স্মৃতিজড়িত এই বাড়ি থেকেই বাঙালি জাতি পেয়েছিল মুক্তির নির্দেশনা-স্বাধীনতার ঘোষণা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি। যে বাড়িকে কেন্দ্র করে সূত্রপাত হয়েছিল স্বাধিকার আন্দোলনের। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িটি সাক্ষী হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রতিটি ঘটনার। আর সে প্রতীক হচ্ছে সাহস, দৃঢ়তা ও বিদ্রোহের। স্মৃতিজড়িত বাড়িটি থেকেই বাঙালি জাতি পেয়েছিল মুক্তির নির্দেশনা ও স্বাধীনতার ঘোষণা। এখান থেকেই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে এনে দিয়েছিলেন স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখণ্ড ও লাল-সবুজের পতাকা। অথচ এক রাতের নির্মম হত্যাযজ্ঞে বাঙালির চেতনার বাতিঘর হিসেবে পরিচিত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সেই বাড়িটি এখন একটি জাতির শোকের জাদুঘর।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালির প্রাণের ও প্রেরণার উৎস বাড়িটিতে ঘাতকদের নির্মম বুলেটে সপরিবারে প্রাণ হারান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন শিশু রাসেলও রক্ষা পায়নি ঘাতকদের হাত থেকে। তারা জানত বঙ্গবন্ধুর পরিবারের একজন সদস্য বেঁচে থাকলে তাদের চক্রান্ত ভেস্তে যাবে। গেছেও। অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
ইতিহাসের সেই কালো অধ্যায়ের ৪৭ বছর কেটে গেছে। ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটি এখনও সাক্ষ্য দেয় ভয়ংকর সেই দিনটির। প্রতি বছর ১৫ আগস্ট আসে বাঙালির জীবনে জাতীয় শোক দিবস হয়ে। বিনম্র শ্রদ্ধায় বাংলাদেশের মানুষ স্মরণ করে তাদের জাতির পিতাকে।
বাঙালির ইতিহাসের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত পাওয়া বাড়িটি দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থীর ভিড় থাকে। বছরজুড়ে সকাল সন্ধ্যা থাকত মানুষের সবর উপস্থিতি। কিন্তু করোনা মহামারি শুরুর পর ২০১৯ সাল থেকে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এরপর থেকে বাড়িটিকে ঘিরে কমতে থাকে মানুষের আনাগোনা। তবে বাড়িটির বাইরের অংশে কমবেশি মানুষের চলাফেরা থাকলেও সম্পূর্ণভাবে বাড়িটির ভেতরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দর্শনার্থী না থাকায় বাড়িটিতে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা।
তবে জাতীয় শোকের দিন ১৫ আগস্ট লোকারণ্য হয়ে ওঠে বাড়িটি। শোকের এই মাসে স্মৃতিজড়িত বাড়িটি ঘিরে থাকে নানা আয়োজন। ১৫ আগস্ট সকাল থেকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন হাজারো মানুষ। বাড়ির বাইরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের হাজারো নেতাকর্মী। এবারের শোক দিবসেও সেখানে শ্রদ্ধা জানাবে স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেওয়া দেশের প্রাচীন দলটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শোকাবহ ১৫ আগস্ট আয়োজনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের স্মৃতিজড়িত সড়কটি। বাঁশ-কাঠ দিয়ে সামিয়ানা টানানো হয়েছে। আর নিরাপত্তায় মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। ১৯৬২ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, ১৯৭১-এর শুরুতে অসহযোগ আন্দোলনসহ নানা চড়াই-উৎরাইয়ের সাক্ষী বাড়িটিতে থেকেই আন্দোলনের পরিকল্পনা প্রণয়ন, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়, সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা শুনতেন বঙ্গবন্ধু।
আসলে বঙ্গবন্ধুর এই বাড়ির নম্বর ১০। বাড়িটি যে সড়কে, আগে এর নম্বর ছিল ৩২। সড়কের নামেই এখন বাড়িটির পরিচিতি। সড়কের এখন নতুন নম্বর ১১। তবে এই নম্বরটি বেশির ভাগ লোকই জানেন না। সবাই জানে ‘৩২ নম্বরই’।
বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ বাড়িটি যেন সবাই দেখতে পারে, সেজন্য বঙ্গবন্ধুর বাড়িটি এখন জাদুঘরে পরিণত হয়েছে। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে বাড়িটি হস্তান্তর করা হয়। শেখ হাসিনা বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন। ট্রাস্টই বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে। নাম দেওয়া হয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর।’
(ঢাকাটাইমস/১৫আগস্ট/কেআর/এলএ)

মন্তব্য করুন