১৭৮ টাকার কমে মিলছে না খোলা সয়াবিন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১০ আগস্ট ২০২২, ২২:২০| আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২২, ২২:৩৮
অ- অ+
ফাইল ছবি

সরকারের কোনো ঘোষণা না থাকলেও হঠাৎ বেড়ে গেছে সয়াবিন তেলের দাম।আজ রাজধানীতে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৭৮ টাকার কমে কিনতে পারেননি ক্রেতারা। অর্থাৎ দু-এক দিনের ব্যবধানে কেজিতে ১৩ টাকা বেশি দিয়ে খোলা সয়াবিন কিনতে হলো ভোক্তাদের। বোতলজাত সয়াবিন তেলও কিনতে হয়েছে লিটার প্রতি অন্তত ৫-১০ টাকা বেশি দাম দিয়ে।

আর ঢাকার বাইরের অবস্থা আরো শোচনীয়। কিছু কিছু দোকানে তেলই ছিল না বলে খবর পাওয়া গেছে। খোলা ও বোতলজাতসহ সব ধরনের সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে ২০ টাকা বাড়ানোর বিষয়ে ভোজ্য তেল শোধনকারী ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের খবরে বাজারে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির খবর ছড়িয়ে পড়েছে। বারবার চাহিদা জানানোর পরও বড় বড় কোম্পানির ডিলাররা বাজারে তেল দিচ্ছে না। ক্রেতারা দোকানে তেল নিতে এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন।

কেউ তেলের বাড়তি দাম নিলে ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির। ঢাকা টাইমসকে মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ বেশি দাম নিলে ক্রেতারা অভিযোগ করতে পারেন। তাদের অভিযোগ পেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ব্যবস্থা নেবে।’

দাম বেশি নেওয়ার লিখিত অভিযোগ ছাড়াও ভোক্তারা যদি মৌখিকভাবে জানায় তাহলেও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জানান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

ঢাকা টাইমসকে মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা সোচ্চার রয়েছি। দাম বেশি রাখার খবর পেলেই সেখানে অভিযান চালাব।’ কোনো বিক্রেতা দাম বেশি নিলে ভোক্তাদের নির্দিষ্ট দোকানের নাম উল্লেখ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে জানানোর অনুরোধ জানান তিনি।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, ‘জ¦ালানি তেলের মূল্য অত্যধিক বৃদ্ধির মতো সরকারের সিদ্ধান্তের কারণেই এসব ঘটছে। তেলসহ প্রায় সব পণ্যের দামই বাড়তি। মূল্যবৃদ্ধির এই খড়গ ভোক্তাদের ওপরে গিয়েই পড়েছে।’ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করে নিম্নআয়ের মানুষের দুর্দশা লাঘব করতে সরকারের প্রতি পরামর্শ রেখেছেন এই বিশেষজ্ঞ।

এদিকে সয়াবিন তেলসহ অন্যান্য পণ্যের উর্ধ্বমুখী দামের কথা স্বীকার করেছে বাজার তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

সংস্থাটি বলছে, সব ধরনের চাল, সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল, আটা, ময়দা (প্যাকেট), মুগ ডাল, রসুন (দেশী), শুকনা মরিচ (দেশি), শুকনা মরিচ (আমদানিকৃত), হলুদ (দেশি), আদা, জিরা, এলাচ, ইলিশ, গরু, মুরগী (ব্রয়লার), ফ্রেশ ও মার্কস দুধ, চিনি, ডিম (ফার্ম), লেখার কাগজ (সাদা), শসা ও বেগুনের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

টিসিবির তথ্য অনুয়ায়ী, গতকাল প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৫৫-১৬৫ টাকা, এক লিটারের বোতল ১৮৫-১৯০ টাকা, দুই লিটারের বোতল ৩৬৫-৩৭৫ টাকা, ৫ লিটারের বোতল ৮৮০-৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এক সপ্তাহ আগে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬২-১৬৬ টাকা, এক লিটারের বোতল ১৮০৫-১৮৮ টাকা, দুই লিটারের বোতল ৩৬০-৩৭৫ টাকা, ৫ লিটারের বোতল ৮৭০-৮৮০ টাকায় বিক্রি হয়।

যদিও টিসিবির এই দামে গতকাল বা গত সপ্তাহে ক্রেতারা সয়াবিন তেল কিনতে পারেননি। বাড়তি দাম দিয়েই কিনতে হয়েছে ভোক্তাদের।

খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা দুই-তিন দিন আগেও ১৬৫ টাকা। গতকাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সয়াবিন তেলের ৫ লিটারের বোতল ৯১০ টাকা, ৩ লিটারের বোতল ৩৫৫ টাকা, ২ লিটারের বোতল ৩৭০ টাকা এবং এক লিটারের বোতল ১৮৫ টাকায় কিনতে হয়েছে ক্রেতাদের।

টিসিবি থেকে পাওয়া তথ্য অনুয়ায়ী, গত এক বছরে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৩০.০৮ শতাংশ, এক লিটারের বোতল ২৯.৩১ শতাংশ, ২ লিটারের বোতল ২৯.৮২ শতাংশ, ৫ লিটারের বোতলে ৩১.৮৫ শতাংশ, খোলা পামওয়েল ১৩.৬৪ শতাংশ ও পাম অয়েল সুপারের দাম ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সয়াবিন তেলের লিটারে ২০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব

আমদানিকারক ও মিল মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত চার দফায় প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৬২ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এখন আবার লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়াতে গত ৩ আগস্ট বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে (বিটিটিসি) প্রস্তাব দেয় মিল মালিকদের এই সংগঠন।

এতে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, এক লিটারের বোতল ২০৫ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৯৬০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে সংগঠনটির যুক্তি হচ্ছে, টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ভোজ্যতেলের আমদানিমূল্য বেড়েছে। এ কারণে দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে বিটিটিসি।

এর আগে চলতি বছরের ৯ জুন সয়াবিন তেলের লিটারপ্রতি ৭ টাকা, ২৭ মে ৯ টাকা, ৫ মে ৩৮ টাকা এবং ৬ ফেব্রুয়ারি লিটারপ্রতি ৮ টাকা দাম বাড়ায় সরকার। আর ২১ জুলাই সয়াবিন তেলের লিটার প্রতি ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা দাম নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু কমতি দামে বাজারে তেল মিলে না বলে অভিযোগ আছে।

দেশে মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি ও পরিশোধন করে বাজারজাত করে। আবার কেউ কেউ সয়াবিন বীজ আমদানি করে দেশে সয়াবিন তেল উৎপাদন করে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০২০ সালে বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের টনপ্রতি দর ছিল গড়ে ৮৩৮ ডলার, যা গত মে মাসে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯৬৩ ডলারে ওঠে। এর পর থেকে দাম কমছে। জুলাই মাসে টনপ্রতি দর নেমেছে ১ হাজার ৫৩৩ ডলারে। গত ৪ আগস্ট সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল গড়ে ১ হাজার ৪০৬ দশমিক ৬৫ ডলারে বিক্রি হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হিসাব ধরে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে ট্যারিফ কমিশনের তৈরি করা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২৩ মের তুলনায় ৩১ জুলাই সয়াবিন তেলের দাম ৩১ শতাংশ কম ছিল।

(ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ফেনীতে রান্নাঘরে সাপের কামড়ে গৃহবধূর মৃত্যু
সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
মিটফোর্ড হত্যার বিচার দ্রুততম সময়ে হবে: আইন উপদেষ্টা
সিলেট বিভাগের ১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা