হরিরামপুরে নদীভাঙন: বালুর অভাবে বন্ধ পাউবোর জিও ব্যাগ ডাম্পিং

সায়েম খান, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ)
  প্রকাশিত : ২৩ আগস্ট ২০২৩, ২২:৫১
অ- অ+

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ধুলশুড়া ইউনিয়নে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। সোমবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে হঠাৎ শুরু হওয়া ভাঙনে প্রায় ৩০ মিনিটের মধ্যে ১২টি পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে যায়।

বুধবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৪টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও, স্থানীয় ৪৬নং চর মুকুন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের এক-তৃতীয়াংশ ধ্বসে পড়েছে। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ডাম্পিং শুরু করলেও বালুর অভাবে বুধবার বিকাল থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে।

বুধবার সরজমিনে জানা যায়, গত সোমবার দিবাগত রাত থেকে ধুলশুড়া ইউনিয়নের আবিধারা, কমলাপুর ও নীলগ্রামে ভাঙন শুরু হয়। এতে বুধবার বিকাল পর্যন্ত ২৪টি পরিবারের বসতভিটা ও স্থানীয় সড়ক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটির এক-তৃতীয়াংশ ধ্বসে পড়েছে। ভাঙন কবলিত ওই এলাকায় ১২০০ মিটার অংশে গত কয়েকদিন ধরে আপতকালীন কাজ করছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরই মধ্যে হঠাৎ শুরু হয় ভাঙন। ভাঙনরোধে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগের পাশাপাশি জিও টিউব ডাম্পিং শুরু করে পাউবো।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পাউবোর কর্মকর্তারা জানান, জিও ব্যাগে ব্যবহৃত বালু সরবরাহের ঠিকাদার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন হারুকান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চুন্নু। তিনি পদ্মা থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে পাউবোকে বালু সরবরাহ করছিলেন। তবে, বুধবার বিকাল আনুমানিক তিনটার দিকে হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান ৫০-৬০ জন লোক নিয়ে একটি ড্রেজার ধরে নিয়ে আসেন। এরপর থেকেই বালুর অভাবে বন্ধ রয়েছে পাউবোর জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ডাম্পিং কাজ। ড্রেজারটি বর্তমানে উপজেলার বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পদ্মা নদীর ঘাটে আটকে রাখা হয়েছে।

ধুলশুড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহেদ খান বলেন, “ভাঙনে ইতোমধ্যে আবিধারা গ্রামের ২৪টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের ঝুুঁকিতে পড়েছে আবিধারা, নীলগ্রাম ও কমলাপুর গ্রাম। তিনটি গ্রামে প্রায় এক হাজার পরিবার বসবাস করে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ, জিও টিউব, লোকজন নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু নদী থেকে বালু তোলার ড্রেজারটি ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। বর্ষা মৌসুম, পানি অনেক তাই বালু সংকট। জরুরি ভিত্তিতে যদি বালুর ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে গ্রাম এবং স্কুলটি রক্ষা পাবে না।”

স্থানীয় বাসিন্দা অটোচালক শেখ জায়েদ আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাগো ঘরবাড়ি পদ্মায় নিয়ে গেছে। ভাঙতে ভাঙতে আমরা সর্বহারা হয়ে গেলাম। ভিটে মাটি সব শেষ। উপজেলা চেয়ারম্যান পদ্মা থেকে বালু কাটার ড্রেজার ধরে নিয়ে গেছে। যার জন্য কাজ বন্ধ রয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।”

নদীতে যাদের বাড়ি ঘর যায়, তারাই বোঝে। এই ড্রেজার দিয়ে তো জনগণের স্বার্থে বালু তোলা হচ্ছিল। এটা ধরে নিয়ে গেল। এখন এই ভাঙন মোকাবেলা কীভাবে করবে? প্রশাসনের কাছে সরকারের কাছে আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই।

বালু সরবরাহের দায়িত্বে থাকা আসাদুজ্জামান খান চুন্নু বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান তার লোকজন দিয়ে বিকাল আনুমানিক তিনটার দিকে ৫০-৬০ জন লোক নিয়ে সশস্ত্র এসে বালু তোলার একটি ড্রেজার লোকজনসহ ধরে নিয়ে গেছে। যার জন্য বালু সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এর ফলে বাঁধের কাজ বন্ধ আছে।

তবে, উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, ‘‘তিনটি ড্রেজার দিয়ে তারা আমাদের ইজারাকৃত বালুমহালের কিছুটা দূরে থেকে অবৈধভাবে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বাঁধের কাজে দেওয়ার পাশাপাশি বাইরেও বিক্রি করছিল। ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণেই এই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। তারা আমাদের বালুমহাল থেকে বালু নিতে পারতো। প্রশাসনের বিনা অনুমতিতে অবৈধভাবে তারা এই কাজ করছিল। এতে আমরা বালুমহাল আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই আমরা আজ একটা ড্রেজার ধরে এনেছি। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।”

ঘটনাস্থলে উপস্থিত মানিকগঞ্জ পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আশরাফুল সিদ্দিকী বলেন, ভাঙনের কথা চেয়ারম্যান আমাদের অবহিত করেন। পাশেই আমাদের আপতকালীন কাজ চলছিল। সেই যন্ত্রপাতি নিয়ে আমরা এখানে চলে আসি। ভাঙন ঠেকাতে, এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে যে পরিমাণ কাজ করতে হয়, সেই পরিমাণ কাজ পাউবো করবে। তবে, বালুর ব্যবস্থা না হলে কাজ করা সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে বক্তব্যের জন্য রাত ৯টার দিকে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার ও হরিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপসী রাবেয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈনুদ্দিন বলেন, কাজ বন্ধ থাকার সুযোগ নেই। জেলা প্রশাসক, ইউএনও, ওসি মহোদয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। ঘটনাস্থলে ইউএনও ও ওসি মহোদয় গিয়েছিল। কাল সকাল থেকে কাজ চলবে। তারা ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ওসি সাহেব জানিয়েছেন যে উপজেলা চেয়ারম্যানের আটক করা ড্রেজারটি ছেড়ে দিবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩আগস্ট/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কোকোর কবর জিয়ারত করলেন ডা. জুবাইদা রহমান
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ১২১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন
যুদ্ধবিরতি কার্য কর হওয়ার কথা জানাল ভারত ও পাকিস্তান
কেউ যেন ভোটের অধিকার কুক্ষিত করার ষড়যন্ত্র করতে না পারে: তারেক রহমান 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা