মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের যন্ত্রাংশ মিলল ভাঙারির দোকানে, তিন দিনেও মামলা হয়নি

চাঁদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২৩, ১২:১৮

চাঁদপুরে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের নদী কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ড. মো. আমিরুল ইসলামের দপ্তরের গোডাউন থেকে আনুমানিক ৪ টন ওজনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পাচারের অভিযোগ উঠেছে।

গত রবিবার দুপুরে শহরের পুরানবাজার কলেজ রোডস্থ লিটন গাজীর ভাঙারির দোকান থেকে এসব যন্ত্রাংশ পুলিশ জব্দ করলে এ অভিযোগ উঠে। এছাড়া এ ঘটনার তিন দিন পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো মামলা করেনি।

এদিকে ভাঙারি দোকানের মালিক মো. লিটন গাজী ও মো. আরিফুর রহমান নামে দুজনকে ছায়া আটক দেখিয়ে ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ।

অপরদিকে এ ঘটনার পর কেন্দ্র প্রধান ড. মো. আমিরুল ইসলামের নির্দেশে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে আছেন- বৈজ্ঞানিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ড. আশ্রাফুর রহমান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান ও আবু কাউছার।

এ তদন্ত কমিটি গত তিন দিনেও এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে পারেনি। বরং তারা এর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রক্ষার জন্য ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে জানান, ময়মনসিংহের ঊধর্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে ভুয়া নিলাম দেখানো কাগজপত্র সৃষ্টি করে পুলিশকে বুঝিয়ে দিয়ে মালামাল ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অফিসের কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, ভাঙারি দোকানের আরিফ ও লিটন দীর্ঘদিন অবৈধভাবে চোরাই মালামাল ক্রয় ও বিক্রি করে যাচ্ছেন। এ অফিসের ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট মো. নূরুজ্জামান, হেচারী বিভাগের এলএলএম (পিয়ন) সামছুল আলম মানিকসহ কয়েকজন মিলে গত ২৮মে গোপনে শহরের কয়েকজন ভাঙারি দোকানদারকে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্রে আনেন। সেখানে দর কষাকষির মাধ্যমে ১ লাখ ৭ হাজার টাকায় অবৈধভাবে এসব যন্ত্রাংশ বিক্রি করা হয়।

এ বিষয়ে ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট মো. নূরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ঘটনার দিন আমি চাঁদপুরেই ছিলাম না। আমি সিলেটে ছিলাম। চাঁদপুর এসে এসব জানতে পেরেছি। তবে বিষয়টি একটু ভুলের কারণে হয়েছে। আমার ঊধর্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন।

হেচারী বিভাগের এলএলএম (পিয়ন) সামছুল আলম মানিকের মেয়ের জামাতা আব্দুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমি বিভিন্ন স্থান থেকে পুরাতন রড ক্রয় করে চাক্কি বানাই। ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট মো. নূরুজ্জামানের অনুরোধে আমি কয়েকজন ভাঙারি ব্যবসায়ীকে গত রবিবার (২৮মে) দুপুর আড়াইটায় মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্রে আনি। সেখানে তারা নূরুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইলে দর-কষাকষির মাধ্যমে ১ লাখ ৭ হাজার টাকায় পুরান বাজারের ভাঙারি দোকানদার লিটনের কাছে এসব মালামাল বিক্রি করেন।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের নদী কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ড. মো. আমিরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের এখানে যেসব পুরাতন মালামাল রয়েছে, তার তালিকা আমরা আমাদের প্রধান কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি। সে অনুযায়ী কমিটি গঠন করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর তা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হবে।

তবে যে যন্ত্রাংশ পুলিশ জব্দ করেছে, সে মালামালের নিলামের কাগজ সংগ্রহ করে করে পুলিশকে দেব বলেছি। আমাদের একটু সময় দিন, দেখেন আমরা কি করি।

তদন্ত কমিটির প্রধান বৈজ্ঞানিক ঊর্ধ্বতন কর্মকতা ড. আশ্রাফুর রহমান ঢাকা টাইমসকে জানান, এ বিষয়টি নিয়ে কমিটি তদন্ত করে যাচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে এ অফিসের অনেকে আছে। আমরা চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ সাহেবের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি। বিষয়টি শেষ করার চেষ্টা চলছে। আমরা নিলামের কাগজ দেব বলেছি।

চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ ঢাকা টাইমসকে জানান, মালামাল জব্দ করে ঘটনাস্থল থেকে চাঁদপুর মডেল থানায় এনে রাখা হয়েছে। তারা টেন্ডার প্রক্রিয়ার কী কাগজপত্র আছে, তা দেখাবে বলেছে। কিন্তু এখনো তা দেখাতে পারেনি।

আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের তিন আরোহী নিহত

তিনি জানান, মঙ্গলবার (৩০মে) চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ড. মো. আমিরুল ইসলাম বলেছেন; তারা কাগজপত্র দেবেন। তা না হলে বিয়য়টি তদন্ত করে দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/৩১মে/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :