প্রিগোজিন কী বেঁচে আছেন?

সাইখ আল তমাল, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৩ জুলাই ২০২৩, ১৯:২৬

আলোচিত এবং সমালোচিত রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন কি সশস্ত্র বিদ্রোহের পর বেঁচে আছেন? বেঁচে থাকলে তিনি এখন কোথায়? এ নিয়ে রহস্য রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন তিনি সম্ভবত মারা গেছেন আবার কেউ বলছেন তিনি যদি মারা যেতেন তাহলে প্রেসিডেন্ট পুতিন তা গোপন রাখতেন না।

প্রিগোজিনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য কিংবা প্রমাণ বিদ্রোহের পর থেকে পাওয়া যায়নি। বিদ্রোহের পর বেলারুশে নির্বাসনে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু দেশটির প্রেসিডেন্ট এবং পুতিনের পরিক্ষীত, ঘনিষ্ঠ মিত্র লুকাশেঙ্কো বলেছেন প্রিগোজিন বেলারুশে যাননি। সম্প্রতি প্রিগোজিন এবং পুতিনের বৈঠকের খবর আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এর কোনো সত্যতা এখনো মেলেনি। আদৌ কি পুতিনের সঙ্গে প্রিগোজিনের বৈঠক হয়েছে এই প্রশ্ন আসার আগে নিশ্চিত হওয়া জরুরি প্রিগোজিন কি আদৌ বেঁচে আছেন?

একজন প্রাক্তন সিনিয়র মার্কিন সামরিক নেতার মতে, প্রিগোজিন সম্ভবত হয় মারা গেছেন বা কারাগারে রয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার বহুল প্রচারিত বৈঠকের খবর সম্ভবত ভুয়া।

অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন জেনারেল রবার্ট আব্রামস পূর্বে ইউএস ফোর্সেস কোরিয়ার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি গত মাসে ওয়াগনার গ্রুপের স্বল্পস্থায়ী সশস্ত্র বিদ্রোহের পর প্রিগোজিনের অনিশ্চিত ভাগ্যের বিষয়ে তার মতামত জানিয়েছেন।

তিনি মনে করেন, প্রিগোজিনকে হয়তো আবার প্রকাশ্যে দেখতে পাব। হয়তো তাকে লুকিয়ে রাখা হবে বা কারাগারে পাঠানো হবে, বা অন্য কোন উপায়ে মোকাবিলা করা হবে, তবে সবচেয়ে গভীরভাবে মনে হচ্ছে আমরা তাকে আবার দেখতে পাব।

ক্ষমতায় আসার পর থেকে পুতিনের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে দেয়া ব্যবসায়ী প্রিগোজিন বেঁচে আছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আব্রামস বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না যে তিনি বেঁচে আছেন। যদি তিনি বেঁচে থাকেন তবে নিশ্চয়ই কোনো কারাগারে আছেন।’

এমনকি পুতিনের সঙ্গে প্রিগোজিনের বৈঠকের খবরকে তিনি সুনিপুণভাবে মঞ্চস্থ করা নাটক বলে মনে করছেন।

প্রিগোজিন মূলত ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিচালনার বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগুসহ রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্তাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে আসছিলেন। এমনকি তিনি তার যোদ্ধাদের রোস্তভ-অন-দন শহরের নিয়ন্ত্রণ দখল করার কাজেও নেতৃত্ব দিয়েছেন।

তারপরে প্রিগোজিন তার বাহিনীকে মস্কোর দিকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেন, কিন্তু বেলারুশিয়ান প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো তাড়াহুড়ো করে ভাড়াটে প্রধান এবং ক্রেমলিনের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতার পর তিনি হঠাৎ তার মন পরিবর্তন করেন।

চুক্তির অধীনে, প্রিগোজিন যদি বেলারুশে নির্বাসনে যেতে রাজি হন তবে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ থেকে রেহাই দেওয়া হবে। তবে লুকাশেঙ্কো গত সপ্তাহে বলেছেন, প্রিগোজিন রাশিয়ায় ফিরে এসেছেন।

ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা অনুসারে, বিদ্রোহের পর থেকে প্রিগোজিনের একটি ব্যক্তিগত জেট বেলারুশ এবং রাশিয়ার মধ্যে একাধিক ভ্রমণ করেছে। তাকে গত সপ্তাহে এফএসবির সেন্ট পিটার্সবার্গ অফিসে দেখা গেছে বলে জানা গেছে, যেখানে তিনি তার প্রাসাদে অভিযানের সময় বাজেয়াপ্ত করা অস্ত্র সংগ্রহ করতে এসেছিলেন।

একই সময়ে, প্রিগোজিন একটি অডিও বার্তাও প্রকাশ করেছিলেন, যারা ওয়াগনার গ্রুপের ব্যর্থ বিদ্রোহকে সমর্থন করেছিলেন তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং আমাদের সমাজকে সংগঠিত করাই লক্ষ্য ছিল।’ তবে প্রিগোজিনের বর্তমান অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অজানা।

অপরদিকে, অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন সেনা ব্রিগেডিয়ার ড. জেনারেল কেভিন রায়ান প্রিগোজিনের ব্যাপারে বুধবার ইনসাইডারকে বলেছেন, ওয়াগনার গ্রুপের বস ইয়েভজেনি প্রিগোজিন রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বল্পস্থায়ী বিদ্রোহের মঞ্চায়ন করার পরে সম্ভবত মারা যাননি বা কারাগারে বন্দী হননি। যদি তিনি মারা যেতেন বা বন্দি হতেন তবে পুতিন এটিকে গোপন রাখতেন না। আমি কোন প্রমাণ দেখতে পাচ্ছি না যে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

রায়ানের যুক্তি হলো, সংক্ষিপ্ত সশস্ত্র বিদ্রোহের পর পুতিনকে দুর্বল মনে হয়েছে। এখন যদি প্রিগোজিনকে কারাগারে দেওয়া হয় কিংবা তাকে মেরে ফেলা হয় তবে পুতিনকে শক্তিশালী প্রমাণ করবে। ফলে মনে হবে সবকিছু পুতিনের নিয়ন্ত্রণে। যদি পুতিন তাকে হত্যা করে থাকেন তবে তিনি তা করতেই পারেন। হয়তো তিনি তাই করেছেন, কিংবা অন্যদের তা করার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু বড় নাম বা পরিচিত চেহারার ব্যক্তিদের এভাবে হত্যা করা হয়না কারণ এর ফলে বড় ধরণের হুমকি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তবুও, প্রিগোজিনের অবস্থান অস্পষ্ট রয়ে গেছে কারণ তিনি গত মাসে তার বিদ্রোহের ফল রোধ করার জন্য ক্রেমলিনের প্রচেষ্টার মধ্যে জনসাধারণের দৃষ্টি থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছেন। রায়ান বলেন, ‘এটা সত্য যে আমরা সত্যিই জানি না প্রিগোজিন কোথায় বা তার পরিস্থিতি কী। আমরা বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে খবর পাচ্ছি, সরাসরি পুতিনের কাছ থেকে কিংবা সরাসরি প্রিগোজিনের কাছ থেকে নয়।’

রায়ান মনে করেন, প্রিগোজিনকে কোনো এক সময়ে জেলে নিয়ে যাওয়া হতে পারে এই সম্ভাবনা অমূলক নয়। কিন্তু প্রিগোজিনের ভবিষ্যতের জন্য যেটা বেশি নিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে তা হল তার আগে যে ক্ষমতা ছিল তা তার থাকবে না।

রায়ানের মতে প্রিগোজিনের বিশাল সাম্রাজ্যকে কঠোরভাবে দাবিয়ে রেখেছে ক্রেমলিন।

(ঢাকাটাইমস/১৩জুলাই/এসএটি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :