনও না পেলেও তিনি নিজের কাছ থেকে কর্মচারীদের বেতন চালিয়ে আসছেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ইকবাল হোসেন বলেন, তাদের বেতনের টাকা যদি হাসপাতালে অ্যাকাউন্টে সরাসরি আসে সেক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী জানান, টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার তাদের বেতন পরিশোধের কাজটি করেন। তার কাছে যে ডকুমেন্টস আসে তাতে দেখা যাচ্ছে ঠিকাদার কর্মচারীদের ন্যায্য বেতনই দিচ্ছেন। বেতনের প্রক্রিয়ায় কর্মচারীদের স্বাক্ষরও আছে।
কর্মচারীদের অভিযোগের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। একটি সম্ভাব্য বাজেটও পাঠানো হয়েছে। কর্মচারীদের বেতন যদি সরাসরি হাসপাতালের অ্যাকাউন্টে আসে তাহলে অন্যদের মতো তাদেরও ন্যায্য বেতন দেওয়া হবে। বর্তমানে বেতন প্রক্রিয়ায় হাসপাতালের কিছু করার নেই, যা করার ঠিকাদারের দায়িত্ব।
(ঢাকাটাইমস/৩০জুন/এআর)

মন্তব্য করুন