টঙ্গীতে চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি

মো. রাজীব হোসেন, টঙ্গী-পূবাইল (গাজীপুর)
| আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৫:৪৪ | প্রকাশিত : ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৫:৩২

গাজীপুরের টঙ্গীর সোনাবানের শহর তুরাগ নদের তীরে আগামী ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব। এপর্বে আলমি শূরার (মাওলানা জোবায়েরপন্থী) মুসল্লিরা অংশ নেবেন।

বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে এগিয়ে চলছে ময়দানের প্রস্তুতিকাজ। তুরাগ তীরের ১৬০ একর সুবিশাল ময়দান প্রস্তুত করছে শত শত স্বেচ্ছাসেবী ।

টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরা, তুরাগ, কামারপাড়া, আশুলিয়া, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্র, মসজিদের মুসল্লি, তাবলীগের তিন চিল্লার সাথী, পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্যরা পালাক্রমে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন। কেউ কেউ ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, পুরনো ড্রেন সংস্কার, বাঁশের খুঁটি গাঁড়া, পাটের চট দিয়ে সামিয়ানা তৈরি, ময়দানের চারপাশের স্থাপিত ওজু-গোসলের চৌবাচ্চা, টয়লেটগুলো সংস্কারের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।

এদিকে এবারের বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে গাজীপুর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুরো ইজতেমা ময়দানকে তিনটি সেক্টরে ভাগ করে নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ময়দানের আশপাশে সাত হাজার ৫৩৯ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ইউনিফর্ম ডিউটি, যথা: স্থির পিকেট ডিউটি, ফুট পেট্রোল ডিউটি, মোবাইল ডিউটি, ওয়াচ টাওয়ার, রুফটপ ডিউটি।

এছাড়াও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি, সিসিটিভি সার্ভিল্যান্স, এরিয়া সার্ভিল্যান্স, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব, এন্টি টেরোরিজম ইউনিট-এটিইউ, ডিবি, কুইক রেসপন্স টিম-কিউআরটি, ফায়ার সার্ভিস, বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট, নৌ-পেট্রোল টিম, ফরেনসিক টিম, সাইবার পেট্রোলিং, এলআইসি, পিএইচকিউ, এপিসি, জলকামান, মেডিকেল টিম, অ্যাম্বুলেন্স টিম, অনুসন্ধান ডেস্ক, হারানো ও প্রাপ্তি কক্ষ, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ও মোবাইল কোর্ট দায়িত্ব পালন করবে।

ওয়াচ টাওয়ার : ইজতেমা ময়দানের চারপাশে পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে ১৪টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হচ্ছে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাইনোকুলার ও নাইট ভিশন গগলস-এর মাধ্যমে পুরো ময়দানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন।

সেগুলো টঙ্গী বাজার সেনা কল্যাণ ভবনের দক্ষিণ পাশে, আশরাফ সেতু ও বাটার মধ্যবর্তীস্থানে, স্টেশন রোড ক্রসিংয়ের দক্ষিণপাশে, টেলিফোন শিল্প সংস্থার বাউন্ডারির বাইরে, কামারপাড়া রোডে পূর্ব মাথায় মন্নুগেইট সংলগ্ন সিডিএল ভবন, কামারপাড়া রোডের টিনশেড মসজিদ বরাবর ইজতেমা ময়দানের প্রবেশ পথ সংলগ্ন, কামারপাড়া রোডের ৩নং প্রবেশ পথের পূর্ব পাশে, তুরাগ নদের পাড়ে কামারপাড়া ব্রিজের নিচে, আইইউবিএটি এর পেছনের গেটের বিপরীতে তুরাগ নদের পূর্ব পাড়ে, আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালের তুরাগ নদের পূর্ব পাড়ে, হোমিওপ্যাথ কলেজ ও কাঁচা বাজারের বিপরীতে তুরাগ নদের পূর্ব পাড়ে, ইজতেমা মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ও মাজার বস্তি পিমকি গার্মেন্ট কারখানার সামনে স্থাপন করা হচ্ছে।

নিরাপত্তা নজরদারি : ইজতেমা ময়দানে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা নিরসনে ময়দানের চারপাশে স্থাপিত রুফটপ (বহুতল ভবনের ছাদ) টাওয়ার থেকে নজরদারি করা হবে। সেনা কল্যাণ সংস্থা ভবনের ছাদ, আশরাফ সেতু শপিং কমপ্লেক্সের ছাদ, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশে আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়াম সংলগ্ন নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার, টেলিফোন শিল্প সংস্থা ভবনের ছাদ, টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের ছাদ, সিডিএল ভবনের ছাদ, গ্রীণ সাবান কারখানার ছাদ, কামারপাড়া রোডের নীরোল্যাক ভবনের ছাদ ও সম্রাট প্যাকেজিং হাউসের ছাদ থেকে দূরবীনের সাহায্যে সার্বক্ষণিক ময়দান ও আশপাশের এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হবে।

ড্রোন ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ : মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে টঙ্গী ব্রিজ, বাটা গেইট, স্টেশনরোড, মন্নুগেইট, কামারপাড়া ব্রিজ, আইইউবিএটি ইউনিভার্সিটি ভবন, ক্যান্সার হাসপাতাল ও কামারপাড়া টু স্লুইসগেইট এলাকা থেকে ড্রোনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

নিরাপত্তা সেক্টর পরিকল্পনা : পুরো ইজতেমা ময়দানকে তিনি সেক্টরের ভাগ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। টঙ্গী ব্রিজ হতে মন্নুগেইট ও তৎসংলগ্ন এলাকা ১নং সেক্টর, কামারপাড়া ব্রিজ হতে মন্নুগেইট মোড় ও তৎসংলগ্ন এলাকা ২নং সেক্টর ও কামারপাড়া ব্রিজ হতে তুরাগ নদের তীর ঘেঁষে টঙ্গী ব্রিজ, মূল বয়ান মঞ্চ ও তৎসংলগ্ন এলাকা ৩নং সেক্টরের অধীনে রয়েছে।

কন্ট্রোল রুম : ইজতেমায় আগত মুসল্লিদেরসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ময়দানের চারপাশে স্থাপিত ১০টি কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। মূল কন্ট্রোল রুমটি থাকবে অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলস উচ্চবিদ্যালয় মাঠে।

এছাড়াও বাটা গেইটের পাশে, বিদেশি মেহমানদের প্রবেশপথ, বিদেশি মেহমানদের নির্ধারিতস্থানের অভ্যন্তরে, তুরাগ নদের পূর্ব পাড়, এটলাস হোন্ডা কারখানার প্রবেশপথ, টেলিফোন শিল্প সংস্থা সংলগ্নস্থান, মাজারবস্তির সম্রাট প্যাকেজিং এর পশ্চিমপাশে ও মন্নুগেইটের কামারপাড়ামুখী ৬নং প্রবেশ গেইটে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

ভাসমান সেতু : আগত মুসল্লিদের ময়দানের নির্বিঘ্নে প্রবেশের জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা তুরাগ নদে পাঁচটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করবেন।

কুইক রেসপন্স টিম-কিউআরটি : ইজতেমা ময়দানে আগত ভিভিআইপি ও মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রথমবারের মতো গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে কুইক রেসপন্স টিম নামে একটি ইউনিট চালু করা হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের একদল চৌকস সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত টিমের সদস্যরা যেকোনো বিশেষ জরুরি প্রয়োজনে দ্রততম সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবেন। বিশেষ করে মন্ত্রী এমপি, বিদেশি মেহমানসহ ভিভিআইপিদের নিরাপত্তায় তারা নিয়োজিত থাকবেন।

এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম মহোদয়ের নির্দেশক্রমে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতিকাজ চলছে। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার ইজতেমা ময়দানে আগত দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অধিক তৎপর থাকবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণসহ বিভিন্ন অপারেশনাল কার্যক্রম দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।

উল্লেখ থাকে যে, ১৩ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১৫ জানুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে প্রথমপর্বের বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে। মাঝে ৪দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের অনুসারী (ওয়াসিফুল ইসলামপন্থী) মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয়পর্বে অংশ নেবেন। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের বিশ্ব ইজতেমার পরিসমাপ্তি ঘটবে। ২০২০ সালে ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ২০২১ ও ২০২২ সালে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি।

(ঢাকাটাইমস/০১জানুয়ারি/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :