শিশুর মোয়ামোয়া রোগের যেসব লক্ষণে সতর্ক হবেন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৫০ | প্রকাশিত : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৪৫

শিশুরা যে বয়সে আর পাঁচটা শিশু লেখাপড়ায় সিদ্ধহস্ত, তখনও আপনার শিশু ঠিক মতো কথাই বলতে পারে না? এ ক্ষেত্রে শিশুদের নিয়ে একটু সতর্ক হতে হবে। হতে পারে আপনার শিশু মোয়ামোয়া নামে বিরল রোগে আক্রান্ত।

মোয়ামোয়া রোগে আক্রান্ত হলে শিশুরা খেলাধুলা করার সময়, খাবার খাওয়ার পর বা কান্নাকাটি করার পর হঠাৎ শরীরের এক দিক দুর্বল হয়ে যায়। বিশ্রাম নিলে আবার কিছুক্ষণ পর ঠিক হয়ে যায়। যখন রক্তনালি কিছুটা সংকুচিত হয় তখন মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়, দৌড়ঝাঁপ করা, খাওয়া বা কান্না করার সময় মস্তিষ্কে রক্তের চাহিদা বেড়ে গেলে সংকুচিত রক্তনালি যথেষ্ট রক্ত সঞ্চালন করতে পারে না। ফলে শরীরের বিপরীত দিকে দুর্বলতা দেখা দেয়। একে বলে ট্রানজিয়েন্ট হেমিপেরেসিস বা সাময়িক পক্ষাঘাত। রোগটি খুব একটা পরিচিত রোগ না হওয়ায় সাধারণ মানুষ এবং চিকিৎসকেরাও অনেক সময় বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েন।

মোয়ামোয়া মস্তিষ্ক-ধমনীর জটিল জিনগত রোগ৷ জাপানেই মূলত এই রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি৷ জাপানি ভাষায় ‘মোয়ামোয়া’ মানে ধোঁয়ার কুণ্ডলী৷ মস্তিষ্কের ধমনী বিকৃত হয়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলীর চেহারা নেয়, তাই রোগটির এই নামকরণ৷ জিনগত ত্রুটির জন্য মস্তিষ্কের ধমনী দ্রুত সরু হতে থাকে৷ অল্প সময়েই সেই ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে স্ট্রোক হয়৷ ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা চলে যায়। ফলে এক একটি অঙ্গ একটু একটু করে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। রোগাক্রান্ত শিশুরা আংশিক ভাবে পঙ্গু হয়ে পড়ে৷

মোয়ামোয়া রোগে মস্তিষ্কের কোনো একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলের রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে ওই অঞ্চলে যে কাজগুলো থাকে মস্তিষ্ক সেটা আর করতে পারে না। ফলে শরীরের একটা পাশ অবশ হয়ে যেতে পারে, খিঁচুনি হতে পারে, মাথাব্যথা হতে পারে। এ কারণে মৃত্যুও হতে পারে।

মোয়ামোয়া রোগ হল স্ট্রোকের একটি বিরল কারণ, যা প্রধানত শিশুদের ক্ষেত্রে এবং কোন কোন সময়ে বড়দের ক্ষেত্রেও ঘটে থাকে৷ এই রোগটিতে, মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী প্রধান ধমনীটি (ইন্টারনাল ক্যারটিড আর্টারি ) ক্রমাগতভাবে সংকীর্ণ হতে থাকে এবং তার মধ্যে দিয়ে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে স্ট্রোকের কারণ ঘটায়৷

চিকিত্সকদের মতে, শিশুদের ক্ষেত্রে দেরিতে কথা বলা শেখে। যারা স্কুলে যাচ্ছে, তাদের পড়ার সমস্যা, শেখার সমস্যা হয়। আর বড়রা এ রোগে আক্রান্ত হলে মাথায় তীব্র যন্ত্রণা বা মৃগী রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কিছু মনে রাখতে না পারা, কাউকে চিন্তে না পারা, কোনও কিছু পড়তে অসুবিধা হওয়া এই রোগের লক্ষণ হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীরে পঞ্চইন্দ্রিয়ের কাজে তার প্রভাব পড়ে। অস্ত্রোপচার ছাড়া এর কোনও চিকিত্সা নেই। মাথার খুলির (স্কাল) ত্বকের ধমনীর সঙ্গে মস্তিষ্কের ধমনীর সংযোগ করার জটিল সার্জারি ব্রেন বাইপাস সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।

মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী প্রধান ধমনীগুলি হল ইন্টারনাল ক্যারটিড আর্টারি এবং ভার্টিব্রাল আর্টারি৷ মোয়ামোয়া রোগের ক্ষেত্রে, প্রধান ধমনীগুলি মাথার খুলি গহ্বরে প্রবেশ করার পরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ মোয়ামোয়া রোগের ক্ষেত্রে, এই ধমনীগুলি ক্রমাগত সংকীর্ণ হতে থাকে এবং ধমনীগুলির মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷ এই প্রকার ক্রমাগতভাবে সরু হতে থাকার ফলে, মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহের পরিমাণ কমতে থাকে এবং রোগী, ইসকেমিক স্ট্রোক নামক (রক্ত সরবরাহ কম হওয়া ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি) স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়৷ মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কম হওয়ার ক্ষতিপূরণমূলক প্রক্রিয়া হিসাবে, বেস অফ দি ব্রেন অঞ্চলে থাকা ক্ষুদ্র রক্ত ধমনীগুলির আকৃতিতে বড়ো হতে থাকে এবং নতুন ধমনী সৃষ্টি করে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন করার চেষ্টা করে৷

শিশুদের ক্ষেত্রে স্ট্রোক হয় সাধারণত অতিরিক্ত কান্নাকাটি অথবা আধিক পরিশ্রমসাধ্য খেলাধুলার সময়ে অতিরিক্ত শ্বাস প্রশ্বাসের কারণে৷ রোগীদের ট্রানসিএণ্ট ইসকেমিক অ্যাটাক নামেও পরিচিত এই ধরনের মাইনর স্ট্রোকগুলি হয়, যেগুলির থেকে রুগীরা সম্পূর্ণরূপে সেরে ওঠে। কিন্তু মেজর স্ট্রোকগুলি স্থায়ী দুর্বলতা এবং অক্ষমতা সৃষ্টি করে৷ কখনও কখনও, বেস অফ দি ব্রেন অংশটিতে বড়ো হয়ে ওঠা ধমনীগুলি তাদের দ্বারা রক্ত পরিবহনের ক্ষমতার থেকে বেশি বেড়ে উঠে, যার ফলে এগুলি ফেটে গিয়ে, মস্তিষ্কের মধ্যে রক্তক্ষরণের কারণ ঘটায়৷ স্ট্রোকের এই প্রকারটিকে বলা হয় হেমারেজিক স্ট্রোক৷ খুলির পিছনের দিকে থাকা মস্তিষ্কের অংশগুলিতে রক্ত সরবরাহকারী ভার্টিব্রাল আর্টারিয়াল সিস্টেমও কদাচিত একই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে৷

একটি শিশুর ক্ষেত্রে স্ট্রোক হয়েছে জানতে পেরে চিকিৎসক মোয়ামোয়া রোগের সম্ভাবনার বিষয়ে সতর্ক হন৷ প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণভাবে চিকিৎসা করেন একজন ফিজিশিয়ান অথবা নিউরোলজিস্ট৷ ম্যাগনেটিক রেসোন্যান্স ইমেজিং (MRI) স্ক্যান, মস্তিষ্কের মধ্যে হওয়া স্ট্রোকের অঞ্চলগুলিকে শনাক্ত করে, প্রায়শই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ধমনীগুলির সরু হয়ে যাওয়া এবং বিরল ক্ষেত্রগুলিতে মস্তিষ্কের মধ্যে রক্তক্ষরণের ছবি পাওয়া যায়৷ ডিজিটাল সাবট্র্যাকশন অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করে এই রোগ নির্ণয় করা হয়।

বাংলাদেশে মোয়ামোয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। চিকিৎসাও করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট হাসপাতালে মোয়ামোয়া রোগীর সফল বাইপাস অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। অন্যান্য দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের তুলনায় এ সাফল্যের হার অনেক বেশি।

ঢাকাটাইমস/০৭ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :