লিচুর প্রলোভনে শিশু ধর্ষণ
‘ভণ্ডপীর’ ইকবালের আস্তানায় চলত অবৈধ কার্যকলাপ, পড়তে পারেন না আরবি
কুমিল্লার দেবিদ্বারে লিচু দেয়ার প্রলোভনে সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত কথিত পীর মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন শাহ সুন্নি আল কাদেরী ওরফে মাওলানা প্রফেসর মো. ইকবাল হোসাইন শুদ্ধভাবে আরবিই পড়তে পারেন না। নিজের ধর্মীয় বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পর্যন্ত নেই তার। স্বনামধন্য একটি দরবার শরীফের অনুসারী ও প্রতিনিধি হিসেবে নিজ বাড়িতে একটি আস্তানা গড়ে তুলেছিলেন। রাজধানীর মিরপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানতে পেরেছে র্যাব।
সোমবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ২ জুন কুমিল্লার দেবিদ্বারে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১ এর যৌথ অভিযানে গত রাতে রাজধানীর মিরপুরে অভিযান পরিচালনা করে ধর্ষক ভণ্ডপীর মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন শাহ সুন্নি আল কাদেরী ওরফে মাওলানা প্রফেসর মো. ইকবাল হোসাইনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘটনার দিন ভুক্তভোগী শিশুটি ইকবালের বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গেলে তিনি লিচু দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার আস্তানায় ডেকে নিয়ে যান। এরপর কৌশলে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে শিশুটি সেখান থেকে পালিয়ে বাড়িতে এলে তার মা তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ইকবাল এবং তার অনুসারীরা ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ভুক্তভোগীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখান। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে নিজ আস্তানা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান ইকবাল।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ইকবাল কুমিল্লার চান্দিনা এলাকার তথাকথিত একজন পীরের মুরিদ এবং স্বনামধন্য একটি দরবার শরীফের অনুসারী ও প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে দাবি করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ তার বাড়িতে একটি আস্তানা গড়ে তোলেন। তার ধর্মীয় বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় তিনি শুদ্ধভাবে আরবি পড়তে পারতেন না। বিধায় বিভিন্ন ইসলামিক বই পড়ে ও মোবাইলে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল শুনে কিছু ধর্মীয় বিষয় মুখস্থ করে সপ্তাহে একদিন তার আস্তানায় জমজমাট আসর বসিয়ে ধর্মীয় বিষয়ে বক্তব্য দিতেন। নিজ আস্তানার বাইরেও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতেন। তার আস্তানায় আগত লোকজন মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপ করত বলে জানা যায়। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইকবাল নিজের এবং তার আস্তানার বিভিন্ন আইডি ও পেজ খুলে আস্তানার প্রচার-প্রচারণা করে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতেন। কয়েকবার অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হলে স্থানীয়রা তাকে হাতেনাতে ধরেন। তার অন্ধ ভক্তরা তাকে হাদিয়াস্বরূপ টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার ও গবাদিপশু প্রদান করতো; যা নিজের ও নিজের আস্তানার জন্য ব্যয় করতেন বলে জানা যায়।'
র্যাব জানায়, ইকবাল কুমিল্লার একটি স্থানীয় কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে বিভিন্ন কলেজে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকতা করতেন এবং স্থানীয় লোকজন তাকে প্রফেসর বলে ডাকতেন। একপর্যায়ে স্থায়ী কোনো চাকরি না পেয়ে সহজে টাকা উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে স্থানীয় জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে কথিত পীর হিসেবে দাবি করেন। পরবর্তীতে বেশভূষা ও চলাফেরায় পরিবর্তন এনে পীরের লেবাস ধারণ করে নামের শেষে শাহ সুন্নি আল কাদেরী উপাধি যুক্ত করেন। ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে এলাকার স্থানীয় লোকদের অন্ধ বিশ্বাসকে পুঁজি করে দীর্ঘদিন যাবত প্রতারণা করে আসছিলেন।
শিশু ধর্ষণের পর পালিয়ে যান:
ঘটনার পর ইকবাল পালিয়ে প্রথমে কক্সবাজার এবং পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জে আত্মগোপন করেন। সর্বশেষ রাজধানীর মিরপুরে তার এক পরিচিতের বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।
(ঢাকাটাইমস/১৯জুন/এসএস/ইএস)