বিপন্ন সুগন্ধী সপ্তপর্ণী ছাতিম গাছ

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৯ অক্টোবর ২০২২, ১১:৫৮
অ- অ+

চিরসবুজ উদ্ভিদ ছাতিম বৃক্ষ প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে বেশ পরিচিত। হেমন্তের স্নিগ্ধ প্রকৃতিতে সন্ধ্যা নামতেই বাতাসে ছাতিম ফুলের ম ম সুবাস। প্রকৃতিতে বয়ে বেড়ানো হালকা বাতাসের সাথে থেকে ভেসে আসে বুনো ফুল ছাতিমের মিষ্টি ঘ্রাণ। সূর্য যখন বেলা শেষে গোধূলিতে যায়, তখন থেকেই একটু একটু করে ছড়াতে থাকে মায়াবী এ ঘ্রাণ। ঝাঁকড়া পত্রপল্লব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু ছাতিম গাছের শাখা-প্রশাখায় ভরা সবুজ পাতা আর সাদা ফুলে সবুজাভ রঙে থোকায় থোকায় অগুনতি ফুলে প্রকৃতির কী নিঃসর্গ তা না দেখলে অনুভব করা যায় না।

ছাতিমের পাতা বেশ দৃষ্টিনন্দন, ডালের আগায় একসঙ্গে ছয়-সাতটি পাতা মিলে অপূর্ব সুন্দর বিন্যাসে নিজেকে প্রকাশ করে। তাই ছাতিমের আরেক নাম সপ্তপর্ণ। পাতাগুলো গাছজুড়ে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ছাতার মতো থরে থরে সাজানো। ফুলের বিপুল ঐশ্বর্যে, পাতার সুনিবিড় ছায়ায় সুউচ্চ ছাতিম তীব্রভাবে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করে। কথাসাহিত্যিক বিপ্রদাশ বড়ুয়ার মতে, ‘হেমন্ত ও শীতের শূন্যতায় ছাতিম প্রবল প্রাণের প্রতীক।’

সারাবিশ্বে এর প্রায় ৪০-৬০টি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। ছাতিম গাছে আদি বাসস্থান পূর্ব এশিয়ার চীন, ভারত, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং অস্ট্রেলিয়া। এমনকি এটি আফ্রিকায়ও দেখা যায়।

গাছটির তেমন বাণিজ্যিক মূল্য নেই। এ গাছের ফুল ও ফল বন্যপ্রাণী বিশেষ করে বানর-হনুমানরা খায়। কাঠেরও তেমন বাণিজ্যিক মূল্য নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে ছাতিম গাছের কাঠকে বলা হয় ‘হোয়াইট চিজ উড’ বা শ্বেত নমনীয় কাঠ। জ্বালানি, হালকা আসবাবপত্র, লেখাপড়ার ব্ল্যাকবোর্ড, দিয়াশলাইয়ের বাক্স প্রভৃতি তৈরিতে ছাতিম গাছের কাঠ ব্যবহৃত হয়।

ছাতিম গাছ প্রায় ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ছাতিম গাছের পত্রটি যৌগিক পত্র। এর বৃন্তের গোড়ায় পাঁচ থেকে আট-নয়টি পর্যন্ত পত্রক থাকে। তবে সাধারণত এতে সাতটি পত্রক থাকায় সংস্কৃত ভাষায় একে সপ্তপর্ণ বা সপ্তপর্ণী উদ্ভিদ বলে। বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে এটিকে ছাতিয়ান, ছাইত্তান, ছাইত্তান্না বা ছাতিম নামে ডাকা হয়।

ছাতিমের বৈজ্ঞানিক নাম আলোসটনিয়া স্কোলারিস। পড়ালেখার সঙ্গে যোগ আছে বলে দ্বিতীয় অংশের এমন নামকরণ। একসময় এর কাঠ দিয়ে ব্ল্যাকবোর্ড ও ছাত্রদের লেখার শ্লেট তৈরি করা হতো।

ছাতিমগাছ নিয়ে আছে নানা উপকথা ও কিংবদন্তি। বিভিন্ন অঞ্চলে আদিবাসীরা এর তলায় বসতে বা এর ছায়া মাড়াতে চায় না। ছাতিমগাছের সঙ্গে শয়তানের যোগসূত্র আছে বলে অনেকের বিশ্বাস; তাই ইংরেজি নাম ডেভিলস ট্রি। নামটি বাংলা করলে দাঁড়ায় শয়তানের গাছ। এ শয়তান শব্দটি অঞ্চলভেদে বিকৃত হয়ে ছয়তাইন্যা গাছ কিংবা ছাতিয়ান, ছাইত্তান, ছাইত্তান্না গাছ নামে ডাকা হয়।

বাংলাদেশে এক সময় গ্রামের রাস্তার পাশে, বনে-জঙ্গলে অহরহ এ গাছ থাকলেও বর্তমানে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না ছাতিম গাছ। দূর থেকে ভেসে আসা সুঘ্রাণ শুঁকে গাছটিকে খুঁজে নিতে হয়। নির্বিচারে গাছ কেটে বিক্রি করা বা বসতবাড়ি নির্মাণের ফলে অন্যান্য গাছের সাথে উজাড় হতে হতে এখন এ ছাতিম গাছের দেখা মেলে না বললেই চলে। নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে ছাতিম গাছ এখন বিপন্ন প্রজাতির। ঢাকায় হাতেগোনা কয়েকটি জায়গায় ছাতিম গাছ দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ঢাকার অফিসার্স ক্লাব, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শহীদ মিনার, উদয়ন স্কুলের কাছে, চামেরি হাউস, কার্জন হল, আব্দুল গণি রোড, নিকেতন (পুলিশ প্লাজার বিপরীতে), হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত, সোনারগাঁওয়ের দড়িকান্দি, পুরাতন বিমানবন্দর চত্বর, গলফ ক্লাব, নিকুঞ্জসহ নানা জায়গায় এখন ছাতিমের শোভা-সুরভি উপভোগ করা যাবে।

আমাদের দেশে গাছ অযত্ন অবহেলায় বড় হলেও পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য উদ্ভিদ হিসাবে সম্মান দেওয়া হয়েছে ছাতিম গাছকে। তবে ভারতেও আগের মতো ছাতিম গাছ আর দেখা যায় না।

বাংলা সাহিত্য ও কবিতায় গুরুত্বসহকারে ছাতিম গাছের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে গাছটিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

ছাতিম গাছের কষ বা আঠা অনেকে ঘা বা ক্ষতে লাগিয়ে থাকেন। এর বাকল বা ছাল ওষুধের কাজে ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়ে এটি অত্যন্ত উপকারী। জ্বর ধীরে ধীরে নামায় বলে ম্যালেরিয়াতেও উপকারী। চর্মরোগেও ছাতিম ফলপ্রদ।

বাণিজ্যিক মূল্য নেই বলে ছাতিমকে কেউ তাদের বাগানে বাড়ির পাশে কিংবা রাস্তার ধারে লাগায় না। নার্সারিতেও ছাতিম গাছের চারা পাওয়া যায় না। অযত্নে অবহেলায় ছাতিম গাছ বেড়ে ওঠে। জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় বিলুপ্তপ্রায় ছাতিম গাছ রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি।

(ঢাকাটাইমস/২৯ অক্টোবর/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নিরাপদ স্থান ছাড়াই চার লাখ ২৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি আবারও বাস্তুচ্যুত: জাতিসংঘ
শোবিজ তারকারা ব্যাট-বল নিয়ে আবারও মাঠে নামছেন  
এপ্রিলে রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপিকে জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য প্রচার
গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় ৩১ জন নিহত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা