দ্রুত ওজন কমাতে ছেড়েছেন ব্রেকফাস্ট? কত বড় ভুল করছেন জানুন

শরীরে বাড়তি ওজন থাকলে তা কমাতেই হবে। এক্ষেত্রে বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। তবে ওজন কমাতে অনেকেই খাওয়াদাওয়া লাটে তুলে দেন। বিশেষ করে চর্বির বহর কমাতে সকালের নাস্তা ছেড়ে দেয়ার ধূম লাগে। এতেই নাকি ওজন কমে হু হু করে।
তবে মুশকিল হলো, এহেন দাবির সপক্ষে তেমন কোনো জোরালো যুক্তি কারও কাছেই নেই। হয়তো সামাজিক মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি লিখলেন, ব্রেকফাস্ট না করেই ৩০ দিনে তার ওজন ২ কেজি কমেছে। সেই লেখা পড়েই অন্যরাও সকালের নাস্তা খাওয়া বন্ধ করে দিলেন।
কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কতটুকু সঠিক? পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে অনেক ভুল তথ্য হাতের সামনে এসে উপস্থিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সে সব তথ্যের মধ্যে থেকে খাঁটি জিনিসটা বেছে নিতে হবে। নইলে মহা ফাঁসা ফাঁসবেন।
ব্রেকফাস্ট ছাড়ার মতো মহা ভুল নয়
পুষ্টিবিদদের কথায়, ব্রেকফাস্ট হলো সকালের প্রথম খাবার। এই খাবারটির মাধ্যমেই আমরা সারাদিন চলার রসদ পাই। তাই এই খাবার কোনোভাবেই বাদ দেয়া যাবে না। তাই যারা ওজন কমাতে ব্রেকফাস্ট করা ছেড়েছেন, তারা বিরাট ভুল করছেন।
যদি ধরে নেয়া যায়, সারাদিনে একজন ব্যক্তির ১৬০০ ক্যালোরি প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে ৩০০ থেকে ৩৫০ ক্যালোরি ব্রেকফাস্টের মাধ্যমেই গ্রহণ করতে হবে। তবেই শরীর সুস্থ থাকবে। নইলে একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন-
গ্যাস, অ্যাসিডিটি চেপে ধরে
খাদ্য হজমের জন্য আমাদের পাকস্থলীতে বাইল জুস ও হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড নির্গত হয়। এবার ব্রেকফাস্ট না খেলে পেট দীর্ঘক্ষণ খালি থাকে। এই কারণে এই অ্যাসিডগুলো অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে উঠে পেটেরই ক্ষতি করে।
এক্ষেত্রে গ্যাস, অ্যাসিডিটির আশঙ্কা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সকালে উপোস করার কারণে স্টমাক আলসার পর্যন্ত হতে পারে। তাই সকাল-সকাল পেট পুরে খেয়ে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
‘ওজন’ কমার চান্স নেই
পুষ্টিবিদদের কথায়, ব্রেকফাস্ট ছাড়লে যে ওজন কমে, এটা একটা মিথ। আসলে সকালে না খেলে দেহের বেসাল মেটাবলিক রেট স্লথ হয়ে যায়। আর বিপাক ক্রিয়া ধীর হয়ে গেলে ওজন কমতে চায় না।
তাই যারা ভাবছেন, ব্রেকফাস্ট না করেই ওজন কমিয়ে ফেলবেন, তারা বিরাট ফাঁদে পা দিচ্ছেন। বরং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ব্রেকফাস্ট করেই ওজন কমানোর চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ডায়েট চার্ট মেনে চলুন।
ডায়াবেটিস, হাই প্রেশারে ভুলেও ব্রেকফাস্ট বাতিল নয়
শেষ কয়েক দশকে বিপাকীয় নানা অসুখে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস, হাই প্রেশারের মতো একাধিক অসুখ পিছু নিচ্ছে। এবার এই ধরনের মেটাবলিক ডিজিজে কিন্তু সকালে উপোস করে থাকা যাবে না।
কারণ এই রোগীরা যেই ধরনের ওষুধ খান, তার অধিকাংশই ব্রেকফাস্টের আগে পরে খেতে হয়। তাই ব্রেকফাস্ট ছেড়ে দেয়ার ভুল একদমই করবেন না। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকক্ষণ কিছু না খেয়ে থাকলে সুগার বাড়ে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা অবশ্যই উপোস করার আগে সাবধান হন।
পারফেক্ট মিল প্ল্যান করুন
এক্ষেত্রে সকালের খাবারে রুটি, ডাল, ওটসের মতো দানাশস্য রাখতে পারেন। এই ধরনের খাবারে ফাইবারের পরিমাণ থাকে বেশি। এছাড়া শাক, সবজির একটা পদ খান। এতে মিটবে ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা।
প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে ডিম, ছানার মধ্যে কিছু একটা খান। এই কম্বিনেশনে ওজনও কমবে, আর শরীরও থাকবে সুস্থ। তবে কোনো ডায়েট প্ল্যান মেনে চলার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এতেই সুস্থ থাকতে পারবেন।
(ঢাকাটাইমস/৩০মে/এজে)

মন্তব্য করুন