আলোচনায় আ.লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট ২০২৩, ১৮:৪০

আগামী ডিসেম্বরের শেষে কিংবা জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচনের আর মাত্র চার মাস বাকি থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্তও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি চূড়ান্ত করতে পারেনি। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব পাচ্ছেন কারা, এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে আলোচনা। কত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি হবে, এই কমিটিতে কে কে স্থান পাচ্ছেন, এরকম নানা বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা তুঙ্গে।

আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব পেতে পারেন সাবেক তিন আমলা। সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার।

২০২১ সালের ৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের মৃত্যু হয়। এরপর তিন বছর পার হয়ে গেলেও দলের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে কাউকে দায়িত্ব দেয়নি আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এখনই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ার চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। কারণ, নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়নসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে কো-চেয়ারম্যানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের মাত্র চার মাস বাকি। তাই দলের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে এখনই দায়িত্ব প্রদান করা প্রয়োজন।

যদিও চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারকে নির্বাচন পরিচালনা কো-চেয়ারম্যান করে এইচটি ইমামের জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে রব ওঠে। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত এইচটি ইমামের কক্ষেও বসা শুরু করেন কবির বিন আনোয়ার। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষে থেকে এখনও পর্যন্ত কবির বিন আনোয়ারকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি।

এদিকে গত ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তেজঁগাও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে যান। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে তাদের অফিস দেওয়া হয়। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির জন্য রুম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, ড. মোহাম্মদ সাদিকসহ মহানগরের কয়েকজন নেতাও।

রুম বরাদ্দের সময় সেখানে পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক উপস্থিতি ছিলেন। এরপরই বিষয়টি সামনে আসে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন ওঠে তাকে কো-চেয়ারম্যান করা হচ্ছে।

সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে কথা হলে তিনি ঢাকা টাইমসকে জানান, অফিসে বসেন না। অফিসের কাজ চলছে। তবে পরিচালনা কমিটি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এমন চিঠি ইস্যু করার আগে পর্যন্ত অফিসে বসবে না বলেও জানান তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগসহ যেসব সংগঠন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অফিসের জন্য রুম বরাদ্দ পেয়েছে কোনোটার কাজই শেষ হয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে যারা দায়িত্ব পাচ্ছেন বলে গুঞ্জন চলছে তাদের অফিসের কাজের ফিনিশিং চলছে। তাই কেউই রুম বা অফিস বুঝে পায়নি। এসব অফিসের কাজ শেষ হওয়ার পরে সংগঠন বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে করে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। সবগুলোর কাজই শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বৃত্তি আর্টিটেকচার।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের জন্য অফিস বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু এখনো কাজ শেষ না হওয়ায় অফিসে বসতে পারি না। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়ে যাবে।

সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিককে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এজন্য তাদের অফিসও বরাদ্দ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে শুনেছি। তাদের অফিসের কাজও চলছে। কারো অফিসের কাজ শেষ হয়নি।

গত ৩ জুন রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকার ট্রাক স্ট্যান্ডের উত্তর পাশে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

এখন পর্যন্ত নির্বাচন পরিচালনা কমিটি দায়িত্বে ছিলেন যারা-

১৯৯৬ সালে নির্বাচনের আগে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানে পদটি আলোচনায় আসে। তখন সাবেক সচিব ও কূটনীতিক শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে নির্বাচন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

ওই নির্বাচনে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়।

শাহ এ এম এস কিবরিয়ার মৃত্যুর পর এইচটি ইমাম নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। ২০০৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয় পায়। ২০১৪ সালে দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কো-চেয়ারম্যান হিসেবে এইচটি ইমাম দায়িত্ব পালন করেন। তবে তার মৃত্যুর পর এখন পর্যন্ত এই পদে কাউকে দায়িত্ব দেয়নি আওয়ামী লীগ।

ঢাকাটাইমস/১৫আগস্ট/জেএ/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :