বাংলাদেশি সাংবাদিকের বই থেকে বলিউডের ‘ফারাজ’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:২৩ | প্রকাশিত : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:০৩

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঘটেছিল এক ভয়ংকর হামলা। বন্দুকধারীদের ওই হামলায় মারা গিয়েছিল বিদেশি নাগরিকসহ ২৮ জন। ওই ঘটনা নিয়ে পরের বছর প্রকাশ পায় দৈনিক বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি নুরুজ্জামান লাবুর লেখা অনুসন্ধানীমূলক বই ‘হোলি আর্টিজান- একটি জার্নালিস্টিক অনুসন্ধান’।

এই বইয়ের পটভূমিকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে বলিউডের ‘ফারাজ’ সিনেমা। সম্প্রতি সিনেমার ট্রেলার প্রকাশ্যে আসলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন লাবু নিজেই।

ঢাকাটাইমস পাঠকদের জন্য লাবুর পোস্টটি হুবুহু তুলে ধরা হলো:

‘২০১৯ সালের কোনো এক দিনের কথা। সিনিয়র সাংবাদিক মোর্শেদ আলী খান ভাই আমার বইটা (হোলি আর্টিজান: একটি জার্নালিস্টিক অনুসন্ধান) খুঁজতেছিলেন। একদিন তার সঙ্গে কথা হলো। বইটা তখন মার্কেট আউট। আমার কাছেও অতিরিক্ত কপি নাই। তবু অনেক কষ্টে একটা বই জোগাড় কইরা তার কাছে পাঠাইলাম।’

‘তারপর মাস ছয়েক পর মোর্শেদ ভাই আমারে ফোন করলেন। বললেন, বইটা চেয়েছিলেন তার বন্ধু, বলিউডের বিখ্যাত প্রযোজক পরিচালক মহেশ ভাট। মহেশ ভাটের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভিশেষ ফিল্মস থেকে আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। আমার মোবাইল নম্বরটা দেবে কি না?

আমি বললাম, দেন ভাই। সমস্যা নাই। তারপর একদিন ভিশেষ ফিল্মস এর দুই কর্মকর্তার সঙ্গে আমার কথা হলো। কথা হলো মহেশ ভাটের ভাই মুকেশ ভাটের মেয়ে সাক্সেনা ভাটের সঙ্গেও।’

‘তাদের ভাষ্য, তারা আমার বইটা সংগ্রহের পর ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন, তারপর পড়ছেন। বইটা যে ইনফরমেটিভ তার প্রশংসাও করলেন। তারা হোলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলা নিয়া একটা মুভি বানাবেন। সেই জন্য আমার বইয়ের ইনফরমেশন ব্যবহারের জন্য একটা চুক্তি করতে চান। বই থেকে ইনফরমেশন নিয়ে তারা তাদের মতো করে সিনেমার স্ক্রিপ্ট করবেন।’

‘আমি দুয়েক দিন চিন্তা-ভাবনা করলাম। তারপর টাকা-পয়সা নিয়ে কথা হলো। আমি বলতে গেলে অল্প পয়সার বিনিময়েই তাদের সঙ্গে একটা চুক্তি করে ফেললাম। ২০২০ সালের সম্ভবত মার্চ মাসে ৩৬ পৃষ্ঠার একটা চুক্তি হলো ভিশেষ ফিল্মস এর সঙ্গে। চুক্তিতে আমি সিগনেচার করে চুক্তিনামা পাঠালাম মুম্বাই। সেখান থেকে মুকেশ ভাট সিগনেচার করে পাঠালেন আমার কাছে। চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, এই সিনেমা বানানোর তথ্য আমি তাদের পাবলিসিটির আগে প্রকাশ করতে পারবো না। এজন্য এতদিন কাছের দুয়েকজনকে বললেও ঘটা করে বলি নাই।’

‘২০২০ সালের করোনা মহামারি শুরু হলে সেই সিনেমা নির্মাণ ও মুক্তি ধীরগতিতে চলছিল। এর মধ্যেই অবশ্য চুক্তি অনুযায়ী পেমেন্ট করে দিছিল তারা। এখানে একটা কথা বলা আবশ্যকীয় যে, কাছের মানুষ, অনেকেই আমারে বলেন, মাত্র তিন লাখ রুপি, এত অল্প টাকায় বইটার চুক্তি করলেন কেন? তাদের আমি বলি, আমার বইয়ের তথ্য নিয়ে তারা চাইলে আমারে না জানিয়েও মুভিটা বানাতে পারতো। অর্থাৎ তারা মুক্ত উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে স্ক্রিপ্ট করতে পারতো। আমাদের দেশে তো এইরকমই হয়। কেউ কাউরে ক্রেডিট দিতে চায় না।’

‘কিন্তু তারা যে সম্মান ও প্রফেশনালিজম দেখিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, এতেই আমি খুশি। টাকা-পয়সা না দিলেও আমি রাজি হইতাম।’

‘সেই ছবিটা মুক্তি পাইতেছে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি। দুপুরে মুম্বাই থেকে ভিশেষ ফিল্মস এর শাহিল হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ দিলেন। ট্রেইলারের লিংক দিলেন। বলিউডের কোনো একটা মুভিতে যে আমার মতো অতি সাধারণ একজন মানুষের সামান্যতম একটু সংযোজন আছে তা ভাইবা পুলকিত হচ্ছি।’

`আরেকটা বিষয়, যখন আমার সঙ্গে চুক্তি হয়, তখন ছবির নাম ঠিক হয়েছিল না। তবে এই মুভিতে যে হোলি আর্টিজানে অন্য সবার মতো নিহত ফারাজকে কেন্দ্রীভূত কইরা তৈরি হবে, সেটা অনুমান করছিলাম। কারণ, ফারাজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভিশেষ ফিল্মস কর্মকর্তাদের একাধিক মিটিংও হইছে, তারাই আমাকে বলছেন। তবে বিনিয়োগ আছে কি না আমি নিশ্চিত না।’

‘যদিও আমার বইয়ে আমি ফারাজকে আলাদা করে হিরোইজমের যে মিথ প্রচার করা হইছে তা নাকচ করে দিয়েছিলাম। কারণ, এর কোনো প্রত্যক্ষদর্শী আমি পাই নাই। কে বলেছিল যে ফারাজকে জঙ্গিরা ছেড়ে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু তার দুই বান্ধবীরে ছেড়ে আসতে চায় নাই? এর কোনো উত্তর নাই। এইটা বানানো গল্প।'

'ভিশেষ ফিল্মস, যদিও পরে তারা প্রযোজনায় অনুভব সিনহাসহ অন্যদের সামনে এনেছেন, তারা ফারাজকে হাইলাইট করে মুভিটা সম্পন্ন করছেন। ফারাজকে হিরো বানিয়েছেন। ছবিটার পরিচালক হানশাল মেহতা।'

`আমি এসবের চেয়ে এক্সাইটেড এজন্য যে, বলিউডের কোনো একটা মুভিতে আমার সামান্যতম অংশগ্রহণ আছে। চুক্তিপত্রে ক্রেডিট লাইনে আমার ও আমার বইটার নাম দেওয়ার কথা উল্লেখ আছে। হয়তো মুভির এন্ড টাইটেলে মাইক্রো সেকেন্ডের জন্য তা দেখা যাইতেও পারে। তাতেই আমি খুশি। অতএব আপনারা আমারে অভিবাদন জানাইতে পারেন।‘

`তবে দুঃখজনক বিষয় হলো- হোলি আর্টিজান বিষয় নিয়া বাংলাদেশে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ভাই একটা মুভি বানিয়েছেন। শনিবারের বিকেল নামে সেই মুভি সরকার অকারণে আটকায়ে রাখছে। অবিলম্বে শনিবারের বিকেলে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানায়া গেলাম।‘

`জগতের সকল প্রাণীর মঙ্গল হোক। সবার জন্য শুভ কামনা।‘

(ঢাকাটাইমস/১৭জানুয়ারি/এলএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিনোদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :