সম্পর্কে টানাপড়েন দেখছে না বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ মে ২০২৩, ০৮:৩২ | প্রকাশিত : ২২ মে ২০২৩, ০৮:১৭

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সেই থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে। সরকারও লবিস্ট নিয়োগের পাশপাশি বিভিন্নভাবে ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রচেষ্টা চালায়। সেই চেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপিসহ একাধিক মহল থেকে ফের নিষেধাজ্ঞা আসার যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, তা উড়িয়ে দিয়েছেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী। বলেছেন, নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আসছে না।

গতকাল ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন গণমাধ্যমের কাছে। তারা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।’

এদিকে নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকেই বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এ বিষয়ে সরকারকে দায়ী করে আসছেন। ফের নিষেধাজ্ঞা এলে তা দেশের জন্য ভয়ংকর হবে বলেও মন্তব্য করেছেন বিএনপির নেতারা। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দলটির নেতারা ফের নিষেধাজ্ঞা আসার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছেন। যদিও সেই পরিস্থিতি সরকার কাটিয়ে উঠেছে বলে ইতোমধ্যেই সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে আভাস দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন>>বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন: নাগরিকদের সতর্ক চলাফেরার পরামর্শ যুক্তরাষ্ট্রের

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশ থেকে আমরা কিছু কিনব না।’

এরপর গত সপ্তাহে ত্রিদেশীয় সফর শেষে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনেও এ প্রসঙ্গে একই কথা বলেছেন। তিনি এও বলেছেন, ‘নিষেধাজ্ঞার ভয়ে আমরা বসে থাকব না। নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভয়ের কারণ নেই।’

প্রধানমন্ত্রীর ওই সংবাদ সম্মেলনের পর নতুন নিষেধাজ্ঞা আসার আশঙ্কা প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপির নেতারা।

তবে ক্ষমতাসীন দলের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার পেছনে বিএনপি। তারা লবিস্ট নিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্রকে ভুল বুঝিয়ে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়েছে। অথচ, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে শাখাটি সবচেয়ে তৎপর ও সফলতা দেখাচ্ছে, সেই র‌্যাবের ওপরই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। একইসঙ্গে দোষারোপ করা হচ্ছে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর ওই সংবাদ সম্মেলনের পরদিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েক দেশের রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় সরকার। এরপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আসার বিষয়ে আলোচনা আরও জোরালো হয়, যা নিয়ে কয়েকদিন ধরে বিএনপি নেতারা নানা কথা বলে চলছেন।

তবে বসে নেই সরকারও। বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের এসব বক্তব্যের পাল্টা বক্তব্যও দিচ্ছেন তারা। গতকাল পৃথক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে কথা বলেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে আর নিষেধাজ্ঞা দেবে না: কৃষিমন্ত্রী

গতকাল সকালে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আশা করি যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে আর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেবে না।’

মন্ত্রী বলেন, ‘নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কোনো কারণ দেখছি না। আমার ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে আর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না। তারা বাস্তবতা বুঝবে এবং একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সহযোগিতা দেবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ কোনোদিনই আমরা কামনা করি না ও সহজভাবে নিতে পারি না। দেশে একটি নির্বাচিত সরকার রয়েছে। আর ৬ মাস পর আরেকটি নির্বাচন হবে। সংবিধান অনুযায়ীই সেই নির্বাচন হবে।

মিশরের উদাহরণ টেনে মন্ত্রী বলেন, ‘মিশরে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসার ৬ মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সেদেশকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে।’

নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় লাভ হয় না: তথ্যমন্ত্রী

গতকাল সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোনো লাভ হয় না।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্যাংশনস-পাল্টা স্যাংশনস, এগুলো দিয়ে কোনো লাভ হয় না। তা এরই মধ্যে প্রমাণিত। কয়েক দশক ধরে ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেকেই স্যাংশন দিয়ে রেখেছে। কই ইরানের সরকার তো পড়ে যায়নি। ইরানের সরকার বহাল তবিয়তে আছে। তারপর কিউবার বিরুদ্ধে স্যাংশনস ছিল বহু বছর। কিউবাকে টলাতেও পারেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক মাইল দূরেই তো কিউবা। কিউবার সরকার পরিবর্তনও হয়নি।’

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। গত ৫১ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়তা করে আসছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে তারা ট্রেনিংসহ নানান সহায়তা দিয়ে আসছেন। সেই সহায়তা অব্যাহতও আছে। আমরা যেটা মনে করি, যারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী আছেন, তাদের সহযোগিতায়ই বাংলাদেশ আজকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের প্রচণ্ড প্রোফাউন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টনার।’

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে বহু স্যাংশনস। মিয়ানমারেও তো সরকার পরিবর্তন হয়নি। রাশিয়ার বিরুদ্ধেও বহু স্যাংশনস। সেই স্যাংশনস অমান্য করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তাদের (রাশিয়া) কাছ থেকে আমদানি করছে। ভারতও করছে, অনেকেই করছে। এগুলো (নিষেধাজ্ঞা) দিয়ে খুব একটা লাভ হয় না।’

যা জানালেন ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে ‘বিস্তৃত ও গভীর’ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং এ সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে চায় বলে গতকাল গণমাধ্যমকে বলেছেন ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক কর্মকর্তা।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে বিস্তৃত ও গভীর সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যা আমরা আরও এগিয়ে নিতে চাই।’

সম্প্রতি একটি মহল থেকে নতুন নিষেধাজ্ঞা আসার শঙ্কা ছড়িয়ে দেওয়া শুরু হয়। বাংলাদেশের ওপর আরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসছে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। মানবাধিকার ইস্যু ছাড়াও গণতন্ত্র খর্ব, রাজনৈতিক নিপীড়ন, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে জড়িত সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ওপর চলতি মাসেই নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা ছড়ানো হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র‌্যাব ও এর কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসে। সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে জানানো হয়, র‌্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়। র‌্যাবের জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অবদানের বিষয়েও জানানো হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। তবুও গত দেড় বছরে র‌্যাব ও এর কর্মকর্তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।

(ঢাকাটাইমস/২২মে/আরআর/আরকেএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :