বানার নদীর পাড়ে শীতল পাটির হাট

আজহারুল হক, ময়মনসিংহ
 | প্রকাশিত : ০৭ অক্টোবর ২০২২, ১৫:১৮

`চন্দনেরি গন্ধভরা, শীতল করা, ক্লান্তি-হরা। যেখানে তার অঙ্গ রাখি- সেখানটিতেই শীতল পাটি।‘ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তার ‘খাঁটি সোনা’ কবিতায় শীতল পাটিকে বাংলার মাটির সঙ্গেই তুলনা করেছেন। এই শীতল পাটি একসময় ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়ার রাজপ্রাসাদেও স্থান পেয়েছিল বলে শোনা যায়।

পাটিগুলো সাধারণত ৭ ফুট বাই ৫ ফুট হয়ে থাকে। ডালা পাটি, রঙিন পাটি, বেতের পাটি, নামাজের পাটি, বোকাই পাটি ইত্যাদি নামে পরিচিত এসব শীতল পাটি।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার নিগুয়ারী ইউনিয়নের কুরচাই ও চাকুয়া নামে দুটি গ্রাম। পাটির জন্য বিখ্যাত বলে গ্রাম দুটি পরিচিতি পেয়েছে পাটিপল্লী বলে। গ্রামের পাশ দিয়েই এঁকেবেঁকে চলে গেছে কালী বানার নদী। এ নদীর তীরেই অবস্থিত নিগুয়ারী ইউনিয়নের কুরচাই ও চাকুয়া গ্রাম।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৮ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত সেই বানার নদী পাড়ের পাটিপল্লীতে গিয়েছিলাম সম্প্রতি সময়ে।

ঘুরতে ঘুরতে দেখা মিলল শীতলপাটি বুননের কর্মযজ্ঞ। বুননকর্মীদের কাছে জানা গেল নানা কথা। সে কথায় ফুটে উঠল অতীত ঐতিহ্যের গর্ব।

গ্রাম দুটিতে শীতল পাটি বুনিয়াদের বসবাস অনেক দিন আগে থেকে। প্রতিদিন ভোর থেকেই প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার শীতল পাটি বুননের কাজ শুরু করার সাথে সাথে গ্রাম দুটিতে ভিন্নধর্মী হাট গড়ে উঠলেও বর্তমানে শীতল পাচি শিল্পীদের এখন আর পূর্বের জৌলুস নেই। তাদের মাঝে নেমে এসেছে দুর্দিন।

চাকুয়া গ্রামের পাটি শিল্পী সুমতি রানী দে, অলকা রানী সরকার, অবলা রানী দে, তাপশি রানী সরকার, মনে রাখা রানী দে, উত্তম চন্দ্র দে, স্বরসতী রানী সূত্রধর, ববিতা রানী দে, গোপাল চন্দ্র দে, শ্যামল চন্দ্র দে পাটি বুননের কাজ করে সংসার চালান।

চাকুয়া গ্রামের গোপাল চন্দ্র দে বলেন, একবার বীজ রোপণ করলে এ মোস্তাক গাছ বড় হওয়ার পর ৬০ বছর পর্যন্ত বেত কাটা যায়।

পাটি শিল্পী শ্যামল চন্দ্র দে জানান, সাধারণত তার চার ধরনের পাটি তৈরি করে থাকেন। পিঠা পাটি, ডালা পাটি, শীতল পাটি ও বোকাই পাটি। একেকটি পাটি বিক্রি করে তাদের ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়।

পাটি শিল্পীরা জানান, আগে ব্যবসা ভাল হতো। বর্তমানে প্লাস্টিকের মাদুর ও পাটির জন্য আমাদের পাটির সেই চাহিদা নেই। এ অবস্থায় এখন আমাদের সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। পাটি শিল্পীদের অনেকে মায়ায় পড়ে এই পেশা আকড়ে ধরে রাখতে গিয়ে মহাজনদের ঋণের চক্রে পড়ে সাত পুরুষের ভিটে মাটি বিক্রি করে দেশান্তরিত হয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবিদুর রহমান জানান, সম্প্রতি শীতল পাটি খ্যাত গ্রাম দুটি ঘুরে এসেছি। এ শিল্পকে ধরে রাখতে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৭অক্টোবর/এলএ/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :