টিকটকে ডিভোর্স নিয়ে ভিডিও, স্ত্রীকে খুন করে আত্মহত্যা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১০ আগস্ট ২০২২, ১১:৩৬
অ- অ+

টিকটকে একজন পাকিস্তানি-আমেরিকান মহিলা নিজের ডিভোর্স নিয়ে ভিডিও আপলোড করার জন্য ১১০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করার পরে তার সাবেক স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে আমেরিকার শিকাগোতে। নির্যাতিতার নাম সানিয়া খান। সানিয়ার প্রাক্তন স্বামী ৩৬ বছর বয়সী রাহেল আহমেদ পরে বন্দুক দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

ক্যামেরার পেছনেই সানিয়া জীবন্ত হয়ে উঠতেন। আবেগ ও আনন্দ ধরে রাখতে ক্যামেরার সামনে মানুষকে স্বাভাবিক করে তোলার সহজাত প্রবৃত্তি তার ছিল। সানিয়া নিজের জীবনেও এমন আনন্দ চেয়েছিলেন। পাঁচ বছর আহমদের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার পর ২০২১ সালের জুন মাসে তাকে বিয়ে করে শিকাগোতে চলে আসেন। সম্প্রতি নিজের ডিভোর্স নিয়ে ভিডিও আপলোড করার জন্য খুন হন সানিয়া খান।

শিকাগো সান টাইমস-এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাহিল যখন সানিয়ার বাড়িতে উপস্থিত হন, তখন সানিয়ার বাড়ির কাছেই পুলিশ ছিল। হঠাৎই ঘরের ভিতর থেকে দু’টি গুলির শব্দ শুনতে পায় পুলিশ। প্রথমে সানিয়াকে লক্ষ্য করে গুলি চালান রাহিল। এর পর অন্য ঘরে গিয়ে একই পিস্তলের গুলিতে আত্মঘাতী হন তিনি নিজেও।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সানিয়া নিয়মিত টিকটক করার পাশাপাশি একজন পেশাদার চিত্রগ্রাহকও ছিলেন। গত বছরই রাহিল আহমদ নামে ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তবে তাদের বিয়ে এক বছরও টেকেনি। চলতি বছরের মে মাসে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর থেকেই সাবেক স্ত্রীর উপর ক্ষোভ জমতে থাকে রাহিলের। স্ত্রী কেতাদুরস্ত জামাকাপড় পরে, টিকটক করে— এ সবই না-পছন্দ ছিল রাহিলের।

এর আগেও রাহিল সানিয়াকে খুন করতে চেয়েছিলেন। একবার সানিয়ার উপর গুলিও চালিয়েছিলেন রাহিল। তবে সেবার তিনি সফল হননি। সাহিলের ধারণা ছিল, সানিয়া আধুনিকভাবে জীবনযাপন করার জন্যই তাদের বিচ্ছেদ হয়েছে।

ফক্স নিউজ জানায়, সাবেক স্ত্রী সানিয়া বিবাহ ও ডিভোর্স নিয়ে টিকটকে ভিডিও আপলোড করার পর রাহেল জর্জিয়া থেকে শিকাগোতে আসেন। স্থানীয় পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে ফক্স নিউজ আরও জানায়, সানিয়া খান ও রাহেল আহমেদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ।

বিবিসি জানায়, সানিয়া বিবাহিত জীবনের ট্রমা এবং বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে মহিলাদের পক্ষের কণ্ঠস্বর হিসেবে বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করতেন। তার মৃত্যুতে তার বন্ধুরা শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছেন।

একটি টিকটক ভিডিওতে সানিয়া বলেছিলেন, কীভাবে তিনি তার সম্প্রদায় ও পরিবার দ্বারা পুশব্যাকের শিকার হয়েছিলেন। নিজেকে তিনি তার সম্প্রদায়ের ‘কালো ভেড়া’ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। মৃত্যুকালে টিকটকে তার ২০ হাজার অনুসারী ছিল।

সানিয়ার মৃত্যুতে তার বন্ধুরা বিমূঢ় হয়ে পড়েছেন। তার অনলাইন ফলোয়ার ও দক্ষিণ এশীয় অপর নারীদের মধ্যে যারা মনে করেন পরিবারের খাতিরে অসুখী সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাপ অনুভব করছেন তারাও একই সুরে কথা বলছেন।

তার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধু ব্রিয়ানা উইলিয়ামস জানান, তিনি বলতেন ২৯-তম বছর হবে তার নিজের বছর এবং একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। তিনি খুব উদ্দীপিত ছিলেন। বন্ধুদের কাছে সানিয়া ছিলেন আনন্দের উৎস- নির্ভেজাল, ইতিবাচক এবং নিঃস্বার্থ।

সানিয়ার বন্ধুদের দাবি, আহমদের দীর্ঘদিন ধরে মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা ছিল। বিয়ের আগ পর্যন্ত এই দম্পতি মূলত দূরবর্তী সম্পর্কে ছিলেন। এটি হয়ত তাদের অসামঞ্জস্যতার বিষয়টিকে অস্পষ্ট করে ফেলে। গত বছর ডিসেম্বরে সমস্যা বড় হয়ে ওঠে। ওই সময় সানিয়া তাদের জানান, আহমদের মানসিক স্বাস্থ্য সংকট রয়েছে এবং তিনি নিরাপদবোধ করছেন না।

ভায়োলেন্স পলিসি সেন্টারের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি সপ্তাহে এক ডজন হত্যা-আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। এগুলোর দুই-তৃতীয়াংশের ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী জড়িত।

সঙ্গী দ্বারা নিপীড়নের শিকার নারীদের জন্য শীর্ষ ঝুঁকির বিষয় হিসেবে মানসিক অসুস্থতা ও সম্পর্কে জটিলতাকে প্রায়ই চিহ্নিত করা হয়। পারিবারিক নির্যাতন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্পর্ক ত্যাগ করতে গেলে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী দ্বারা হত্যার বেশি ঝুঁকিতে থাকেন নারীরা।

সানিয়া দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটিতে বিবাহবিচ্ছেদের সামাজিক কলঙ্কের কারণে নারীদের কী পরিমাণ ভুক্তভোগী হতে হয় তা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন। তার বাবা-মায়েরও বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে।

বন্ধুদের সহযোগিতায় সানিয়া বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন এবং বিচ্ছেদ চূড়ান্ত করতে আগস্টে শুনানির দিন ধার্য হয়েছিল। তার বন্ধুরা জানান, তিনি একটি নিষেধাজ্ঞার আদেশের জন্যও আবেদন করেছিলেন এবং বাসার তালাও বদলে ফেলেছিলেন। কমিউনিটিতে নিজেকে ‘কালো ভেড়া’ হিসেবে উল্লেখ করে টিকটকে নিজের কাহিনী বলতে শুরু করেন তিনি।

তার একটি পোস্টে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশীয় নারী হিসেবে বিবাহবিচ্ছেদের অর্থ হলো আপনি জীবনে ব্যর্থ। আরেকটি পোস্টে তিনি বলেছেন, আমার পরিবার আমাকে বলেছে যে, আমি যদি স্বামীকে ত্যাগ করি তাহলে শয়তান জিতবে, আমি পতিতাদের মতো পোশাক পরিধান করি এবং আমি যদি নিজের শহরে ফিরি তাহলে তারা আমাকে হত্যা করবে।

হত্যার সময় পর্যন্ত টিকটকে ২০ হাজারের বেশি মানুষ সানিয়া খানকে ফলো করছিলেন। বিসমা পারভেজ (৩৫) নামের এক পাকিস্তানি-আমেরিকান মুসলিম নারী তাদের একজন। তিনি বলেন, আমার মনে আছে প্রথম যে ভিডিওতে তাকে আমি দেখি। আমি তার প্রার্থনা করি। এই পরিস্থিতিতে থাকা নারীদের ধৈর্য ধরতে বলা হয়। কিন্তু যে সম্পর্কে নিপীড়ন রয়েছে সেখানে ধৈর্য জবাব হতে পারে না।

ইন্সটাগ্রামে সানিয়া নিজের প্রথম পাবলিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছিলেন। তিনি নিজের শখ হিসেবে ফটোগ্রাফি উল্লেখ করেছেন। জীবন সম্পর্কে সেখানে লিখেছেন, আমি মানুষকে নিজেকে এবং অপরকে ক্যামেরার সামনে ভালোবাসতে সহযোগিতা করি। বিয়ে, মাতৃত্ব, বেবি শাওয়ার ও জীবনের অন্যান্য মাইলফলক উদযাপনের ছবি তুলতেন।

(ঢাকাটাইমস/১০ আগস্ট/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
৫ অতিরিক্ত ডিআইজিসহ ১৬ পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি
ফরিদা পারভীনের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা মির্জা ফখরুলের 
ফুটবলার ঋতুপর্ণার ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের পাশে তারেক রহমান
ত্রিপুরায় রেড অ্যালার্ট, কুমিল্লায় আতঙ্কে বাড়ি ছাড়ছে গোমতীপারের মানুষ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা