দায়িত্বহীন বক্তব্য নয়, বাজারে গিয়ে প্রমাণ করুন: মন্ত্রীদের বিশিষ্টজনেরা

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২২, ২৩:০৭ | প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট ২০২২, ২২:৩২

বৈশ্বিক সংকটের এই সময়ে দেশের মানুষ যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও তেল-গ্যাসের ঊর্ধ্বমূল্য, লোডশেডিংয়ের মতো বড় সমস্যার মুখোমুখি, তখন সরকারের দায়িত্বশীল পদে থেকে কারও কারও অযাচিত বক্তব্যকে দায়িত্বহীন ও নির্দয় হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন রাজনৈতিক ও ইতিহাসবিদরা।

তারা বলছেন, বিশ্বের আরও অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও একটা দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, একটা চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না। এই বাস্তবতা মাথায় রেখে সরকারের দায়িত্বশীলদের মন্তব্য করা উচিত।

তা না হলে তাদের বক্তব্য ‘নির্দয়’ ও দেশের মানুষের সমস্যাকে অস্বীকার করার শামিল হবে বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, তেল, গ্যাস ও নিত্যপণ্যের মূলবৃদ্ধির সত্যকে স্বীকার করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দিকে দায়িত্বশীলদের মনোযোগ দেওয়া উচিত।

তাদের (মন্ত্রীদের) আচরণ, বচন, বসন ও বিচরণ- এই চারটি মাত্রাই প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা যে বেহেশতে আছি সেই কথাটা আপনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বাজারে গিয়ে প্রমাণ করুন।
-ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন

‘বৈশ্বিক মন্দায় অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা বেহেশতে আছি’- পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের এমন একটি বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওপরের কথাগুলো বলেন বিশেষজ্ঞরা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই মন্তব্যকে প্রশ্নবিদ্ধ ও দায়িত্বহীন আখ্যা দিয়ে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তাদের (মন্ত্রীদের) আচরণ, বচন, বসন ও বিচরণ- এই চারটি মাত্রাই প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা যে বেহেশতে আছি সেই কথাটা আপনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বাজারে গিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করুন।’

গত শুক্রবার সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একটি পক্ষ থেকে প্যানিক ছড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশ নাকি শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। বৈশ্বিক মন্দায় অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা বেহেশতে আছি।’

মন্ত্রীদের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বেফাঁস মন্তব্যের বিষয় উল্লেখ করে অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তারা (মন্ত্রী ও এমপি) বিভিন্ন সময়ে যে কথা বলেন তাতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সতীর্থ বন্ধু, কিন্তু মন্ত্রী কথা বললেই তিনি ভয় পান বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আনোয়ার। বলেন, ‘এর আগেও তিনি একটি বেফাঁস মন্তব্য করে বলেছেন ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর। এসব বেফাঁস কথা আর মন্তব্য সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও করেন।’

‘একটা কথা আছে, ‘আপনি আচরি পরেরে শিখাও’। তার (ওবায়দুল কাদের) মন্তব্য নিয়েও আমরা মাঝেমধ্যে সমস্যায় পড়ি।’ বলেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

বৈশ্বিক সংকটে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যকে ‘নির্দয় বক্তব্য’ হিসেবে দেখছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। তিনি ড. মোমেনের মন্তব্যের বিষয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দেশে এখন সংকট চলছে, নানাবিধ সংকট আছে। সেই সংকট মাথায় রেখে মন্তব্য করা উচিত। এই রকম ‘নির্দয় বক্তব্য’ দেশের মানুষের সমস্যাকে অস্বীকার করে। তেল, গ্যাস ও নিত্যপণ্যের মূলবৃদ্ধির সত্যকে অস্বীকার করে।’

শুধু রাজনীতিবিদ নন, যারা দায়িত্বশীল পদে থাকেন তাদের মন্তব্য করার সময় দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বলেন, ‘যেসব মন্তব্যে মানুষ কষ্ট পায়, বিভ্রান্ত হয় এমন মন্তব্য না করা উচিত। একজন মন্ত্রী, একজন কূটনীতিক ও একজন রাজনীতিক হিসেবে তিনি যে মন্তব্য করবেন সেটা যেন একজন সাধারণ মানুষকে আহত না করে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সরকারের সাবেক আমলা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবু আলম মো. শহীদ খান।

দেশে এখন সংকট চলছে, নানাবিধ সংকটের মধ্যে এটা একরকম ‘নির্দয় বক্তব্য’ বলব। মন্ত্রী-এমপিদের মন্তব্য করার সময় দায়িত্বশলি হওয়া উচিত।
-জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল

ঢাকাটাইমসকে আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, ‘আমরা বেহেশতে আছি, তিনি কেন এটা বলেছেন তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আমরা কেমন আছি আমরা জানি। বাংলাদেশ কেমন আছে সবাই জানি আমরা।’

‘আমরা একটা দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, একটু চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।’ এ কথা উল্লেখ করে আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, কোভিডের পরে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে যে যুদ্ধ এবং সারা বিশ^ জুড়ে যেই ইনফ্লেশন (মুদ্রাস্ফীতি) তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এ কারণে সরকার সমস্যা উত্তরণে কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই সমস্যার কারণে অবিরাম বিদ্যুৎ দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এটাই বাস্তবতা।

মন্ত্রীদের এই ধরনের বক্তব্যের কোনো কারণ নেই জানিয়ে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘আমাদের লোডশেডিং করতে হচ্ছে। বৃষ্টি না থাকায় সেচের জন্য পাম্প ব্যবহার হচ্ছে। এদিকে তেল ও সারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকরা কষ্টে আছে। তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে সবকিছুর ওপর। এই যে অবস্থা, আমরা সবাই মিলে একটা দুর্বিষহ সময় পার করছি। আমরা বেহেশতে আছি এটা আমি মনে করি না।’

তবে নানা সংকটের মধ্যেই সাধারণ মানুষকে সংবাদপত্র বা টেলিভিশনের খবর না দেখে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে বলে সমালোচনায় পড়েছেন বিদুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সবকিছুর মূল বেড়ে যাচ্ছে। আমরা সবাই মিলে একটা দুর্বিষহ সময় পার করছি। আমরা বেহেশতে আছি- এই ধরনের মন্তব্য করার কোনো কারণ নেই।
-আবু আলম মো. শহীদ খান, সাবেক আমলা ও রাজনীতি বিশ্লেষক

একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে গিয়ে সরকারের এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মিডিয়াতে কে কী বলল, পত্রিকাতে কে কী লিখল আল্লাহর ওয়াস্তে এসব তথ্য নিতে যাবেন না। তথ্য নিবেন তামিম (জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম) ভাইয়ের কাছ থেকে। তিনি এক্সপার্ট।’

সাধারণ মানুষকে বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে তথ্য নেওয়ার বিষয়টি নিয়েও সমালোচনা করছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা মনে করেন, সাধারণ মানুষ দেশের খবর জানতে পত্রিকা ও টেলিভিশনেই ভরসা রাখেন। জনে জনে বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে তথ্য জানার সুযোগ নেই। পত্রিকা বা টেলিভিশন বিশেষজ্ঞদের তথ্য তুলে ধরে সাধারণ মানুষের কাছে।

(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :