জীবন বাঁচাতে এসে মৃত্যুর মুখে অতিথি পাখি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ
  প্রকাশিত : ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:০৭
অ- অ+

তুষারপাত ও শৈত্য প্রবাহ থেকে জীবন বাঁচাতে নিজ দেশ ত্যাগী হয়েও মৃত্যুর মুখে পড়তে হচ্ছে অতিথি পাখিদের। এ যেন মরার উপর খারার ঘাঁ। শীত প্রধান দেশ সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তুষারপাত ও শৈত্য প্রবাহ থেকে নিজেদের রক্ষার হাজার হাজার মাইল আকাশ পথ পাড়ি দিয়ে প্রতি বছরেই আসে বাংলাদেশের টাংগুয়ার হাওরও সহ বিভিন্ন হাওরে। কিন্তু এখানে এসেও জীবনের নিরাপত্তা পাচ্ছে না অতিথি পাখিরা। প্রতিদিনেই হাওরের স্থানীয় শিকারিরা পাখি শিকার করে বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছে।

টাংগুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ও ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত বয়ে গেছে।

টাংগুয়ার হাওর ও হানিয়া কলমা হাওর পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দাগণ জানায়, শিকারিরা বিভিন্ন ধরনের কারেন্ট জাল ও ফাঁদ দিয়ে পাখি শিকার করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইননুসারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় হাওর পাড়ের সচেতন মহলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

টাংগুয়ার হাওর পাড়ের কৃষক কামাল মিয়া জানান, বাড়িতে রাতে ঘুমানোর আগে আকাশে পাখিদের উড়ার শো শো শব্দ এখন আর শোনা যায় না। কারণ এবার পাখি কম এসেছে। এর মধ্যেই পাখি শিকার হচ্ছে। আগে বোরো জমির চারা রোপণ করে পাখি পাহারা দিতে হতো, এখন এমন হয় না। পাখি শিকারিরা রাতে বিভিন্ন জাতের পাখি শিকার করে মধ্যনগর কমলাকান্দা নেত্রকোনা ও রাজধানী ঢাকায় বস্তায় ভরে পাচার করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে এক হাজার ৮৫৫ প্রজাতির পাখিই পরিযায়ী। টাংগুয়ার হাওরে প্রায় ২১৯ প্রজাতির পাখির অবস্থান ছিল। এর মধ্যে ৯৮ প্রজাতির পরিযায়ী, ১২১ প্রজাতির দেশি। ২২ প্রজাতির হাঁসজাত পাখির বিচরণ করত। আগত পাখির মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল- বিরল প্রজাতির প্যালাসেস ঈগল, মৌলভীহাঁস, পিয়ারী, কাইম, রামকুড়া, মাথারাঙ্গা, বালিহাঁস, লেঞ্জা, চোখাচোখি, বেগুনি কালেম প্রভৃতি। এখন এসব পাখি নেই বললেই চলে।

এর কারণ হিসেবে তারা জানান, এক শ্রেণির অসাধু পাখি শিকারি ও পাখি ব্যবসায়ীরা নির্বিচারে নিধনের কারণে দিন দিন এই পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এছাড়াও হাওরের নানান প্রজাতির জলাবন, হিজল কড়চ, নলখাগড়া বিলুপ্তি, ইঞ্জিন চালিত মেশিনের শব্দ এবং রাতের আধারে মাছ ধরার জালসহ বিভিন্ন ধরণের ফাঁদ দিয়ে অতিথি পাখি শিকার করাও অন্যতম কারণ।

পরিবেশবিদগণ বলছেন, জীব বৈচিত্র্য রক্ষা করা, পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। না হলে টাংগুয়ার হাওর তার সৌর্ন্দয হারাবে অচিরেই।

টাংগুয়ার হাওরে আগত পর্যটকদের শাহাদাত হোসেন জানান, শীতে কষ্ট সহ্য করে আসলাম পাখি দেখতে টাংগুয়ার হাওরে কিন্তু পাখির দেখা পেলাম না। পাখি অভয়ারণ্যে পাখি সংখ্যা কম।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানান, টাংগুয়ার হাওরে অতিথি পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

(ঢাকাটাইমস/১৫জানুয়ারি/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে কোন পাত্রে পানি পান করা সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর
গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ইসরাইল, স্থায়ী শান্তিতে উদ্যোগী ট্রাম্প
সরকারি অনুদান পাচ্ছে ৩২ চলচ্চিত্র, তালিকা প্রকাশ
ঢাকায় সৌদি আরবের নতুন রাষ্ট্রদূত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা