৫২ বছর পর শ্রদ্ধাঞ্জলি পাচ্ছে সিলেটের ‘শহীদস্মৃতি উদ্যান’

এনামুল কবির, সিলেট
  প্রকাশিত : ২৬ মার্চ ২০২৩, ১০:২৩| আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩, ১৭:৪৭
অ- অ+

গল্পটা ৫২ বছর আগের। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ঘটে যাওয়া অসংখ্য মানবতা বিরোধী ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে এই বধ্যভূমি। মুক্তিযোদ্ধা, তাদের স্বজন এবং মুক্তিযুদ্ধের অনেক সংগঠককে ধরে এনে হত্যার পর এই বধ্যভূমিতে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর আড়ালে থাকা এই বধ্যভূমিতে কেউ কখনো শ্রদ্ধাও নিবেদন করেনি। তবে এবার তা করা হবে।

স্বাধীনতার ৫২ বছর পর সিলেট ক্যাডেট কলেজের পূর্ব পাশে অবস্থিত এ বধ্যভূমি এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। শ্রদ্ধা নিবেদনের মতো পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে এখানে। এখন এটি আর কেবলই এক বধ্যভূমি নয়, উদ্যানও। শহীদ স্মৃতি উদ্যান। যদিও এখনো তার কাজ শতভাগ শেষ হয়নি, তবে দ্রুত এগুচ্ছে।

এই বধ্যভূমির পাশের বর্তমান ক্যাডেট কলেজে একাত্তরে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। সেই ক্যাম্পে সিলেট মহানগরী থেকে শুরু করে আশপাশ এলাকার মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির লোকজনকে ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। তারপর তাদের হত্যা করে মাটিচাপা দেয়া হতো এখানে। এমনকি অনেক অসহায় নারীকেও ধরে এনে এখানে নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের ইজ্জত লুন্টনের পর মাটিচাপা দেয়া হয়েছে এখানেই।

এই ক্যাম্পে নির্যাতনের ইতিহাস এতই ভয়ঙ্কর যে, সিলেটের মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) আব্দুস সালাম বীর প্রতিকের ভাষায়, বর্তমান বিশ্বের কুখ্যাত মার্কিন নির্যাতন ক্যাম্প গুয়ানতানামো বে’র মতই ছিল এই ক্যাম্প।

একাত্তরে বিজয়ের পর বছরের পর বছর কেটেছে, কেটেছে দশকের পর দশক, কিন্তু এই বধ্যভূমিটি সিলেটের আপামর জনসাধারণের অগোচরেই থেকে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ কেউ বা সচেতন মহলের কেউ কেউ জানলেও জানতেন না সিলেটের নিরানব্বই দশমিক নয় নয় ভাগ মানুষ। তবে ২০০৭ সালে ক্যাডেট কলেজ কর্তৃপক্ষ পুরো জায়গাটি চিহ্নিত করে। এরপরও ১৩ বছর পর ২০২০ সালে গণপূর্ত বিভাগ বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শুরু করে যা বর্তমানে শেষের দিকে।

তবে এরই মধ্যে সিলেটের দুই মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ মিলে এই বধ্যভূমিকে একটি শহীদস্মৃতি উদ্যানে রূপান্তরের কাজ শুরু করেন। তারা সেনাপ্রধান ও এরিয়া কমান্ডারের সহযোগীতা নিয়ে কাজ শুরু করেন।

প্রথম ধাপে তারা এখানে মাটিচাপা দেয়া ৬৬ জন শহীদের নাম ঠিকানা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। শ্বেতপাথরে তাদের নাম খোদাই করা হয়েছে। প্রক্রিয়াটি চলমান। যখন যাদের নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে, তা এখানে লিপিবদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন শহীদস্মৃতি উদ্যানের উদ্যোক্তারা। শহীদস্মৃতি উদ্যানের উদ্যোক্তাদের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বীরপ্রতীক জানান, এই উদ্যান হবে পর্যটক বান্ধব। এখানে থাকবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক জাদুঘর, লাইব্রেরি ইত্যাদি।

তিনি আরও জানান, তার পরিবার এবং শহীদ ডা. শামসুদ্দিনের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জিয়া উদ্দিন আহমদের পরিবার এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে অর্থসংগ্রহ করে তারা কাজটি করছেন। প্রাথমিক কাজ শেষে গত ৪ মার্চ এই শহীদস্মৃতি উদ্যানের যাত্রা শুরু হয়।

আগে কখনো কোন জাতীয় দিবসে এই বধ্যভূমিতে কেউ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেনি। অন্তত আনুষ্ঠানিকভাবেতো নয়-ই।

তবে এবার স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ সারাদিন মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সন্তান ও অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক- সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক সংগঠন এবং স্কুল, কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৬মার্চ/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিকাশ-এ রেমিটেন্স গ্রহণ করে হাইসেন্স ফ্রিজ-টিভি জিতলেন ২২ জন
টাঙ্গাইলে যুবদলের বিক্ষোভ
গোপালগঞ্জে কারফিউয়ের সময় বাড়ল
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে যুবদলের বিক্ষোভ 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা