আত্মহত্যা-ডিপ্রেশন নিয়ে কাজ

যুক্তরাজ্যের জেআই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দেশে চালু হচ্ছে এসএমআর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:১৪

যুক্তরাজ্যের জেআই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবার এসএমআর চালু হচ্ছে বাংলাদেশে। এর আওতায় মানুষের আত্মহত্যা প্রবণতা কমানো, ডিপ্রেশন, মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক সমস্যা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে কাজ হবে।

জেআই ফাউন্ডেশন ও এসএমআর এর প্রতিষ্ঠাতা সুনামগঞ্জের লন্ডন প্রবাসী জিল্লুর হোসাইন। তার বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা যুক্তরাজ্যে। পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই যুবক জিল্লুর ধরেন বাবার ব্যবসার হাল।

জিল্লুর জানান, ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল মানুষের জন্য কিছু করার। সেই চিন্তা থেকে ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যে যাত্রা শুরু করে জেআই ফাউন্ডেশন। মূলত নিঃসঙ্গ, ডিপ্রেশনে থাকা আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষদের নিয়ে এই সংগঠনের কাজ। গত এক যুগে নানামুখী কর্মকাণ্ডে জাই ফাউন্ডেশন হয়ে ওঠেছে যুক্তরাজ্যের মানুষের অত্যন্ত প্রিয় নাম। আর সেই জেআই ফাউন্ডেশনেরই আরেকটি উদ্যোগ এসএমআর।

বাংলাদেশে এই প্রতিষ্ঠানের একটি কলসেন্টার স্থাপন ও দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য এর মধ্যেই আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের গুরুত্বপূর্ণ রিসোর্স পার্সনদের দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হবে এই কলসেন্টারের কর্মী। মূলত নিঃসঙ্গ, ডিপ্রেশনে থাকা আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষদের নিয়ে এই সংগঠনের কাজ। পর্যায়ক্রমে এর কাজ বাংলাদেশেও চালু হবে বলে জানান জিল্লুর হোসাইন।

জিল্লুর হোসাইন বলেন, এতোদিন ইংল্যান্ড নানাভাবে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে। এবার আমরা চাচ্ছি এখানকার জনশক্তি ব্যবহার করে ইংল্যান্ডের মানুষদের সেবা দিতে। এটা সম্ভব হলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য অনেক বড় একটি অর্জন হবে। শুধু তাই নয়, এখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা যেমন বাংলাদেশের জন্য বড় সম্পাদ হয়ে ওঠতে পারবেন ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই প্রশিক্ষিতদের দেশের বাইরেই রপ্তানি সম্ভব বলে জানান তিনি।

এসএমআর এর মূল উদ্যোক্তা জেআই ফাউন্ডেশন এর কার্যক্রম শুরু করে ২০১২ সালে। এরপর যুক্তরাজ্যের স্কুল ও হাসপাতালগুলোতে নানামুখী সেবা প্রদান শুরু করে এই অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। কল সেন্টার বলতে মেন্টাল সার্ভিসের জন্য ফোন কল করে সুবিধা নেওয়া নাকি অন্য কিছু? এই ব্যাখ্যায় জিল্লুর হোসাইন বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা কমবেশি প্রতিটি মানুষের মধ্যেই থাকে। উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, যদি কারো হাত ভাঙে তাহলে সেটা দেখা যায়। কিন্তু দেহের ভেতরের যে অংশ আক্রান্ত হয়, সেটা দেখানো সম্ভব হয় না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৭৫ শতাংশ মানুষ মেন্টাল হেল্থ নিয়ে সমস্যায় ভোগেন। আপনি যদি তাদের কথার মাধ্যমে ভালো রাখতে পারেন তাহলে তারা শান্ত হবে এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। অবাক করা তথ্য হলো বিশ্বে মাত্র ৪ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যা করছে। এই আত্মহত্যা মেন্টাল হেলথের কারণেই হয়ে থাকে। কেউ যদি মনে করেন হতাশা, অবসাদগ্রস্থ, অসুখী এবং তার পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো আগ্রহ নেই, সেই সব মানুষদের জন্যই এ উদ্যোগ। মানুষ এখন এতো ব্যস্ত যে কারো সাথে কথা বলার সময় নেই। যে মানুষটি হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলো, সে হয়তো কারো সাথে একটু কথা বলতে পারলেই এমন আত্মাহুতির পথ বেছে নিতো না।

আমাদের কল সেন্টার এমন মানুষের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে। আমাদের কর্মীরা জানে, কীভাবে মানুষকে ট্রিট করে বিপদগামী পথ থেকে ফিরিয়ে আনা যাবে। ইংল্যান্ডে আমাদের কোম্পানির সাথে ন্যাশনাল হেল্প লাইন নম্বরের যোগাযোগ আছে। পুলিশের সাথে আছে, হাসপাতালগুলোর সাথে আছে। তারা যদি মনে করে রোগীটা বেশি খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাকে আমাদের কাস্টমার নাম্বারে ফোন করে সমস্যা শেয়ার করতে পারে।

প্রতিষ্ঠানের মূল ফান্ডিং জিল্লুর হোসাইনের পারিবারিক ব্যবসার সিএসআর ফান্ড থেকে এলেও ইংল্যান্ডের বিত্তশালীরা এখন এগিয়ে আসছেন। সবার সহযোগিতা নিয়ে জিল্লুর তাঁর সেবাটি ছড়িয়ে দিতে চান সারা বিশ্বে।

এসএমআরের এই উদ্যোগে বাংলাদেশ কীভাবে উপকৃত হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে জিল্লুর হোসাইন বলেন. যাদের আমরা ট্রেনিং দিচ্ছি, যেমন- নার্সের ট্রেনিং শেষে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে। ইংল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স-সহ অনেক দেশে বাংলাদেশের নার্স কাজের সুযোগ পাচ্ছে। ভবিষ্যতে যদি তাদের নার্সের প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাদের ট্রেনিংপ্রাপ্ত নার্সরা সহজে যোগ দিতে পারবে। নতুন কাউকে কাজে যোগ দিতে অন্তত ছয় মাস সময় লেগে যাবে। আমাদের ট্রেনিংপ্রাপ্তরা সেখানে দ্রুত কর্মসংস্থানে যোগ দিতে পারবে। এক্ষেত্রে ভাষা কোনো অন্তরায় হবে কি না জানতে চাইলে জিল্লুর হোসাইন জানান- প্রথমত ১ মিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি ইংল্যান্ডে বসবাস করে। আমাদের বাংলাদেশি অনেকেই হিন্দি ভাষায় কথা বলতে পারে। যা ভাষাগত সমস্যা দূর করবে সহজেই। ইংলিশরাও এসব ভাষায় আজকাল অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। তাছাড়া আমাদের কলসেন্টারটি মাল্টিল্যাঙ্গুয়াল হবে।

জিল্লুর হোসাইন একজন রেস্তোরা ব্যবসায়ী হিসেবে যুক্তরাজ্যে নিজের স্বকীয় অবস্থান তৈরি করেছেন। ২০২০ সালের রাজ পরিবার কর্তৃক প্রদত্ত এমবিই পুরস্কার রয়েছে তার সংগঠনের। করোনাকালে তার ও তার সংগঠনের কার্যক্রম গোটা যুক্তরাজ্যে প্রশংসিত হয়েছে। করোনা মহামরিকালে দুটি শহরে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষের যাবতীয় ট্রয়লেটিজ আইটেম, পানীয় এবং খাবার অর্থাৎ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য দিয়ে সহায়তা করেছে জাই ফাউন্ডেশন। মূলত এর স্বীকৃতি হিসেবেই ব্রিটেনের রয়েল ফ্যামিলির পক্ষ হতে এমবিই পদক দেয়া হয়েছে তাদের। লন্ডনের যে শিশুরা পড়াশোনার ফি দিতে পারে না, জিল্লুরের সংগঠন তাদের টিউশন ফি পরিশোধ করে। এছাড়া যেসব শিশু স্কুলে লাঞ্চ নিয়ে আসতে পারে না, তাদের খাদ্য সহায়তা করে।

এসএমআরের পাশাপাশি জিল্লুর শুরু করেছেন একাধিক ওইমেন্ এমপাওয়ারম্যান্ট ও পোভার্টি এলিমেশন প্রজেক্ট। যে প্রজেক্টগুলোতে বাংলাদেশি একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত। জিল্লুরের বিশ্বাস ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত আধুনিক বাংলাদেশের যে স্বপ্ন মানুষ দেখছে, তার উদ্যোগগুলো সে স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ঢাকাটাইমস/০৪জানুয়ারি/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

দেশে নতুন করে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা, ঢাকা কতটা ঝুঁকিতে?

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস: জানুন মশাবাহিত এ রোগ প্রতিরোধের উপায়

গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি

ঔষধি গাছ থেকে তিন শতাধিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে ইরানে

কণ্ঠের সব চিকিৎসা দেশেই রয়েছে, বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য 

এপ্রিল থেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম শুরু, মার্চের মধ্যে টিকা নেওয়ার সুপারিশ গবেষকদের

স্বাস্থ্য খাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ভাতা বাড়লো ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

বিএসএমএমইউ বহির্বিভাগ ৪ দিন বন্ধ, খোলা থাকবে ইনডোর ও জরুরি বিভাগ

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :