ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে ভেষজ মশলার গুণেই

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৪২

ডায়াবেটিস একটি ঘাতক অসুখ। যার প্রধান কারণ অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা। ব্লাড সুগার বাড়ার কারণে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। চোখ, কিডনি, লিভার, হার্ট ও পায়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। এমনকি ডায়াবেটিস প্রাণঘাতীও হতে পারে। ডায়াবেটিস এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। মানুষ যখন খাবার গ্রহণ করে, তখন শরীরের প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিনের কাজ হলো যে খাবার খাওয়া হচ্ছে সেটির অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমিয়ে দেওয়া। যখন ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় বা ইনসুলিন উৎপাদন হওয়ার পরও যখন কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকে। সেই অবস্থাকেই বলা হয় ডায়াবেটিস।

ডায়াবিটিসের লক্ষণগুলো হলো: বারবার প্রস্রাবের বেগ, অত্যধিক পানির তৃষ্ণা, শরীরের ওজন কমে যাওয়া, চোখে কম দেখা, ক্লান্তি আসা, অতিরিক্ত খিদে পাওয়া, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, ক্ষত শুকাতে চায় না, বারবার ইনফেকশন, হাত-পা অসাড় হয়ে যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করলেই সুস্থ জীবনযাপন করা যায়। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে থাকে উঁচুমানের সুগার। শরীর যখন যথেষ্ট ইনসুলিন হরমোন নিঃসরণ করতে পারে না এবং তাই রক্তের সুগারও নামাতে পারে না অথবা ইনসুলিন কিছু নিঃসরণ হলেও শরীর যদি তা ব্যবহার করতে না পারে তখন হয় টাইপ-২ ডায়াবেটিস। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাবার জন্য নানা উপাদানই আছে।

পুষ্টিবিদদের মতে, ডায়াবিটিস থাকলে খাওয়াদাওয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। নিয়ম মেনে শরীরচর্চা, খাওয়াদাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ রাখার পাশাপাশি প্রতিদিনের ডায়েটে কিছু ভেষজ মশলা রাখলে ডায়াবেটিস রোগকে জব্দ করা যায়।

দারুচিনি

দারুচিনির স্বাস্থ্যগুণ অনেক। দারুচিনিতে থাকে সিনামালডিহাইড। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে দারুচিনি। গবেষণায় দেখা গেছে, টানা ৪০ দিন যদি ৬ গ্রাম করে দারুচিনি খাওয়া যায় তাহলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমতে পারে। এর সঙ্গে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমে। অল্প দারুচিনির গুঁড়া যদি রোজ রান্নায় ব্যবহার করা যায়, তবে শরীরে অনেক বেশি সক্রিয় থাকে ইনসুলিন হরমোন। আর তাতেই নিয়ন্ত্রণে থাকে রক্তের শর্করার মাত্রা।

মেথি

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী মেথি। মেথিতে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত ১০ গ্রাম মেথি গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সে পানি পান করলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে। সকালে মেথি ভেজানো জল হোক বা রান্নায় মেথি ফোড়ন, যে ভাবেই মেথি ব্যবহার করবেন, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে তাতেই।

আদা

প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা থেকে জীবাণু নাশ, সবেতেই বেশ কার্যকর আদা। শরীরে ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে আদার রস। আর ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় রক্তের শর্করার মাত্রাও। ফলে রোজের রান্নায় অল্প করে আদা ব্যবহার করলে অনেকটাই যত্ন নেওয়া যায় ডায়াবেটিসের রোগীর। আদা দেওয়া চা খেলেও উপকার মেলে।

হলুদ

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য হলুদ দারুণ উপযোগী। হলুদের মধ্যে কারকিউমিন রয়েছে। এই যৌগটি ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি কমায় এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। হলুদের উপাদান কারকিউমিন সফলতার সাথে ডায়াবেটিস রোধ করতে পারে, কারণ এটা ডায়াবেটীসের উপসর্গ হাইপারগ্লাইসিমিয়া ও ইন্সুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হলুদে থাকা কারকিউমিন নামক যৌগ রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এ ক্ষেত্রে দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

জয়িত্রী

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর জয়িত্রীও কিন্তু রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। জয়িত্রীতে রয়েছে অ্যান্টি-ডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য। এটি আলফা-অ্যামাইলেজ নামক একটি এনজাইমকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে পারে। জয়িত্রীতে আরও অনেক ঔষধি গুণ পাওয়া যায়, যা শরীরে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপকারী বলে মনে করা হয়। জয়িত্রীতে অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট এবং অ্যাফ্রোডিসিয়াক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে কাজ করে। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রায়ই ক্ষুধা এবং হজম সংক্রান্ত সমস্যা হয় এবং এটি নিরাময়ে জয়িত্রী একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চায়ের মধ্যে জয়িত্রী মিশিয়ে খেলে ডায়াবেটিক রোগীরা উপকার পাবেন।

(ঢাকাটাইমস/২৯ আগস্ট/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :