টাঙ্গাইলে নিজ গ্রামে চিরশয্যায় এসপি লালন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০২২, ২২:২৩

সদ্য প্রয়াত ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি দেওয়ান লালন আহমেদকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে তার গ্রামের বাড়ি ছাঁওয়ালি গ্রামে দাফন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয় বলে ঢাকাটাইমসকে জানান টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার।

তিনি বলেন, ঢাকা থেকে মরদেহ আনার পরে তার গ্রামের বাড়িতে একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর তাকে দাফন করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লালনের মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

বাদ আসর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের এসআই শিরু মিয়া মিলনায়তনে দেওয়ান লালনের জানাজা হয়। পরে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে নেয়া হয়।

তার জানাজায় আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ ছাড়াও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পুলিশপ্রধান এসময় মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

পুলিশের এই কর্মকর্তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পুলিশপ্রধান ড. বেনজীর আহমেদ। শোক বার্তায় আইজিপি বলেন, দেওয়ান লালন আহমেদ একজন প্রতিভাবান কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর অকাল মৃত্যুতে আমরা একজন দক্ষ কর্মকর্তাকে হারালাম। এসময় আইজিপি মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।

দেওয়ান লালন আহমেদ ২৪ তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে ২০০৫ সালের সহকারী পুলিশ সুপার-এএসপি পদে পুলিশে যোগ দেন। মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। গত ৬ জুন তিনি ট্যুরিস্ট পুলিশ সদরদপ্তরে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়ার দায়িত্ব পান। এর আগে তিনি খুলনা ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি ছিলেন।

চাকরির পাশাপাশি পুলিশের এই কর্মকর্তা গীতিকার ও লেখক হিসেবেও বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। করোনা মহামারির সময় পুলিশ সদস্যদের মনোবল বাড়াতে দেওয়ান লালনের ‘দুঃসময়ের হাল ধরা নাবিক মানবিক আর নির্ভীক-বাংলাদেশ পুলিশ’ শিরোনামের গানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইউটিউবে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। গানটিতে সুর ও কণ্ঠ দেন শিল্পী অটামনাল মুন।

দেওয়ান লালন আহমেদের পাঁচ শতাধিকের বেশি গান রয়েছে। সিনেমা, নাটক, সমসাময়িক বিষয়, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, মা-বাবা, প্রেম-বিরহ নিয়ে তার গান উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া তিনি মাটি মানুষের চিরায়ত বোধের লোকগান, লালন ফকিরের মানুষতত্ত্ব নিয়েও গান লিখেছেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তার বাবা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার কাছ থেকেই দেশপ্রেমের আদর্শ ছোটবেলা থেকে বুকে ধারণ করেছেন। স্কুলজীবনে শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা ছিল লালন আহমেদের। তারপর লেখালেখির প্রতি আগ্রহ শুরু। তার পাঁচটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

২০১৬ সালে ‘বাবার চোখে মুক্তিযুদ্ধ’ গ্রন্থ দিয়ে লালনের প্রথম বই প্রকাশ। বইটি পাঠকের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। মুক্তিযোদ্ধা বাবার কাছ থেকে শোনা অভিজ্য বইটিতে যেমন ফুটে উঠেছিল, তেমনি ফুটে উঠেছিল বাবার প্রতি সন্তানের ব্যাকুল ভালোবাসা আর বাবার শূন্যতার হাহাকার।

‘পুলিশের খেরোখাতা’ নামে একটি গ্রন্থে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশের আত্মিক মেলবন্ধন তুলে ধরেছিলেন পুলিশ সুপার লালন আহমেদ। বইটি ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়। প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসকদের পরাধীনতার কবলে বেনিয়ারা নিজেদের স্বার্থে পুলিশকে কীভাবে জনগণের বিরুদ্ধে নানাভাবে ব্যবহার করেছে, তা-ই বইটিতে তুলে ধরেন তিনি।

২০১৮ সালে শিশুতোষ ছড়া নিয়ে ‘বিতং বনে বনবনিয়ে’ প্রকাশিত হয়। ২০২০ সালে এক রঙ্গা এক ঘুড়ি প্রকাশনী থেকে দুটি বই প্রকাশিত হয় পুলিশের এই কর্মকর্তার। এর মধ্যে একটি পুলিশের ‘খেরোখাতা দ্বিতীয় পর্ব’ এবং অন্যটি ‘সাধুসঙ্গে ডুবাও অঙ্গ'।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ নিয়েও চারটি গান লিখেছেন দেওয়ান লালন। সেগুলো হলো- ‘বঙ্গবন্ধু, শতবর্ষের মহীরুহ, পাখিরা কাঁদে ও শেখ সাহেব’। এছাড়া ‘মায়ের নেই বিকল্প, মা’, ‘ওরে প্রাণপ্রিয় পুত্র’, ‘জারুল ফুল’, ‘প্রেম আছে বলে’, ‘যোজন যোজন দূরে’, ‘ভালো থেক’, ‘বুকের ভিতর আরেকটি বুক’- এমন অনেক গান বেশ জনপ্রিয়।

এছাড়া অটমনাল মুনের সঙ্গেও তিনি অনেকগুলো গান বানিয়েছেন। যেমন- ‘ভালো থেকো’, ‘প্রেম আছে বলে’, ‘যোজন যোজন দূরে’, ‘যাও মেঘ আকাশকে বলো’, ‘কষ্ট যন্ত্রণা বেদন’, ‘বুকের ভেতর আরেকটি বুক’, ‘স্বপ্ন সুখের ঝুলি’, ‘এমন আপন কেউ হবে না’ ইত্যাদি।

২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘পাসওয়ার্ড’ গানটির জন্য ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে’ আধুনিক গান ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে স্বীকৃতি পান দেওয়ান লালন।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/এসএস/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রশাসন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :