জান্নাতে যাওয়া খোদাভীরুদের প্রকৃত সফলতা ও বিজয়

ইসলাম ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২২, ১১:৪১ | প্রকাশিত : ২৫ নভেম্বর ২০২২, ০৮:০৯

মহান আল্লাহ সব কিছুর মালিক ও স্রষ্টা। মহান আল্লাহ মহিমান্বিত, মহারাজাধিরাজ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই। তিনি মহান আরশের অধিপতি, যা সৃষ্টিজগতের ছাদস্বরূপ। আসমান-জমিন ও উভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছু আল্লাহর কুদরতে আরশের নিচে বিদ্যমান। আল্লাহর জ্ঞান সব কিছু ঘিরে আছে। সব কিছুর ওপর তাঁর কুদরত কার্যকর। তিনি সব কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী।

মহান সৃষ্টিকর্তা মানুষের ঈমান সুদৃঢ় করার জন্য বারবার বলেছেন, পরলোকের সম্পদ ইহলোকের সম্পদ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। ক্ষণস্থায়ী জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে চিরস্থায়ী জীবনকে বরবাদ করতে বারণ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, কিন্তু যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত; যার পাদদেশে নদীমালা প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। এ হল আল্লাহর পক্ষ হতে আতিথ্য। আর আল্লাহর নিকট যা আছে তা পুণ্যবানদের জন্য উত্তম। (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৯৮)

আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে পরীক্ষা করার জন্য পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য-স্বরূপ ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, তার প্রতি তুমি কখনোও তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না। তোমার প্রতিপালকের জীবিকাই উৎকৃষ্টতর ও স্থায়ী। (সুরা ত্বাহা, আয়াত ১৩১)

নারী, সন্তান-সন্ততি, জমাকৃত সোনা-রূপার ভান্ডার, পছন্দসই (চিহ্নিত) ঘোড়া, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট লোভনীয় করা হয়েছে। এ সব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহর নিকটেই উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে। বল, আমি কি তোমাদেরকে এ সব বস্তু হতে উৎকৃষ্ট কোন কিছুর সংবাদ দেব? যারা সাবধান (পরহেযগার) হয়ে চলে তাদের জন্য রয়েছে উদ্যানসমূহ যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। বস্তুতঃ আল্লাহ তার দাসদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত। (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৪-১৫)

বস্তুতঃ তোমাদেরকে যা কিছু দেওয়া হয়েছে, তা পার্থিব জীবনের ভোগ; কিন্তু আল্লাহর নিকট যা আছে, তা উত্তম ও চিরস্থায়ী তাদের জন্য, যারা বিশ্বাস করে ও তাদের প্রতিপালকের ওপর নির্ভর করে। (সুরা শুরা, আয়াত ৩৬)

বরং তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাক। অথচ পরকালের জীবনই উত্তম ও চিরস্থায়ী। (সুরা আলা, আয়াত ১৬-১৭)

পরকাল ভুলে ইহকালের আমল করলে অনুতাপ ও লাঞ্ছনা আসে। দুনিয়া আসলে ধোকা ও প্রবঞ্চনার জায়গা। আখেরাত তা নয়। দুনিয়ার সাফল্য মোটেই সাফল্য নয়, আখেরাতের সাফল্যই প্রকৃত সাফল্য। মহান আল্লাহ বলেন, জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কিয়ামতের দিনই তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় প্রদান করা হবে। সুতরাং যাকে আগুন (দোযখ) থেকে দূরে রাখা হবে এবং (যে) বেহেশতে প্রবেশলাভ করবে, সেই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়। (আল ইমরান, আয়াত ১৮৫)

দুনিয়ার সুখসামগ্রীর সাথে বেহেশতের সুখসামগ্রীর কোন তুলনাই হয় না। কিন্তু বহু বান্দার ঈমান বড় দুর্বল, বিশ্বাস বড় ক্ষীণ। তারা সামনে যেটা পায়, সেটাকেই শ্রেষ্ঠ মনে করে, হাতে হাতে নগদ যেটা পায়, সেটাই শেষ পাওয়া ভাবে। অথচ দুনিয়া মানব জীবনের শেষ নয়। মৃত্যুর পরও মানুষের জন্য রয়েছে এক অনন্তজীবন। যেখানে মানুষকে তার পার্থিব জীবনের ভাল ও মন্দ কাজের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে হবে। কঠিন বিচারের পর জান্নাত বা জাহান্নামরূপে তার যথাযথ ফলাফল ভোগ করতে হবে। এটাই হল আখিরাত। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে জাহান্নামের আযাব হতে নাজাত এবং জান্নাতের অনন্তসুখ ও অনাবিল শান্তিলাভের মধ্যে জীবনের প্রকৃত সাফল্য নিহিত।

জান্নাত বা বেহেশত হচ্ছে ইসলামের পরিভাষায় স্বর্গ। মৃত্যুর পরে ঈমানদার এবং পরহেজগার ব্যক্তিগণ জান্নাতে অনন্তকাল ধরে বাস করবে। আরবী জান্নাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বাগান বা উদ্যান। কুরআন শরীফে একাধিকবার সপ্ত স্বর্গ, সামাওয়াত জান্নাহ-এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক সময় সাত বেহেশত বা জান্নাতকে সাত আসমান বলা হয়।

কুরআনে বর্ণিত জান্নাতের নামসমূহ: জান্নাতুল ফিরদাউস, দারুস সালাম, জান্নাতুল মাওয়া, দারুল খুলদ, জান্নাতুল আদন, জান্নাতুল আখিরাহ, জান্নাতুন নাঈম। এই জান্নাতগুলোর মধ্যে জান্নাতুল ফিরদাউস হলো সর্বশ্রেষ্ঠ জান্নাত।

বেহেশত চির শান্তিময় স্থান। সেখানে রোগ শোক, জন্ম-মৃত্যু ও বার্ধক্য থাকবে না। বেহেশতের ভিত্তি স্বর্ণ-রৌপ্য নির্মিত। এর ভূমি মেশকের ন্যায়, বালি কর্পুরের ন্যায় ও তরুলতা জাফরানের ন্যায় সুগন্ধিপূর্ণ সুশোভিত, সুমোহিত, সুসজ্জিত। বেহেশতের ঝর্ণাধারাগুলো সুগন্ধে পরিপূর্ণ। এতে দুগ্ধ, মধু, পবিত্র শরাব এবং স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা ও স্রোতস্বিনীসমূহ সদা প্রবহমান। বেহেশতে নানা রকম সুস্বাদু ফলের সুশোভিত বাগবাগিচা রয়েছে। বাগানের তলদেশ দিয়ে সদা প্রবহমান ঝর্ণাধারা অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে আছে। বেহেশতের প্রাসাদসমূহ মণি, মুক্তা, ইয়াকুত ও জমরুদ পাথরের তৈরি। তার শয্যা ও আসনসমূহ মণি মুক্তা খচিত। প্রাসাদসমূহের মধ্যে এমন মনোরমা ও মনোহারিনী নয়ন বিশিষ্ট পরমা সুন্দরী হুরগণ রয়েছেন, যাঁদেরকে কখনো কোন মানুষ বা জিন স্পর্শ করেননি। মুক্তার ন্যায় চির কিশোর গিলমান তাদের মধ্যে ঘুরে-ঘুরে পানি পরিবেশন করবে। প্রত্যেক বেহেশতীর জন্য দুটো স্বর্ণের ও দুটো রৌপ্যের বাগান থাকবে। পার্থিব জগতের ধার্মিকা স্ত্রী ও সন্তানগণ তাঁদের সঙ্গে থাকবেন। নর-নারী প্রত্যেকেই চির যৌবনা হবে, কখনো বৃদ্ধ হবেন না। তাদের মল-মূত্র ত্যাগের প্রয়োজন হবে না। তারা কোন সময় অসহনীয় শীত-গরম অনুভব করবেন না। তাদের কোনও কিছুরই অভাব থাকবে না এবং যা কিছু চাইবে, চাওয়া মাত্র সবকিছু উপস্থিত হয়ে যাবে।

বেহেশতের আরাম আয়েশ, সুখ শান্তি কি পরিমাণে মানুষকে দেওয়া হবে, তা মানুষের জ্ঞান ও কল্পনার ঊর্ধ্বে। আল্লাহ বলেন, “আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য এমন পুরস্কার প্রস্তুত রয়েছে, যা কোন চক্ষু কখনো দেখেনি, কোন কর্ণ কখনো শোনেনি এবং কোন মানব হৃদয় কখনো কল্পনাও করেনি।”

বেহেশতের সুখ-শান্তি, আনন্দ অসীম ও অফুরন্ত। এ নশ্বর জগতের সবকিছু সীমাবদ্ধ ও ক্ষয়শীল। ধন- দৌলত, সুখ-শান্তি, রূপ-যৌবন, আরাম-আয়েশ ইত্যাদি যা কিছু পার্থিব জীবনে ভোগ-ব্যবহার করে, তা একদিন নিঃশেষ হয়ে যায়। কিন্তু পারলৌকিক জীবনে আল্লাহ মানুষকে যে নিআমত-রাজি দান করবেন, তা সবই চিরস্থায়ী ও অফুরন্ত। এ মর্মে আল্লাহ কুরআন মাজীদে বলেন, “যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।” (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত ৮)

একজন ঈমানদারের জন্য আল্লাহর হুকুম পালন ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নত পালন অপরিহার্য। জান্নাত লাভ মুমিনের চূড়ান্ত সফলতা। মহান আল্লাহতায়লা বলেন, যাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সেই সফলকাম। (সুরা আল ইমরান : আয়াত ১৮৫)

প্রত্যেক মুমিনের শেষ ঠিকানা জান্নাত। জান্নাত অনন্ত সুখের শান্তি সুনিবিড় আধার। জান্নাত যাওয়ার পথ প্রক্রিয়া মহান আল্লাহ অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছেন। কোরআন ও হাদীসের আলোকে জান্নাত লাভের কয়েকটি উপায় বর্ণনা করা হলো।

শাহাদাতের সাক্ষ্য দেয়া

জান্নাতে প্রবেশের প্রথম উপায় হলো শাহাদাতের সাক্ষ্য দেয়া, কালেমা তাইয়্যেবা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ পড়া। অর্থ: আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল।

যে ব্যক্তি ইসলামের এ সাক্ষ্য প্রদান করবে, এর যাবতীয় আরকান পালন করবে, আর এক অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এই কালিমা দীন ও ইসলামের মূল ভিত্তি এবং ঈমানের মূল স্তম্ভ।

মানুষকে কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র দাওয়াত দেয়া অনেক বড় দায়িত্বপূর্ণ কাজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, 'যে ব্যক্তি ইখলাসের সঙ্গে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে; সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।' (ইবনে হিব্বান)।

আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ, অতঃপর এ কথার উপর সুদৃঢ় থাকে। তাদের কোন ভয় ভীতি নেই, তাদের কোন চিন্তা নেই। তারাই জান্নাতবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এ জান্নাত তারা তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ লাভ করবে। (সুরা আল আহক্বাফ: ১৩-১৪)

অজু করার পর কালেমা শাহাদাত পড়লে তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হয়। সে ইচ্ছা করলে এর যে কোনো দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করতে পারবে। (মুসলিম ২৩৪)

কালেমা শাহাদাত উচ্চারণ: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু; ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে এক আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো মাবুদ নাই, তিনি এক ও একক, তাঁর কোনো শরিক বা অংশীদার নাই; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয়ই হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তায়ালার অতি প্রিয় খাস বান্দা ও তাঁর প্রেরিত রাসুল।

ঈমান নেক আমল

আল কোরআনে বেহেশত লাভের জন্য সর্বপ্রথম ঈমানের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নেক আমল । কোরআনের সর্বত্র ঈমানের সাথে নেক আমলের কথা উল্লেখ রয়েছে । আল্লাহতায়ালা বলেন, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে , তারা বেহশতের অধিবাসী । (সুরা বাকারা : আয়াত ৮২)

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের শরীর ও অবয়বের দিকে তাকান না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে তাকান। মুসলিম শরীফের ২৫৬৪ নম্বর হাদিসে এটি উল্লেখ করা আছে। আরেক হাদিসে নবীজি বলেছেন, ‘তোমার ঈমানকে খাঁটি করো, অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট।’

আসমাউল হুসনা

আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নামসমূহ মুখস্থ করা এবং এ নামগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা জান্নাতে প্রবেশের একটি উপায়।

ইখলাসের সঙ্গে আমল পালন করা

ঈমানদারের জন্য পুরস্কার হিসেবে রয়েছে জান্নাত। তবে জান্নাতে যেতে হলে রয়েছে কিছু শর্ত। যেকোনো আমল ইখলাসের সঙ্গে পালন না করে কখনোই জান্নাতবাসী হওয়া সম্ভব নয়। এটাই জান্নাত লাভের অপরিহার্য শর্ত।

ত্বাকওয়া

ত্বাকওয়া হলো, আল্লাহকে ভয় করে কোরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক আমল করা। অল্পে তুষ্টি এবং পরকালে আত্মার পাথেয় অর্জন করা। ত্বাকওয়া বেহশত লাভের উপায় হওয়া সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, পরকালে মুত্তাকীগণ বেহশত ও প্রশ্রবণসমূহের মধ্যে বসবাস করবে। (আল হিজর : আয়াত ৪৫)

মহান আল্লাহ বলেন, 'নিশ্চয়ই খোদাভীরুরা থাকবে জান্নাতে ও নেয়ামতে। তারা উপভোগ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদের দেবেন এবং তিনি জাহান্নামের আজাব থেকে তাদেরকে রক্ষা করবেন।' (সুরা তুর, আয়াত ১৭)

অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা দ্রুতগতিতে তোমাদের প্রভুর মাগফিরাত ও এমন বেহশতের দিকে অগ্রসর হও, বেহশত আসমান ও যমীন বরাবর প্রশস্থ, যা মুত্তাকী বা আল্লাহ ভীরু লোকদের জন্য নির্মিত হয়েছে (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৩৩)

ত্বাকওয়া সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, মানুষকে অধিকন্ত যে জিনিস বেহেশতে প্রবেশ করাবে তা হলো, আল্লাহর ভয় ও সচ্চরিত্র। (তিরমিযী, ইবনু মাযাহ, ও মুছনাদে আহমদ)

আল্লাহ রাসুল (সা.)-এর অনুকরণ অনুসরণ

আল্লাহতায়ালা বলেন, যারা আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর অনুসরণ ও অনুকরণ করে, আল্লাহতায়ালা তাদেরকে এমন বেহশত সমূহে প্রবেশ করাবেন, যার নিম্নদেশ থেকে ঝরণা বা নহরসমূহ প্রবাহিত হয়েছে। পক্ষান্তরে যারা মুখ ফিরিয়ে নিবে আল্লাহ তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিবেন । (সুরা আল ফাতাহ, আয়াত ১৭)

কোরআন তেলাওয়াত করা

আল কোরআনের অনুসারীগণ, যারা আল্লাহর আহল ও তার খাস বান্দা, কোরআন তাদের জান্নাতে প্রবেশের উপায় হবে। আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘‘আল কোরআনের সঙ্গীকে বলা হবে: কুরআন পাঠ কর, আর মর্যাদার উচ্চশিখরে আরোহণ কর। আর তেলাওয়াত করতে থাক। যেমন দুনিয়াতে তেলাওয়াত করছিলে; কেননা তোমার মর্যাদা হলো কুরআনের শেষ আয়াত পর্যন্ত যা তুমি পাঠ করবে’’। [তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]

আয়াতুল কুরসি পাঠ করা

রাসুল (সঃ) বলেছেন, প্রতি নামাজের পর যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে তার পুরষ্কার জান্নাত এবং এটা পাঠ করলে শয়তানের হাত থেকে পরিত্রাণ লাভ করা যায়। হাদিস থেকে জানা যায় আরশ মঞ্জিলের অবস্থান সর্বোচ্চ বেহেশত জান্নাতুল ফিরদাউসের উপরে যেখানে রোজ হাশরের বিচারের পর আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের সান্নিধ্যে অবস্থান করবেন।

আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ

আল্লাহতায়ালা বলেন, নিশ্চই আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাস্তায়, অতঃপর মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। ( সুরা আত তওবা, আয়াত ১১১)

ইলম শিক্ষা করা

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইলম হাসিল করা। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ইলম হাসিলের জন্য কোন রাস্তায় চলে , আল্লাহ তার জন্য বেহশতের রাস্তা সহজ করে দেন । (শরহু মুসলিম নবভী: ১৭/২৪)

দ্বীনের উপর ইস্তেকামাত থাকা

ইস্তেকামাত হলো আল্লাহর দ্বীনের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চই যারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ অতঃপর এ কথার উপর অবিচল থাকে, তাদের কোন ভয় নাই , এবং তারা চিন্তিতও হবে না । তারাই জান্নাতের অধিকারী। তারা তথায় চিরকাল থাকবে । তারা যে কর্ম করত এটা তাদের কর্মের প্রতিফল । (সুরা আল আহক্বাফ, আয়াত ১৪)

মসজিদ নির্মাণ

রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনের জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ অনুরুপভাবে তার জন্য বেহশত একটি ঘর নির্মাণ করবেন । (ফতহুল বারী : ১/৫৪৪)

মুখ গোপনাঙ্গের হেফাজত করা

রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি উভয় ঠোঁটের মধ্যভাগ ও দুই রানের মধ্যভাগ অর্থাৎ লজ্জাস্থান হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করি। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭৪)

নামাজ আদায়ে যত্নবান হওয়া

আল্লাহতায়ালা বলেন, অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মোমিনগণ—যারা নিজেদের নামাজে বিনয়ী ও নম্র, যারা অসার ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে, যারা জাকাত প্রদানে সক্রিয়, যারা নিজেদের সম্ভ্রম সুরক্ষা করে।’ ‘এবং যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান থাকে, তারাই অধিকারী হবে (জান্নাত) ফিরদাউসের, যাতে তারা স্থায়ী হবে। (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ১-১১)।

রোজা রাখা

সাহল ইবন সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জান্নাতের ভেতর‘রাইয়ান’ নামে একটি দরজা আছে। কিয়ামতের দিন এখান দিয়ে রোযাদারগণ ঢুকবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশাধিকার পাবে না। বলা হবে: কোথায় রোযাদারগণ? তখন তারা সেখান দিয়ে ঢুকবে। তারা ছাড়া সেখান দিয়ে আর কেউ ঢুকবে না। তারা প্রবেশ করার পর তা বন্ধ করে দেয়া হবে। তারপর আর কেউ ঢুকতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)

কবুল করা হজের প্রতিদান একমাত্র জান্নাত

নবীজি বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ করে, কোনো অশ্লীল কথা বলে না এবং পাপকাজে লিপ্ত হয় না, সে মায়ের পেট থেকে জন্ম নেয়ার দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে। আর কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়। (বুখারি, হাদিস: ১৫২১)

হালাল খাওয়া

হালাল খাদ্য গ্রহণকারীরাই নাজাত পাবে তাদের ঠিকানা হবে জান্নাত । রাসুল (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি হালাল খেয়েছে সুন্নাহ মোতাবেক আমল করেছে এবং মানুষকে কষ্ট দান থেকে বিরত রয়েছে সেই জান্নাতে যাবে। (তিরমিযী)

কু-প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করলে

আল্লাহতায়ালা বলেন, পক্ষান্তরে যে তার রবের সামনে (কিয়ামতের দিন) উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং কু-প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার আবাস। (সুরা নাজিআত, আয়াত : ৪০-৪১)

মাতা-পিতার সেবা করা

রাসুল (সা.) বলেন, ‘ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক’, তিনি আবারও বললেন, ‘ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক।’ কেউ জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কে সে জন?’ রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে বার্ধক্য অবস্থায় পেল অথবা যেকোনো একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেল, তবুও জান্নাত অর্জন করতে পারল না, সে ধ্বংস হোক।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৫১)

তওবা করা

বেহেশত লাভের অন্যতম উপায় হলো, তওবা করা। তওবা করলে পূর্বেকার সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়। এই সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, কিন্তু তারা ব্যতীত যারা তওবা করেছে, বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং নেক কর্ম সম্পাদন করেছে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের উপর কোন জুলুম বা অত্যাচার হবে না। (সুরা মারইয়াম, আয়াত ৬০)

(ঢাকাটাইমস/২৫নভেম্বর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :