‘গোপনে দেশ ছাড়তে’ তৎপর কাউন্সিলর মাসুম মোল্লা, বিমানবন্দরে পুলিশের চিঠি

রুদ্র রাসেল, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ২২:৩৮ | প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:১৮

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে পরিবহন শ্রমিক ইমরান হোসেন খুনের প্রধান আসামি ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুম আত্মগোপনে রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট।

তবে আওয়ামী লীগ নেতা মাসুম পলাতক অবস্থায়ই জামিনের জন্য বিভিন্নভাবে লবিং করে ব্যর্থ হয়ে গোপনে দেশছাড়ার সুযোগ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এ বিষয়ে তিনি তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তদবির করছেন বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া গ্রেপ্তার এড়াতেও জোর তৎপরতাও চালিয়ে যাচ্ছেন মাসুম মোল্লা।

তবে মাসুম মোল্লার বিদেশে পালানো ঠেকাতে পুলিশের বিশেষ শাখা, বিমানবন্দর কৃর্তপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে। অবৈধ পথে যাতে দেশ ছাড়তে না পারে সে বিষয়েও পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, কাউন্সিলর মাসুমদের গ্রুপটি সিটি টোলের নামে যাত্রাবাড়ীতে চাঁদাবাজি করছিল। তবে কিছুদিন আগে ওইে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তাদের বিরোধীরা। ওই নিয়ন্ত্রণ ফেরাতেই খুন করা হয় মাসুমদের বিরোধী গ্রুপের পক্ষে চাঁদা উত্তোলনকারী ইমরানকে।

এদিকে স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন কাউন্সিলর মাসুম। তিনি আত্মগোপন অবস্থায় দেশের সীমান্ত পার হওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে পালানোর একটি পথ পেতে গোপনে কথাবার্তা চালাচ্ছেন শীর্ষ পর্যায়ে।

তবে তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাসুম মোল্লা যাতে দেশ ছাড়তে না পারেন, সে বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আজহারুল ইসলাম শুক্রবার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ হত্যকাণ্ডে এ পর্যন্ত মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ঘটনার পরপরই ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার মধ্যে ৭ জন এজাহারভুক্ত আসামি। এরপর কাউন্সিলর মাসুমের ভাগ্নি জামাই উজ্জ্বল মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি মামলার এজাহারনামীয় দুই নম্বর আসামি। মাসুম মোল্লাসহ বাকি আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। মাসুম মোল্লা এলাকায় নেই।’ মাসুমের অবসস্থান শনাক্ত হয়েছে কিনা তা তদন্তের স্বার্থে বলতে চাননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এছাড়া মাসুম মোল্লা যাতে বিদেশে পালাতে না পারে- সে জন্য বিমানবন্দরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে ইতোমধ্যেই অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, এ মামলায় গ্রেপ্তারদের আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। আদালত রিমান্ডের বিষয়ে এখনও আদেশ দেননি।

গত সোমবার যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারে গাড়ি থেকে টোলের নামে অবৈধ চাঁদা উত্তোলনকারী পরিবহন শ্রমিক মো. ইমরান (৩৫) খুনের পর থেকেই আড়ালে চলে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাসুম মোল্লা। সেদিন থেকেই তিনি বাসায় ছিলেন না। পরদিন তার বিরুদ্ধে নিহতের স্ত্রী পপি আক্তার যাত্রাবাড়ী থানায় মাসুমসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৪৭ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়েরের পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেও তার অবস্থান সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি।

এ হত্যা মামলা তদন্তকারীদের ধারণা, মাসুম মোল্লা ঢাকায়ই রয়েছেন। তারা বলছেন, ‘প্রযুক্তিগত শক্তি ও ম্যানুয়াল সোর্স ব্যবহার করে মাসুম মোল্লার অবস্থান সনাক্তের চেষ্টা চলছে।’

তবে মাসুম মোল্লাকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়েছে বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে ডিবি পুলিশের সংশ্লিষ্ট জোন, র‌্যাবের স্থানীয় ইউনিট ও থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে মাসুম মোল্লাকে গ্রেপ্তার বা আটকের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলো বলছে, গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন মাসুম মোল্লা।

অন্যদিকে হত্যাকান্ডের পর গ্রেপ্তাররা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে কাউন্সিলর মাসুমের নাম বলেছে।

জিজ্ঞাসবাদ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র ঢাকা টাইমসকে জানায়, গাড়ি থেকে চাঁদা আদায়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে মাসুম মোল্লার নির্দেশে ওই শ্রমিককে খুন করা হয়। এই টোল আদায়ের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতেই হত্যার নির্দেশ দেন মাসুম।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারে ‘সোনার বাংলা বাণিজ্যালয়’ আড়তের ভেতরে পরিবহন শ্রমিক ইমরানসহ কয়েকজনের ওপর হামলা হয়। ইমরান, সিদ্দিক ও শাহাদাতকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে যান হামলাকারীরা। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয়রা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে ইমরানকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পরদিন মঙ্গলবার যাত্রাবাড়ী থানায় কাউন্সিলর মাসুম মোল্লাকে প্রধান আসামী করে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী। মামলার ৪৭ আসামির মধ্যে এজাহারে মাসুম মোল্লা ছাড়াও তার সহযোগি ও ভাগ্নি জামাই আকরামউজ্জামান ওরফে উজ্জল মোল্লা (৩৫), মুস্তাকিম (২৮), শুভ (২৪), মোহাম্মদ আলী (২৭), আরিফ (৩৮), তানজিল মিয়া (২৪), বুলু বাবু (৫০), পলাশ (২৭), জামাল (৩০), রাজিব (২৮), রমজান মোল্লা (৩৭), জাহিন (৪০), দেলা (৩৮), হাসান (২৯), সাগর (২৭), রাজু (২৫), সুমন (২৫), ফয়সাল (২৫), পারভেজ (২৬), সোহেল (২৯), রাজনের (২৫) নাম উল্লেখ রয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. ইমরান (৩৫) পেশায় একজন পিকআপ শ্রমিক। পাশাপাশি তিনি কাঁচাবাজারে টোল আদায়ের কাজ করতেন। কাউন্সিলর মাসুম মোল্লার নির্দেশে ইমরানকে হত্যা করা হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার এলাকায় সিটি টোলের নামে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে ইমরান হোসেন খুন হন। মামলার এজাহারেও চাঁদা তোলার দ্বন্দ্বের জেরে খুনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ইমরান সিটি টোলের নামে নয়, চাঁদা তুলতেন ঢাকা জেলা ট্রাক ট্যাংকলরি কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নামে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার আড়ত এলাকায় সিটি টোলের নামে আকরাম মোল্লার লোকজন আগে চাঁদা তুলতেন। কাউন্সিলর মাসুম এ গ্রুপটির একজন নিয়ন্ত্রক। তবে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে এই চাঁদা তুলছিলেন স্থানীয় আল-আমিনের লোকজন। এ নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব চলছিল।

(ঢাকাটাইমস/২৭জানুয়ারি/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :