বেশি মনখারাপ হলে ফারদিনের ভিডিও দেখেন বাবা

রুদ্র রাসেল, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৩
অ- অ+

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য পায়নি তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ বা ছায়া তদন্তকারী সংস্থাগুলো। তদন্তকারীদের উদঘাটন করা সর্বশেষ তথ্য বলছে, ‘আত্মহত্যা’ করেছেন ফারদিন। যদিও এখনও আত্মহত্যার হিসাব মেলাতে পারছে না ফারদিনের পরিবার।

অন্যদিকে ‘আত্মহত্যা’ মন থেকে মেনে না নিলেও প্রকাশ্যে এখন আর তা প্রত্যাখ্যান করছেন না ফারদিনের বাবা নুরুদ্দিন রানা। দৃশ্যমান প্রমাণ হাতে পেতে নীরবে চোখের জল ফেলে অপেক্ষা করছেন তিনি। মন খারাপ হলে ফারদিনের বিতর্ক প্রতিযোগিতার ভিডিও ফুটেজগুলো নিজের স্মার্ট ফোনে উল্টেপাল্টে দেখতে থাকেন আপন মনে। ফারদিনের জন্য তার মা ও বাসার অন্য সদস্যদের মনে যে দুখের ছাপ লেগে আছে, তা আরও তীব্র যেন না হয়- সে কারণে বেশি মন খারাপ হলে বাসার কাউকে বুঝতে দেন না তিনি।

নুরুদ্দিন রানা বলেন, ‘অকারণেও রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। পথে কোথাও এসে চেপে রাখা চোখের জল ফেলে দেই নির্জন কোনো জায়গায়। বুকটা একটু হালকা হলে রওনা হই ফারদিনের স্মৃতিময় বুয়েট ক্যাম্পসের দিকে। ফারদিনের সঙ্গে যারা মিশেছে- তাদের দেখলে একটু ভালো লাগে। একপর্যায়ে দিন ফুরিয়ে রাত নেমে এলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানম শঞদি মিনার বা টিএসসির এক কোণে মোবাইলটি নিয়ে বসে পড়েন ফারদিনের বিতর্ক প্রতিযোগিতার ভিডিওগুলো দেখতে। ফারদিনের বাবা ঢাকা টাইমসকে জানান ফারদিনহীন দিন কাটানোর এই দুঃখগাঁথা।

এই প্রতিবেদকও গত ১৫ দিনে একাধিকবার ফারদিনের বাবাকে কোলাহল এড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট এলাকায় ফারদিনের ভিডিও দেখতে দেখেছেন। পরিচিতি কেউ কাছে গেলে, তাকেও দেখান ভিডিও। স্মৃতিচারণ করেন ছেলে ফারদিনের। কখনও কথা বলতে বলতে চোখ বেয়ে কান্না বেরিয়ে আসে। সামলে নেন। চোখ মুছে আবার স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলতে থাকেন ছেলের কথা।

ফারদিনের মৃত্যুর পর গণমাধ্যমে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ফারদিনের বাবার অসংখ্য ছবি, ভিডিও প্রচার-প্রকাশ হওয়ায় সাধারণের কাছেও তিনি পরিচিত মুখ। কেউ দেখলেই তার কাছে জানতে চান ফারদিনের মৃত্যুর সর্বশেষ অবস্থা। ফারদিনের বাবার সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর সময় এ দৃশ্য চোখে পড়েছে একাধিকবার। তবে তিনি বিরক্ত হন না। সামলে নেন সবকিছু। বলেন, ‘ছেলেটিকে মানুষ মৃত্যুর পরে আরও ভালোবেসেছে। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অমর হয়ে রইলো ফারদিন।’

ফারদিনের বাবা বলছেন, ‘খুন’ হওয়ার তথ্য একদিন বেরিয়ে আসবে, বিচার হবে খুনিদের। এ আশা নিয়ে অপেক্ষায় আছি। সত্য একদিন প্রকাশ্যে আসবেই।’

এদিকে ডিবি পুলিশ বলছে, ফারদিনের ভিসেরা রিপোর্টও তাদের হাতে এসেছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে ঢাকা টাইমসকে জানান মামলাটির তদন্ত দেখভালকারী, ডিবি পুলিশের মতিঝিল জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মো. রাজীব আল মাসুদ।

ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের রামপুরা থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (রামপুরা থানা) উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম রেজা ঢাকা টাইমসকে বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মজিবুর রহমান প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। এদিন আদালতে হাজিরা দেন এ মামলায় জামিন পাওয়া আসামি আমাতুল্লাহ বুশরা। আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন দিন ধার্য করেন আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি।

এর আগে ৮ জানুয়ারি ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তার বান্ধবী বুশরার জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

প্রসঙ্গত, নিখোঁজের তিন দিন পর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে গত ৭ নভেম্বর ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। রাজধানীর রামপুরা থেকে নিখোঁজ হন ফারদিন। এরপর তার বাবা রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

ফারদিন নূর পরশ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাবেরও যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন তিনি। তিন ভাইয়ের মধ্যে পরশ সবার বড়। তাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার কুতুবপুর ইউনিয়নের নয়ামাটি এলাকায়। তবে গত দুই বছর ধরে তারা সপরিবারে রাজধানীর ডেমরা থানার শান্তিবাগ কোনাপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন। পরশের বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা একটি ইংরেজি পত্রিকায় দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছেন।

ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনায় ১০ নভেম্বর ভোর ৩টার দিকে বুশরার নাম উল্লেখসহ কয়েকজনকে আসামি করে ফারদিনের বাবা মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই বুশরাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পক্ষ থেকে প্রথমে জানানো হয়, মাদক কিনতে গিয়ে মাদক গ্যাংয়ের হাতে খুন হন ফারদিন। আবার বলা হয়, চনপাড়া বস্তিতে খুন হয়েছেন ফারদিন। একই দাবি করা হয় ছায়াতদন্তকারী সংস্থা র্যা বের পক্ষ থেকেও। গত ১৫ নভেম্বর র্যা ব দাবি করে, ফারদিন হত্যায় জড়িত চনপাড়া বস্তির মাদক গ্যাং রায়হান গ্রুপ। এতে হত্যায় জড়িত থাকা ১০-১২ জনকে শনাক্ত করার কথাও জানানো হয়।

গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়, মাদক কিনতে গিয়েই চনপাড়া বস্তিতে খুন হয়েছেন ফারদিন। খুন করার পর সাদা প্রাইভেটকারে মরদেহ বের করা হয় বস্তি থেকে। পরে ফেলে দেয়া হয় শীতলক্ষ্যা নদীতে। একাধিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হয় এমন সংবাদ। আর এসব সংবাদের সোর্স হিসেবে উল্লেখ করা হয় গোপন সূত্র। পরে অবশ্য ডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, খুন করা হয়নি, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন। একই কথা বলে র্যা বও।

(ঢাকাটাইমস/২৬জানুয়ারি/আরআর/ইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কড়া বার্তা দিতেই ভাঙা হয়েছে ৩টি রিকশা, ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের উদ্যোগ ডিএনসিসির
জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আ.লীগ নিষিদ্ধ জরুরি ছিল: প্রেস সচিব
ভিটামিনের ঘাটতি পূরণে খাবারে ভিন্নতা আনতে হবে
ফরিদপুরে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামি আকাশ গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা