টানা বর্ষণে উপকূলের বসতি প্লাবিত, চরম বিপাকে হাজারো মানুষ

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১৭:০৯| আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১৭:১৫
অ- অ+

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা সমুদ্রে সৃষ্ট কোনো বন্যা শুরু হলেই উপকূলের মানুষ সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত থাকে। কখন যেন প্রলংঙ্করী দুর্যোগ এসে সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

পটুয়াখালীর উপকূল এলাকায় একটানা তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। উত্তাল সমুদ্রে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কয়েক ফুট পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেরীবাঁধের বাইরে উপকূলের বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। অনেক বাসিন্দাদের বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করে এখন চরম এক দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। উপকূলের সকল কর্ম-পেশার মানুষের স্বাভাবিক জীবনমান স্থবির হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পটুয়াখালীর উপকূলেজুরে টানা তিনদিনের বৃষ্টি প্রবাহে নিম্নাঞ্চল কয়েক ফুট প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টির প্রভাবে পানির উচ্চমাত্রা ক্রমান্বয় আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে কুয়াকাটা উপকূলের সমুদ্র কেন্দ্রীক বেরীবাঁধের বাইরে বসবাসরত বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার কবলে পরে সিমাহীন দূর্দশায় নিমজ্জিত হয়েছে। উপকূলের বাসিন্দাদের বসতি, রান্না ঘড় থেকে শুরু করে শৌচাগার বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এসকল অসচ্ছল অনেক পরিবারের নেই গত তিন দিন রান্না করার মতো কোনো উপায়। বাধ্য হয়ে অধিকাংশ মানুষকে অনাহারে থাকছেন। রান্না করতে না পেরে কেউ কেউ কাঁচা চাল ও পানি খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। উপকূলের বসতি থেকে সামান্য কয়েক মিটার দূরে সমুদ্রের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে। যে কারণে এক প্রকার আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। উপকূলের ভূমিহীন হামেদ পহলান বলেন, একদিকে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা, অপরদিকে সমুদ্রের জোয়ারের পানি তাদের বসত ঘর ছুঁইছুঁই যেন মরণ ফাঁদে ফেলেছে। সমুদ্রের যেকোনো বন্যা অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলেই হাজারো মানুষের নেই আর শেষ রক্ষা। এই মানবেতর জীবনের শেষ কবে হবে?

উপকূলে বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তির শিকার ৯৫% মানুষ ভূমিহীন। এদের নেই কোনো স্থায়ী বসবাসের জমাজমি। অসহায়ত্বের বেড়াজালে কোথাও যেতে পারছে না তারা। তাই নিরুপায় হয়ে শত ঝড়-বন্যা উপেক্ষা করে বাধ্য হচ্ছেন এসবের মধ্যে বসবাস করতে। উপকূলে ভূমিহীন মোসা. শাহিনুর, মো. মিলন, বিধবা চিনিমতি, শাহজাহান, সাইফুল, আ. সোবাহান, মো. নাঈমসহ অর্ধ শতাধিক বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সরকারের মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন ছাড়া আমাদের বিকল্প অবলম্বন নেই। সমুদ্রের পানি আমাদের ঘড়ে প্রবেশ করে, আমাদের ঠাঁই নেয়ার মতো কোনো স্থান নেই। আরও অর্ধ শতাধিক ভূমিহীন বাসিন্দারা দাবি করে বলেন, উপকূলের অসহায় মানুষের জন্য জমি ও ঘর বরাদ্ধের মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি।

বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে গভীর সমদ্রের শত শত মাছ ধরা ট্রলার ইতোমধ্যে উপকূলের বিভিন্ন ঘাটে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যেও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে কিছু পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে পর্যটকদের সচেতনতায় তৎপর রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই শিক্ষার্থীদের কোনো উপস্থিতি। এছাড়াও বেরীবাঁধের মধ্যে যেসকল নিম্নাঞ্চল রয়েছে তাও কয়েক ফুট প্লাবিত হয়েছে। অনেক বাসিন্দার ঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। অনেক মাছের ঘেড় ও পুকুর বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে মাছ চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে জানা যায়। আর কিছুদিন এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে কৃষি কাজসহ পরিবেশ প্রতিবেশ এবং মানুষের দৈনন্দিত জীবনের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশেষ করে কুয়াকাটা পৌর এলাকায় ড্রেনেজ ব্যাবস্থা সচল না থাকায় এখন জলাবদ্ধতায় কবলে পড়েছে পৌর বাসিন্দারা। সামান্য বৃষ্টি হলেই পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। স্বাভাবিক চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয় পর্যটকসহ স্থানীয়দের। কুয়াকাটার একমাত্র খালটিতে বিভিন্ন পয়েন্টে প্রভাবশালীরা বাঁধ দেয়ার কারণে পৌর এলাকায় মূলত এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কুয়াকাটা পৌর এলাকায় পূর্বের অনেক কালভার্ট ভেঙে ফেলা হয়েছে, আবার অনেক কালভার্ট এখন মৃতপ্রায় হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা যায়, কুয়াকাটা পৌরসভা গঠনের এক যুগ অতিক্রম হলেও নাগরিক সেবা দানে ড্রেনেজ-পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে নেই সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা। পৌর এলাকায় বর্জ্য ও পচা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে এখন মশার মাছি ও রোগ জীবাণুর উপদ্রব বেড়ে গেলেও কোনো তদারকি নেই কতৃপক্ষের।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে সোমবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগর মাঝারি থেকে প্রলয় অবস্থায় রয়েছে। পায়রা বন্দরসহ সকল সমুদ্র বন্দর সমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণি হতে পারে। এতে আরো বলা হয় পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/৭আগস্ট/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ভালুকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় স্বেচ্ছাসেবী কর্মশালা অনুষ্ঠিত
২০৩০ সালের মধ্যে এশিয়া অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়বে ৪০ শতাংশ
হাতিয়ায় নদীভাঙন রোধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় কর্মশালা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা