এলাকামুখী না হয়েও ফের নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন জাপার এমপিদের

বর্তমান সরকারে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২২ জন নির্বাচিত এমপি রয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিভাগ এমপিই নির্বাচনি এলাকামুখী নন। হাতেগোনা কয়েকজন নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় যান। এরপরও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এলাকাবিমুখরা ফের নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন! এর কারণটাও অবশ্য অকপটে বলে দিলেন জাপার এক সংসদ সদস্য।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ওই এমপি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এলাকায় গিয়ে টাকা খরচ করে লাভ কী? জনগণের ভোটেতো আর নির্বাচিত হতে পারব না, তাই শ্রম আর টাকা খরচ করার পক্ষে আমি নই।’
তবে সংসদ সদস্যদের এমন চিন্তা-ভাবনা ও এলাকাবিমুখতার কারণে আগামী নির্বাচনে খেসারত দেওয়া লাগতে পারে বলে মনে করছেন রাজনীতি সচেতন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
মূলত, ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে প্রয়াত এরশাদ হঠাৎ করে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা করলে তখন দেশের অধিকাংশ ভালো প্রার্থী (যাদের এলাকায় অবস্থান আছে) এরশাদের ডাকে সারা দিয়ে রাতারাতি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। তবে এরশাদপত্নী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে পার্টির একটি অংশ সরকারের সঙ্গে ‘আঁতাত’ করে এমপি হয়ে যান। বিএনপিসহ বিরোধীজোট ওই নির্বাচন বয়কট করায় দেশ-বিদেশে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠলেও জাপার অনেক এমপি সেভাবেই ‘এমপি বনে যাওয়ার চিন্তায় আটকে আছেন’।
এ বিষয়ে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ঢাকা টাইমসকে বলেন, প্রতিটি এমপিরই নিয়মিত এলাকা যাওয়া দায়িত্ব ও কর্তব্য। না গেলে ভবিষ্যৎ নির্বাচনের জন্য অবশ্যই খেসারত দিতে হবে। শুধু ভোটই নয়, এমপিদের উচিত এলাকায় উন্নয়ন এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখা। তবে, অনেক সময় এলাকায় ব্যক্তি ইমেজ ভোটের রাজনীতিতে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়।
দলটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, যেভাবেই এমপি হোক, তারা দুই দফা নির্বাচিত হয়ে এলাকায় সংগঠন করতে পারত। কিন্তু এমপিরা নির্বাচিত হওয়ার পরও এলাকামুখী হননি। নেতাকর্মীদের ভাষ্যমতে, এমপিরা মনে করেন, এমপিতো ক্ষমতাসীনরা নির্বাচিত করেন। যে কারণে এই এমপিরা দলের চেয়ারম্যানকেও মাঝে মাঝে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেন।
২০০৮ সালে নির্বাচিত এক এমপি দলটির প্রেসিডিয়ামের এক সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের এমপিরা মনে করেন, আবার টিক মার্কের নির্বাচনে এমপি হবেন, বিনাভোটে এমপি হবেন। প্রশাসনকে পূর্বের ন্যায় টাকা দিয়ে যারা এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।
এদিকে জাপার দলীয় সূত্র থেকে জানা যায়, পার্টির ২২ জন নির্বাচিত এমপির মধ্যে ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, বরিশাল-৩ আসনের গোলাম কিবরিয়া টিপু এবং কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির হোসেন ছাড়া পার্টির কেউ এলাকামুখী নন। তবে, জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ব্যস্ততার মাঝেও নিজ এলাকায় সময় দিচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ ৩ (সোনারগাঁও) আসনে আগে জাতীয় পার্টির কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড না থাকলেও লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি নির্বাচিত হয়ে তৃণমূলে সংগঠন গুছিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে গঠন করেছেন কেন্দ্র কমিটিও। এমপি হওয়ার পর থেকে নিয়মিত সময় দিয়েছেন এলাকায়। এর ফলশ্রুতিতে জাপা থেকে একাধিক ইউপি চেয়ারম্যানসহ দেড় শতাধিক ইউপি সদস্যও নির্বাচিত হয়েছে। ঢাকা-৪ আসনের এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগ থেকেই শ্যামপুর-কদমতলীতে সংগঠন করেছেন। সময় দিচ্ছেন নিয়মিত। এখানে আওয়ামী লীগের একাধিক শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী থাকার কারণে, মাঝে মাঝে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাধার সম্মুখীন হলেও নিজস্ব কর্মী বাহিনী থাকায় বাবলা বিরোধীরা তেমন সুবিধা করতে পারেনি।
জাপার দপ্তর সূত্র জানায়, গাইবান্ধার সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীও নিয়মিত এলাকায় যান। এছাড়া ঢাকা-১৩ আসনে শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ব্রাহ্মণ্যবাড়িয়া-৩ আসনের রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া, টাঙ্গাইল-৭ আসনের জহিরুল ইসলাম জহির, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে জহিরুল আলম রুবেল, জামালপুরে মোস্তফা আল মাহমুদ, শামসুল আলম লিফটন, নেত্রকোনায় জসিম উদ্দিন ভূইয়া, হবিগঞ্জ-২ আসনে মুনিম চৌধুরী বাবু এবং শেরপুরে ইলিয়াস উদ্দিন আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
বরিশাল-৩ আসনের জাপার সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু গত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নৌকাকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন। তিনি ঢাকায় অবস্থান করলেও নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত এলাকায় যান তিনি। ইতিমধ্যে কেন্দ্র কমিটিও সমাপ্ত করেছেন। ঢাকার নয়াপল্টনের তার ব্যবসায়িক অফিসে নিয়মিত সময় দেন স্থানীয় লোকজনকে।
গোলাম কিবরিয়া টিপু ঢাকা টাইমসকে বলেন, জনগণ যদি এবার ভোট দিতে পারে তাহলে আবারও নির্বাচিত হতে পারব। আমার সুবিধা হলো সরকারি অনুদান লুটপাট করিনি। বরং সরকারি অনুদানের বাইরে নিজ খরচেও এলাকায় অনেক কাজ করেছি। আমি এলাকায় কোনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করিনি। কারো বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা দায়ের হয়নি।
এবিষয়ে জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সবারই এলাকায় যাওয়া উচিত। এর বাইরে এমপি হবার কোনো সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে আগামী নির্বাচন হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। সেক্ষেত্রে এলাকার গণমানুষের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলে ভবিষ্যতে এমপি হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/জেবি/ইএস

মন্তব্য করুন