ক্যানসারের বিরুদ্ধে কাজ করে ভেষজ তেজপাতা

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০২২, ০৮:৪১

শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে রোগ সৃষ্টিকারী অনুজীব থেকে আমাদের রক্ষা করে। কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হলে আমরা সহজে সংক্রমিত হয়ে পড়ি। সেক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে ভেষজ জাতীয় উপাদান। ভেষজ জাতীয় উপাদান থেকে যে ইমিউনোমোডুলেটর পাওয়া যায় তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার শরীরকে উপযোগী করে তোলে। এমনই একটি ভেষজ উদ্ভিদ হলো তেজপাতা। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে।

তেজপাতার ভেষজ গুণ শুধু রান্নার স্বাদই বাড়ায় না, স্বাস্থ্য সুরক্ষাতেও এর জুড়ি মেলা ভার। পায়েস, পোলাও, বিরিয়ানি থেকে শুক্তো কিংবা ডাল, ফোড়নে একটি তেজপাতা দিলেই রান্নার স্বাদ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এত গুণের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তেজপাতার কদর রয়েছে। এটি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও চীনে বেশি উৎপন্ন হয়।

জাদুকরী তেজপাতায় রয়েছে কপার, সেলেনিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ই, সি ও ফলিক অ্যাসিডসহ উপকারী নানা উপাদান। এতে থাকা বিভিন্ন খনিজ উপাদান ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সহায়তা করে। হজমের সমস্যা দূর করতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, হার্টের সমস্যা রুখতে, ক্যানাসারের বিরুদ্ধে কাজ করতেও ভেষজ তেজপাতা ভীষণ উপকারী।

তেজপাতায় জৈব যৌগের মধ্যে রয়েছে ক্যাফেক অ্যাসিড। এ উপাদানগুলো হার্টের দেয়ালকে মজবুত করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। হৃদ্‌যন্ত্রকে সুস্থ রাখে।

তেজপাতা শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই টাইপ ২ ডায়াবিটিসের জন্য এটি খুবই কার্যকর। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, টানা ৩০ দিন ১ থেকে ৩ গ্রাম তেজপাতা গ্রহণ করলে রক্তে গ্লুকোজ ও কোলেস্টরেলের পরিমাণ কমে।

গবেষণায় দেখা যায় তেজপাতা ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করে। এতে ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ও ক্যাটচীন উপাদান থাকায় এটি ক্যানসারের কোষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটি গবেষণা অনুযায়ী তেজপাতা ব্রেস্ট ক্যানসারের বিরুদ্ধেও কাজ করে।

এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয় এবং শরীরকে আরও ভালোভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। তেজপাতায় রয়েছে এমন জৈব যৌগ, যা পেটের অসুখ সারাতে সাহায্য করে। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) বা অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতার ত্রুটিজনিত সমস্যায় তেজপাতা খুব কার্যকর।

ত্বকে নানা ধরনের ছত্রাকঘটিত সংক্রমণ হয়। একটি করে তেজপাতা চার কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে খেতে পারেন। দিনে চার-পাঁচ বার এই জল খেলে সুফল পাবেন।

তেজপাতার প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি যেকোনো ধরনের মাথাব্যথা উপশমে কার্যকর। তেজপাতায় রয়েছে ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট উপাদান, যা প্রদাহ দূর করে। ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে তেজপাতার এসেনশিয়াল ওয়েল উপকারী। ফোঁড়ার সমস্যা হলে তেজপাতা বেটে তার উপরে প্রলেপ দিন। ব্যথাও কমবে এবং তাড়াতাড়ি শুকিয়েও যাবে।

তেজপাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও মাইক্রোব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এটি ক্ষত সারাতে দারুণভাবে কাজ করে। এটি ক্যান্ডিডার মত ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। আপনি যদি ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হন এবং গলা খুশখুশ ও কাশি সমস্যায় ভোগেন তাহলে ব্যাকটেরিয়া তাড়াতে এটি আপনাকে চমত্‍কারভাবে সাহায্য করবে। ৪-৫টি তেজপাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করুন। পানি কুসুম ঠাণ্ডা করে নিন। একটি পরিষ্কার কাপড় পানিতে ভিজিয়ে বুক মুছুন। কয়েকবার এটি করুন। আর খেয়াল রাখবেন পানিতে যেন খুব বেশি গরম না হয়।

শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে এটি কিডনির সমস্যা করে ও অন্যান্য গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে। কিডনির সমস্যায় ভুগছেন অনেক দিন ধরে। কিডনিতে পাথর থাকলে তেজপাতা ফোটানো পানি খান। কিডনিতে পাথর দূর করতে বেশ কার্যকর।

প্রস্রাবের রং হলুদ আকার ধারণ করলে গরম পানিতে তেজপাতা দু’ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপরে ছেঁকে নিয়ে দু-তিন ঘণ্টা অন্তর পানিটি পান করুন। সমস্যা কমবে।

ব্রণের সমস্যায় চন্দন আর তেজপাতা একসঙ্গে বেটে মুখে লাগাতে পারেন। দাগ, ছোপ থেকে রেহাই পাবেন। ত্বক থাকবে উজ্জ্বল ও সতেজ। এ ছাড়া, গায়ের দুর্গন্ধ কমাতেও তেজপাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। তেজপাতার নির্যাস ব্যবহার করলে চুল পড়ার সমস্যা দূর হতে পারে। খুসকি আর চুলের রুক্ষতা কমাতেও জবাব নেই এই পাতার।

চুলে শ্যাম্পু করার পর তেজপাতার পানি ব্যবহার করুন। কয়েকটি তেজপাতা দিয়ে পানি চুলায় গরম করতে হবে। ঠান্ডা হওয়ার পর এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে চুলের খুশকি দূর হয়। একইসঙ্গে চুল পড়াও ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

৫০ গ্রাম তেজপাতা এবং ৪০০ মি.লি. পানি একসাথে করে চুলায় গরম করতে হবে, যতক্ষণ না কমে ১০০ মি.লি. পানি হয়। তারপর ঠান্ডা করে মাথার তালুতে লাগাতে হবে। ৩-৪ ঘণ্টা রাখার পরে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে।

দাঁতকে সাদা ও সুস্থ রাখতে তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার। কফি, চা, তামাক, অ্যালকোহল- এসবের কারণে যদি দাঁত হলুদ হয়ে যায়, তাহলে শুকনো তেজপাতা ও শুকনো কমলার খোসা গুঁড়ো করে অল্প পানির সাথে মিশিয়ে টুথপেস্ট হিসেবে ব্যবহার করবেন। এতে দাঁত সাদা ও ঝকঝকে হয়।

আয়ুর্বেদশাস্ত্র মতে, তেজপাতার তেলের একাধিক ঔষুধি গুণ আছে। নানা রকম অসুস্থতা ছাড়াও বাড়ির পরিবেশ দূষণমুক্ত ও শান্ত রাখতেও ব্যবহার করা হত তেজপাতা। সনাতন সেই তেজপাতার তেল বাড়িতে বানিয়ে নিতে পারেন আপনিও। ২৫০ মিলি অলিভ অয়েল ও ৩০ গ্রাম তেজপাতা নিন। তেজপাতা গুঁড়ো করে অলিভ অয়েলে ভিজিয়ে রাখুন। এই মিশ্রণ কাচের বয়ামে ঢেলে কোনও অন্ধকার জায়গায় ২ সপ্তাহ রেখে দিন। মাঝেমাঝে বয়ামটি ঝাঁকিয়ে নিতে পারেন। নির্দিষ্ট সময় পরে ভাল করে ছেঁকে নিয়ে কাচের শিশিতে ভরে রাখুন তেজপাতার তেল। এই তেলের অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল গুণ সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। এই তেলে আপনি সারা শরীরেও ব্যবহার করতে পারেন। বাড়িতে পোকামাকড়ের উপদ্রব কিংবা পোকা গায়ে বসলে র‌্যাশ, অ্যালার্জির সমস্যা শুরু হলে সারা শরীরে তেজপাতার তেল মেখে নিতে পারেন। রেহাই মিলবে পোকামাকড়ের কামড় থেকে। বেদনানাশক হিসাবে এই তেলের দারুণ গুণ। মাথায় তীব্য যন্ত্রণা করলে বামের মতো এই তেল লাগিয়ে নিতে পারেন। যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাবেন। কোমরে বা ঘাড়ে যন্ত্রণা হলেও উপশম পেতে পারেন এই তেলে। চুল ভাল রাখতেও নিয়ম করে এই তেল ব্যবহার করতে পারেন।

তেজপাতা পুড়িয়েও পাওয়া যায় বেশ কিছু উপকার। ছাইদানিতে বেশ কয়েকটি তেজপাতা রেখে দশ মিনিট ধরে পোড়াতে হবে। তেজপাতার মধ্যে থাকা তৈল-জাতীয় উপদানগুলো পোড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সারা ঘরে সুগন্ধ ছড়ায়। এই পোড়া গন্ধ মন সতেজ রাখতে সাহায্য করে। তেজপাতার মধ্যে রয়েছে লিনালুল নামক উপাদান। এটি উৎকণ্ঠা কাটাতে, শান্ত থাকতে ও হতাশা দূর করতে সহায়তা করে।

(ঢাকাটাইমস/২৪ নভেম্বর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :