আদালতের আদেশ মানছে না পাট অধিদপ্তর, কথা বলতেই রাজি নন ডিজি

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৪৯ | প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৪৭

উচ্চ ফলনশীল পাট, পাটবীজ উৎপাদন ও উন্নত পাটপচন শীর্ষক (উফশী) প্রকল্পের মেয়াদ শেষে কর্মরতদের রাজস্বখাতে স্থানান্তরের কথা উল্লেখ ছিল ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব)। ২০১১ সালে এ প্রকল্পে লোকবল নিয়োগের যে বিজ্ঞাপন পাট অধিদপ্তর পত্রিকায় প্রকাশ করে, সেখানেও প্রকল্প শেষে কর্মরতদের রাজস্বখাতে নিয়মিতকরণ বা আত্তীকরণের কথা বলা হয়েছিল। ২০১২ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া এ প্রকল্প ২০১৭ সালের জুন মাসে সমাপ্ত হওয়ার পর সে কথা রাখেনি পাট অধিদপ্তর।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে ও সংশ্লিষ্ট মামলার কাগজপত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, একপর্যায়ে প্রকল্পে কর্মরত ১৫৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্তীকরণের বিষয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। আদালত ২০১৭ সালের ৩ আগস্ট তাদের চাকরি নিয়মিতকরণের পক্ষে রায় দেন। এরপর পাট অধিদপ্তর আপিল করলে একই বছরের ১৫ মার্চ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ। পরবর্তীতে পাট অধিদপ্তর রিভিউ আবেদন করলে আপিল বিভাগের রায় বহাল রেখে রায় দেন সুপ্রীম কোর্ট। এরপর এই আদেশের আলোকে কয়েক ধাপে এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪ জনকে রাজস্বখাতে স্থানান্তর করলেও এখনও প্রকল্পের ১৩২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এদিকে রাজস্ব খাতে চাকরি আত্তীকরণবঞ্চিতদের মধ্যে ১২৪ জন ৪টি গ্রুপে কন্টেম দাখিল করেন। পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই কন্টেমের জবাব দাখিল করলে কন্টেম কোর্ট তা নাকচ করে পিটিশনারদের (আবেদনকারী) সাত দিনের মধ্যে পাট অধিদপ্তরের রাজস্বখাতে আত্তীকরণের আদেশ দেন।

কিন্তু দীর্ঘদিনেও আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় হাইকোর্ট ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারির মধ্যে পিটিশানারদের চাকরি আত্তীকরণের নির্দেশ দিয়ে একই বছরের ১১ জানুয়ারি রায় দেন। এমনকি আদালতের তরফ থেকে এও বলা হয় যে, পাট অধিদপ্তরে কর্মরতদের সঙ্গে পিটিশনকারীদের কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার তফাৎ নেই।

কিন্তু এ পর্যন্ত আদালতের ওই আদেশ বাস্তবায়ন করেনি পাট অধিদপ্তর। এমনকি হাইকোর্টের রায় ও উফশী প্রকল্পের অভিজ্ঞ কর্মচারীদের পরিবার পরিজনের দুর্দশা ও মানবিক দিক বিবেচনায় রাজস্ব খাতে নিয়মিতকরণ সংক্রান্তে গেল ১৩ ডিসেম্বর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এক পত্র পাঠান পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে। বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধও করা হয় ওই পত্রে। কিন্তু এতেও সুরাহা হয়নি।

সবমিলিয়ে আদালতের রায় ও মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাশ কাটিয়ে রহস্যজনকভাবে উফশী প্রকল্পের কর্মচারীদের রাজস্বখাতে স্থানান্তর আটকে আছে সেই ২০১৭ সাল থেকে।

এ বিষয়ে গতকাল পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সেলিনা আক্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কোনো কথা বলবো না।’

উফশী প্রকল্পের কর্মচারীদের রাজস্বখাতে স্থানান্তর সংক্রান্ত আদালতের আদেশ কেন মানা হচ্ছে না- সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পাট অধিদপপ্তরের এই মহাপরিচালক।

জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আদালতের রায় মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে কাজ চলছে।’

অন্যদিকে, পাঁচ বছর উফশী প্রকল্পে চাকরি করার পর রাজস্বখাতে স্থানান্তর না হতে পেরে পরিবার নিয়ে দুর্দশার মধ্যে দিন কাটানো শহীদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আদালতের রায়ও পাট অধিদপ্তর মানছে না। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। সরকারের কাছে আবেদন, আদালতের রায় বাস্তবায়ন করে চাকরি রাজস্বখাতে আত্তীকরণ করে দুর্দশাগ্রস্থ জীবন থেকে আমাদের পরিবারকে রক্ষার ব্যবস্থা করা হোক।’

ওই প্রকল্পে কর্মরত থাকা সঞ্জয় রাও জানালেন পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপনের কথা। ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তানদের তিনবেলা খাবার যোগাড় করতে পারছি না। কিভাবে যে সংসার চালাচ্ছি তা অবর্ননীয়। সব প্রকাশ করাও যাচ্ছে না লজ্জায়।’

তিনিও চাকরি রাজস্বখাতে দ্রুত স্থানান্তরের দাবি জানান।

বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মো. রুকুনুজ্জামান বলেন, ‘এখানে ৩০/৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান রয়েছে, যারা আদালতের সর্বোচ্চ রায় নিয়েও আইনের সুবিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দপ্তরের কতিপয় ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা নাম শুনে বিভিন্ন কটূক্তি,বিদ্রুপ ও ব্যাঙ্গাত্মক কথা বলেন- যা লজ্জাজনক।’

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, তারা সরকারি সব বিধিবিধান মেনে উফশী প্রকল্পে যোগ দেন। প্রকল্পের ডিপিপিতে মেয়াদ শেষে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের কথা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও স্থানান্তর করা হয়নি। পাট অধিদপ্তরের শূন্যপদ থাকলেও তদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ তাদের।

তারা বলছেন, আত্তীকরণ বঞ্চিত ১৩২ জনের ওপর নির্ভরশীল ১৩২টি পরিবার। ইতোমধ্যেই এসকল কর্মচারীর সরকারি চাকরির বয়সসীমা অতিক্রম করায় সরকারি বা অন্য কোন চাকরিতে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে এই পরিবারগুলো অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। চাকরি অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন তারা।

(ঢাকাটাইমস/০৬ফেব্রুয়ারি/আরআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :