মজুরি ৩০০ টাকা না করলে মহাসড়কে অবস্থানের ঘোষণা চা-শ্রমিকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার
 | প্রকাশিত : ১২ আগস্ট ২০২২, ১১:১১

দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা না করলে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলমান কর্মবিরতির তৃতীয় দিনে এই ঘোষণা দেন নেতৃবৃন্দরা।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরী ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি শেষে এই ঘোষণা দেন। পাশাপাশি শুক্রবারও কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির উপদেষ্টা রামভজন কৈরি। তিনি জানান, শুক্রবারও সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত পূর্বের কর্মসূচি পালন করবে দেশের ৭৩টি ফাঁড়ি বাগানসহ মোট ২৪০ টি চা বাগানের শ্রমিকরা।

এদিকে শ্রীমঙ্গল বিভাগীয় শ্রমদপ্তরে বৃহস্পতিবার চা- শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা বসেও সমঝোতায় পৌঁছতে পারেননি কর্মকর্তারা। বিকাল ৫টায় বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপপরিচালক নাহিদুল ইসলাম চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েক নেতার সাথে মিটিংয়ে আন্দোলন ২৮ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিতের অনুরোধ করেন। কিন্তু চা-শ্রমিক নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেন।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির উপদেষ্টা রামভজন কৈরি ঢাকা টাইমসকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রবীণ এই চা-শ্রমিক নেতা বলেন, আমরা চাচ্ছি না চা বাগানগুলো অচল হয়ে যাক। তাই প্রতিকী কর্মসূচি পালন করছি। এই সময়ের মধ্যে মালিক পক্ষ ৩০০ টাকা মজুরির দাবি না মানলে শনিবার কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে বাংলাদেশ চা- শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে গত মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) থেকে এই আন্দোলন করছে।

উল্লেখ্য দেশের চা বাগানগুলোতে বর্তমানে শ্রমিকদের হাজিরা ১২০ টাকা।

এ বিষয়ে চা-শ্রমিক ইউনিয়েনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপদেষ্টা রামভজন কৈরি ঢাকা টাইমসকে বলেন, বর্তমান বাজার মূল্যে একজোড়া চা-শ্রমিক মাত্র ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে কিছুই করতে পারে না। লাখ লাখ চা শ্রমিক আজ খেয়ে না খেয়ে আছে। অথচ মালিকপক্ষ চা শ্রমিকদের দাবি মানছে না।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, আমরা গত ১৯ মাস থেকে আবেদন নিবেদন করে আসছি। কিন্তু মালিক পক্ষ সময় ক্ষেপণ করছে। যেকারণে কোন কিছুই হচ্ছে না। তারা মাত্র ১৪ টাকা বর্ধিত করার প্রস্তাব দিয়েছে। ১৪ টাকা বৃদ্ধি হলে একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি হবে ১৩৪ টাকা। এই ১৩৪ টাকা দিয়ে একজন শ্রমিকের জীবন কীভাবে চলে?

তিনি আরও বলেন, চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান মালিকদের চুক্তি অনুযায়ী প্রতি ২ বছর পর পর মজুরি বৃদ্ধি করার কথা থাকলেও অতিরিক্ত ১৯ মাস পরও মালিক পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। আগামী ৩ দিনের মধ্যে তাদের দাবি না মানা হলে দেশের সব বাগান একসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন এই শ্রমিক নেতা।

এদিকে মালিক পক্ষ বলছে একজন চা-শ্রমিক যে সুযোগ সুবিধা পায় দেশের প্রথম শ্রেণির একজন নাগরিক তা পায় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার লোয়াইউনি-হলিছড়া চা বাগানের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মাবুদ আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, একজন চা শ্রমিক তাদের পরিবারে যে সুযোগ সুবিধা পায় আমরা প্রথম শ্রেণির নাগরিক হয়েও তা পাই না।

কী কী সুবিধা পায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, একজন চা শ্রমিক ১২০ টাকা মজুরি পাওয়ার পাশাপাশি প্রথমত সারা জীবন বাসস্থান বিদ্যুৎ, পানি ও চিকিৎসা ফ্রি পেয়ে থাকে। সপ্তাহে নিজে ২ টাকা মূল্যে ৩ কি ৭০০ গ্রাম গম (রেশন), চা শ্রমিকের স্ত্রীর জন্য ২ কেজি ৪৫০ গ্রাম গম, প্রথম বাচ্চার জন্য ২ কেজি ৪৫০ গ্রাম গম এবং দ্বিতীয় বাচ্চার জন্য ১ কেজি ২২০ গ্রাম গম পেয়ে থাকে।

তিনি বলেন, একজন চা শ্রমিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে বা স্বেচ্ছায় অবসরে গেলে সপ্তাহে ১০০ টাকা এবং ২৫০ গ্রাম গম পেয়ে থাকে।

এছাড়া চা বাগানের জ্বালানি কাঠ, জমি চাষ করে ভোগ দখল করে থাকে।

(ঢাকাটাইমস/১২আগস্ট/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :