ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি দেবে ডুমুর ফল

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৫৪

আদিকাল থেকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ডুমুরের পাতা, কাঁচা ও পাকা ফল, নির্যাস, বাকল, মূল প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ডুমুরের ফারসি ও ইউনানী নাম আনজির। বৈজ্ঞানিক নাম সিকেমোরে ফিগ। উচ্চমানের ভেষজ গুণসম্পন্ন ডুমুর ফল। ডুমুর প্রাকৃতিকভাবে ফ্যাট, কোলেস্টেরল বর্জিত খাদ্য! এছাড়া একাধিক পুষ্টিগুণ যথা ভিটামিন এ, সি সহ ক্যালশিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো জরুরি খনিজ রয়েছে ডুমুরে। ডুমুর নরম ও মিষ্টিজাতীয় ফল। ফলের আবরণ ভাগ খুবই পাতলা এবং এর অভ্যন্তরে অনেক ছোট ছোট বীজ রয়েছে। এর ফল শুকনো ও পাকা অবস্থায় ভক্ষণ করা যায়। উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে এ প্রজাতির গাছ জন্মে। কখনো কখনো জ্যাম হিসেবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়াও, স্ন্যাকস জাতীয় খাবারেও ডুমুরের প্রয়োগ হয়ে থাকে।

ডুমুরের আদি নিবাস মধ্যপ্রাচ্যে। মধ্যপ্রাচ্যে যে ডুমুর (আঞ্জির) পাওয়া যায় তার ফল বড় আকারের; এটি জনপ্রিয় ফল হিসেবে খাওয়া হয়। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হয়ে থাকে আফগানিস্তান থেকে পর্তুগাল পর্যন্ত। এর আরবি নাম ‘তীন’; হিন্দি, উর্দু, ফার্সি ও মারাঠি ভাষায় একে ‘আঞ্জির’ বলা হয়। এই গাছ ৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে এই ডুমুরের চাষ হচ্ছে। যা মিশরীয় ডুমুর নামে পরিচিত।

পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতিদিন তিনটি ডুমুর খেলে সে রোগমুক্ত থাকবে। ডুমুর হজমকারক, কোষ্ঠকাঠিন্য ও বায়ুনাশক এবং প্রতিবন্ধকতা অপসারক। ডুমুর নানাভাবে খাওয়া যায়। তাজা হোক বা শুকনো, পুষ্টিগুণ একপ্রকার অবিকৃত থাকে। তাই চাইলে রোদে ডুমুর শুকিয়ে নিয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় ডুমুর। এরপর মাঝেমধ্যেই খেতে পারেন ডুমুর। আবার তরকারিতেও দেওয়া যায় ডুমুর। ব্যবহার করা যায় সালাদেও।

প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরে প্রাপ্ত উপাদান : ক্যালরি-৩৫২, প্রোটিন-৬ গ্রাম, ফ্যাট-১.২ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৯ গ্রাম, ফাইবার-৭ গ্রাম, আঁশ-৩.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম-২২০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস-১৩৩ মিলিগ্রাম, আয়রন- ২.৭ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম-৯ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম-৮৬২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ-৩৪৭ মিলিগ্রাম, থায়ামিন (বি১)-০.২৫ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন (বি২) ০.২৫ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন-২ মিলিগ্রাম, সি-৯.২২ মিলিগ্রাম।

এবার দেখে নেওয়া যাক যেসব গুণের জন্য ডুমুর খাওয়া যেতে পারে—

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ রিসার্চ ইন ফার্মেসি অ্যান্ড বায়োসায়েন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডুমুরে হাইপোগ্লাইসেমিক উপাদান রয়েছে, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন যে ডুমুর পাতা ইনসুলিন প্রতিরোধের উন্নতিতেও উপকারী। ফলটি অবশ্যই মিষ্টি কিন্তু যদি সঠিক পরিমাণে খাওয়া হয় তবে সুগার রোগীদের জন্য বিশেষ উপকার করে। ডুমুরে ফাইবার বেশি থাকায় রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যে কোনো ডায়াবেটিকদের জন্য খুবই ভালো। ফাইবার ধীরে ধীরে হজম হয় এবং এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

রক্তচাপ কমায়

মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ করলে দেহে পটাশিয়ামের ভারসাম্যের অভাব দেখা যেতে। সেখান থেকে রক্তচাপের বৃদ্ধি ঘটার আশঙ্কা থাকে। ডুমুরে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। ফলে দেহে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্য আনতে পারে ডুমুর। এছাড়া ডুমুরে ফাইবারের মাত্রাও যথেষ্ট। তাই দেহের বাড়তি সোডিয়াম মলের মাধ্যমে বের করে দিতে সাহায্য করে ডুমুর।

ওজন কমাতে

ওজন কমাতে ডুমুর সাহায্য করতে পারে। শুকনো হোক বা তাজা, দু’টি প্রধান খাবারের মধ্যবর্তী পর্যায়ে ডুমুর খেয়ে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে দীর্ঘসময় পেট ভর্তি থাকার অনুভূতি পাবেন। ফলে বেশিমাত্রায় উলটোপালটা খাবার খাওয়া প্রতিরোধ করা যাবে। বিশেষ করে পেটে খালি থাকলে কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাদ্যের প্রতি আমরা আকর্ষণ অনুভব করি। এই ধরনের সমস্যা কমাতে পারে ডুমুর খাওয়ার অভ্যেস। ফ্যাট ফ্রি হওয়াও মাত্রাতিরিক্ত ক্যালোরিও যোগ হবে না শরীরে। তাই ধীরে ধীরে কমতে থাকবে ওজন।

চুলের বৃদ্ধিতে

ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই পুষ্টি উপাদানগুলি মাথার চুলের গোড়ায় রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয়, চুল পড়া রোধ করা যায়। হয়। ডুমুরে রয়েছে উপরিউক্ত সবকটি পুষ্টি উপাদান।

কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে

কিছু ডুমুর পানিতে ফুটিয়ে নিন এবং সেই ডুমুর পানি কিছুদিন ধরে পান করুন। এই পানি কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সহায়তা করে।

ব্রণ তাড়াতে

বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ডুমুরের ব্রণ প্রতিরোধের ক্ষমতা রয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে এই ফলের নির্যাসে ব্রণ প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে।

হজম ক্ষমতা বাড়ায়

আগেই বলা হয়েছে, ডুমুরে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। এছাড়া হজমতন্ত্রকেও শক্তিশালী করে। এখানেই শেষ নয়। ডুমুরে আছে প্রচুর পারিমাণে প্রোবায়োটিক বা উপকারী ব্যাকটেরিয়া। এর ফলে পরিপাকতন্ত্র অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে নিয়মিত ডুমর সেবনে।

শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতে

উপযুক্ত মাত্রায় আয়রন ও পটাশিয়াম থাকার কারণে, নিয়মিত ডুমুর খেলে তা স্ট্যামিনা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই যে সকল ব্যক্তি শারীরিকভাবে দুর্বল বোধ করেন ও এনার্জির অভাব আছে বলে মনে করেন, তাদের উচিত প্রতিদিন একগ্লাস দুধে একটি ডুমর ফুটিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করা।

অনিদ্রা দূর করতে

মেলাটোনিন-এর নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে ডুমুর। আমাদের মনে রাখতে হবে মেলাটোনিন একটি নিউরোট্রান্সমিটার বা হর্মোন যা আমাদের নিদ্রার চক্র স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য রাখে। এর ফলে অনিদ্রার মতো রোগ দূর করা সম্ভব হয়। এমনকী ব্রেনে সেরেটোনিন হর্মোনের নিঃসরণও বাড়ায় ডুমুর। সেরেটোনিন আমাদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, টেনশন করার প্রবণতা কমায়। মন-মেজাজ ইতিবাচক করে তোলে। অনিদ্রাও দূর করে।

মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশে কার্যকর

সন্তানসম্ভবা মহিলারা ডুমুর খেতে পারেন। কারণ ডুমুরে রয়েছে একাধিক পুষ্টিগুণ। ফলে ভ্রূণের বিকাশের জন্যও ফলটি উপকারী। এছাড়া মায়ের হাড়ের জোর বাড়াতেও কার্যকরী ফলটি। আবার আয়রন থাকায় রক্তাল্পতাও রোধ করে।

হিমোগ্লোবিন ঠিক রাখে

ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আয়রন কমে গেলে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যায়, যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। ডুমুর আমাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণকে স্বাভাবিক রাখে।

ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর

ডুমুর ফলের কষে প্রাপ্ত রাসায়নিক উপাদান ৬.০ এসাইল, বিটা-ডি-গ্লুকোসাইল-বিটা-সাইটোস্টেরল ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর। এক গবেষণায় পাওয়া যায় দীর্ঘদিন ডুমুর ফল খেলে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমে। এক তথ্যে পাওয়া যায় গড়ে ৮ বছর যাবৎ ডুমুর ফল খাওয়ায় ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি ৩৪% কমেছে।

(ঢাকাটাইমস/২ সেপ্টেম্বর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

ইফতার ও সাহরিতে বাহারি আয়োজন ধানমন্ডির দ্য ফরেস্ট লাউঞ্জে

বারবার ফোটানো চা খেলেই মারাত্মক বিপদ! বাঁচতে হলে জানুন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :