৪০তম বিসিএস নন ক্যাডারে আগের নিয়ম বহাল চান উত্তীর্ণরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ২২:১২

আগের নিয়ম বহাল চান ৪০তম বিসিএসে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ননক্যাডার তালিকায় অপেক্ষমান প্রাথীরা। বৃহস্পতিবার আগারগাঁওে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তু পিএসসি ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন ৪০তম বিসিএসে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা। তারা বলেন, চাকরি থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে নির্বাচিত প্রার্থীদের চাকরিতে যোগদানের সুপারিশসহ চার দফা দাবি জানানো হয়েছে। পরে পিএসসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মানববন্ধন স্থগিত করেন তারা। বিসিএসের নন ক্যাডারে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে ও অসংখ্য ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন।

মানববন্ধনে প্রার্থীরা জানান, সম্প্রতি কর্ম কমিশন বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার সুপারিশের নিয়মে পরিবর্তন এনেছে। এখন থেকে নন-ক্যাডার সুপারিশ করা হবে বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির তারিখ অনুযায়ী। অর্থাৎ কোনো বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ পর্যন্ত সরাসরি বিসিএস থেকে নিয়োগযোগ্য শূন্যপদ সংরক্ষণের মাধ্যমে সংখ্যা উল্লেখ করে আগেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পিএসসিতে পাঠানো হবে। পিএসসি ওই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে সেই নন-ক্যাডার পদগুলো উল্লেখ করে পরে উত্তীর্ণ নন-ক্যাডারদের সুপারিশ করবে। এর ফলে বর্তমানে নন-ক্যাডারদের জন্য চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শরীফুল ইসলাম বলেন, পিএসসি ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার নিয়োগের জন্য যদি বিজ্ঞপ্তির তারিখ অনুযায়ী বিভাজন করে, তাহলে উত্তীর্ণ ৮ হাজার ১৬৬ জন মেধাবী চাকরিপ্রার্থীর অধিকাংশ প্রার্থী সুপারিশ বঞ্চিত হবেন। কারণ ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। ওই তারিখ পর্যন্ত যত শূন্যপদ ছিল, তার প্রায় সব পদেই ৩৭তম বিসিএস ও ৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডারদের সুপারিশ করা হয়েছে। এমনকি ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগের দিন অর্থাৎ চলতি বছরের ২৯ মার্চ ৩৮তম বিসিএসের প্রার্থীদের ৩৩৭টি পদে সুপারিশ করা হয়েছে। এখন সেই হিসাবে উক্ত তারিখ পর্যন্ত শূন্যপদে সুপারিশ করতে চাইলে আমাদের জন্য পদ নেই বললেই চলে।

আরেক প্রার্থী নুরুন নাহার বলেন, করোনার কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪০তম বিসিএসের প্রার্থীরা। কয়েক দফায় ভাইভা স্থগিত এবং ৪০তম বিসিএসের মাঝে ৪২তম (বিশেষ) বিসিএসের নিয়োগ কার্যক্রম চলমান ছিল। এটি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বিসিএস। এই বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া চার বছর পেরিয়ে পাঁচ বছরে পোড়ায় আমাদের অধিকাংশ প্রার্থীর সরকারি চাকরির বয়স শেষ। তাছাড়া বর্তমানে বয়সে ৩৯ মাস ছাড় দেওয়া হলেও তা বিসিএসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিয়েছে। তাই, নন-ক্যাডার নিয়োগের ক্ষেত্রে তারিখভিত্তিক বিভাজন করলে আমরা সুপারিশ বঞ্চিত হব।

মাছুম বিল্লাহ নামে আরেক প্রার্থী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয় চলতি বছরের ৩০ মার্চ। প্রায় তিন মাস পর পিএসসি ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার পদের জন্য অনলাইন আবেদনপত্র আহ্বান করে। পিএসসি জুন মাসের ২৬ তারিখ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে সুপারিশ করার লক্ষ্যে শূন্য পদের অধিযাচন রিকুইজিশন চেয়ে পত্র ইস্যু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ৪০তম বিসিএস ফরমেটে পিএসসিতে নন-ক্যাডার শূন্যপদের অধিযাচন পাঠানো হয়।

নন ক্যাডারে উত্তীর্ণ মানববন্ধনে অংশ জাকিয়া আরজু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ২০১৮ সেপ্টেম্বর ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে দিন-রাত পরিশ্রম করেছি। সরকারি চাকরির বয়স শেষ হওয়ায় পরে আর এ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। সে কারণে এটি জীবনের শেষ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে নন ক্যাডার নিজের যোগ্যতা অর্জন করি।

তিনি বলেন, করোনার কারণে এ বিসিএসে নন-ক্যাডারের ফলাফল প্রকাশে সাত বছর বিলম্ব করা হয়। ৪০তম বিসিএসের ফলাফল প্রকাশের একদিন আগেও ৩৮তম বিসিএসে নন ক্যাডারের সর্বশেষ শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলাফল প্রকাশের পরে যতগুলো নন-ক্যাডারের শূন্য পদ থাকে সেখানে যোগ্য প্রার্থীরা নিয়োগ পেয়ে থাকেন। করোনার কারণে ৪০তম বিসিএসে দীর্ঘ সময় বিলম্বের পর পিএসসি এখন নতুন নিয়ম ঘোষণা করেছে। বর্তমানে সব শূন্য পদ চলমান বিসিএস পরীক্ষার নন ক্যাডারের প্রার্থীদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হবে। এ নতুন নিয়মে তাদের অনেকে চাকরি থেকে বঞ্চিত হবেন বলে দাবি করেন তিনি।

আন্দোলনকারী সোহাগ সিদ্দিকী নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমরা শুনেছি বর্তমানে ৫ হাজারের মতো নন ক্যাডারের শূন্য পদ রয়েছে। সেটি যদি চলমান বিসিএস পরীক্ষাগুলোতে বন্টন করে দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে এক হাজারের বেশি প্রার্থী চাকরির সুযোগ পাবেন না। আমরা বিসিএস পরীক্ষায় পাস করে বিগত সাত বছর ধরে চাকরির জন্য অপেক্ষা করছি। পিএসসি চেয়ারম্যান এখন নতুন নিয়ম করে আমাদের বঞ্চিত করছেন।

তিনি বলেন, আমাদের অধিকাংশ প্রার্থীর সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়েছে। কারো বিয়ে হয়েছে। নতুন করে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আর সুযোগ নেই। নতুন নিয়মের বিষয়টি আগে ঘোষণা করা হলে আমরা অন্য প্রতিষ্ঠানে চেষ্টা করতাম। যেহেতু নন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হলে নিশ্চিত চাকরি পাওয়া যায়, সে কারণে এতদিন ধরে অপেক্ষায় রয়েছি। নতুন নিয়ম বাতিল করে বর্তমান সব শূন্য পদে নিয়োগের দাবি জানানো হয়।

তিন বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন নাহিদা ফারহানা। রাজধানীর উত্তরা থেকে সকাল ৯টায় এসে তিনি মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছেন। সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে আর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বয়স নেই। এখন এসে নতুন নিয়ম করে চাকরি থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ ঘোষণা আগে দেওয়া হলে অন্য কোথাও চেষ্টা করতাম। সব প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে পিএসসি চেয়ারম্যানের কাছে তিনি মানবিক আবেদন জানান।

আন্দোলনকারীরা জানান, ৪০তম বিসিএসের নন ক্যাডার পাস করা প্রার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি পিএসসি চেয়ারম্যান ও সব সদস্যদের কাছে স্মারকলিপি হিসেবে দিয়েছেন। আমাদের কাউকে বঞ্চিত করা হবে না বলে চেয়ারম্যান আশ্বস্ত করেছেন। তবে বাস্তবে তার ভিন্নতা থাকায় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

(ঢাকাটাইমস/০৬অক্টোবর/একে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :