কেঁচো সারে ভাগ্য বদল আসাবুলের

নেই প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা, পার হয়নি স্কুলের গন্ডি। হারিকেনের টিমটিমে আলোয় নিজের নামটুকু শুধু লেখা শিখেছেন মাত্র। দরিদ্রের কষাঘাতে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিটি আজ নিজেই একজন উদ্যোক্তা।
চুয়াডাঙ্গায় ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারে ভাগ্য বদলে গেছে আসাবুল হক নামের ওই উদ্যোক্তার। অনেকটা শূন্য থেকে শুরু করে তার পুঁজি আজ কোটি টাকার বেশি। নিজের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি কর্মসংস্থান হয়েছে শতাধিক মানুষের। একই সঙ্গে কৃষি জমির স্বাস্থ্য সুরক্ষাও হচ্ছে তার মাধ্যমে। তিনি আগ্রহী বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য সার্বিক সহযোতিার আশ্বাস দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে উৎসাহিত করছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের পিতম্বরপুর গ্রামের আবুবক্কর ও লতিফুন নেছার বড় ছেলে আসাবুল হক। এক সময় তিনি চা-দোকানি ছিলেন। স্ত্রী সাহানাজ পারভীন, চার ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তাদের সংসার। পরিবারের সবাইকে নিয়ে অভাব-অনটনে তাদের দিন কাটতো। ভাগ্য বদলের আশায় শুরু করেন গাড়ল পালন। এতে কিছুটা স্বচ্ছলতা আসে। তার মতো নিম্ন আয়ের মানুষ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। সেই থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আসাবুল হককে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি বাড়ি একটি খামার কুষ্টিয়া থেকে ২০১৪ সালে ৭ দিনের প্রশিক্ষণ নেন আসাবুল হক। প্রশিক্ষণ শেষে সেখান থেকে ২০১৫ সালে ৭ হাজার টাকা লোন তুলে ৫টা রিং কিনে নিজ বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারের প্রকল্প শুরু করেন তিনি।
পরবর্তীতে বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান আসাবুল হকের পাশে দাঁড়ায়, তাকে লোন দেন। বিশেষ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশা এনজিও প্রতিষ্ঠান আসাবুল হককে বেশি সহযোগীতা করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গেছেন। তাকে বিভিন্ন সময় আর্থিকভাবে সহযোগীতা করেছে। খামারটি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আশা এনজিও প্রতিষ্ঠান থেকে কারিগরি সহায়তা ও তিন লাখ টাকা ঋণ সহযোগীতার মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করেন।
আশাবুল হক বলেন, কঠোর পরিশ্রমে ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছে। নিজের ভাগ্য বদলের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় দরিদ্র নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের ৭টি স্থানে শুরু করেছেন ভার্মি কম্পোস্টের উৎপাদন। সাথে আছে জৈব সার, রেডিমিক্স সয়েল, কোকোডাস্ট, হাড়ের কুচি, শিঙকুচি, নিম খৈলসহ কৃষি জমির নানা উপকরণ।
আসাবুলের ভার্মি কম্পোস্ট প্রজেক্টে কাজ করছে শতাধিক মানুষ। বর্তমানে আসাবুলের ‘কৃষি খামার’ নামের ভার্মি কম্পোস্টের চাহিদা দেশব্যাপী। অনলাইন ও অফলাইনে চলছে বিক্রি।
আসাবুল হক আরও বলেন, সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে অন্তত দুই লাখ টাকা আয় করছেন তিনি। যেকোনো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ভার্মি কম্পোস্ট এবং জৈব সার উৎপাদনে আসতে চাইলে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
খুবই কষ্টের সাথে তিনি বলেন, দেশের নামকরা অনেক প্রতিষ্ঠান আমার কাছ থেকে কেঁচো সার কিনে তাদের প্যাকেটে বাজারজাত করে তারা লাভবান হচ্ছেন। আজ পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগীতা পাইনি। ২০১৯ সাল থেকে বহু চেষ্টা করেও আজ পর্যন্ত নিজের প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স করতে পারিনি। অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। লাইসেন্স পেলে আমার এই কেঁচো সার দেশব্যাপী প্রসার লাভ করবে। এতে দেশের কৃষিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন।
‘কৃষি খামার’ ভার্মি কম্পোস্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার রিয়াজ হোসেন বলেন, বর্তমানে তাদের সারের চাহিদা উৎপাদনের তুলনায় অনেক বেশি। এ কারণে তারা নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করছেন। যাতে নতুন উদ্যোক্তাদের সারও তারা নিজেদের ক্রেতাদের মাঝে সরবরাহ করতে পারেন।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি নির্ভর হলেও এ জেলার মাটিতে জৈব পদার্থ আছে মাত্র ১-২ শতাংশ। যার প্রয়োজন অন্তত ৫ শতাংশ। যে কারণে জেলার কৃষি জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করতে ভার্মি কম্পোস্ট এবং জৈব সারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আসাবুল হক চুয়াডাঙ্গার কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
(ঢাকাটাইমস/২৯মে/এসএ)

মন্তব্য করুন