দলে ফিরতে চান হাজারের বেশি ‘বহিষ্কৃত’, বিএনপি দপ্তরে চিঠির স্তূপ

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৪২ | প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১৬

দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কর্মকাণ্ড করে বহিষ্কার হওয়া বিভিন্ন স্তরের নেতারা বিএনপিতে ফিরতে চান। দলের কাছে ক্ষমা চেয়ে বহিষ্কার প্রত্যাহারের জন্য তারা আবেদন করেছেন। এমন সহস্রাধিক আবেদন দলটির দপ্তরে জমা পড়েছে।

বিএনপি সূত্র বলছে, ২০১৯ সালে ১৬ জানুয়ারি দলের স্থায়ী কমিটির এক সভায় এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এই সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ ভোট করতে চাইলে পদত্যাগ করতে হবে বলে নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হয়।

তবে দলের এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিচ্ছিন্নভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয় বেশ কিছু নেতাকে। আর ২০২২ সালের এপ্রিল ও মে মাসে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এ বিষয়ে আরও কঠোর অবস্থান নেয় দলটি। সেবারও বহিষ্কৃত হন দুই শতাধিক নেতা। যদিও তাদের অনেকেই নিজস্ব শক্তির বলয়ের কারণে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

বহিষ্কৃত এসব নেতারাই দলীয় ক্ষমা চেয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরে এমন আবেদনের চিঠির স্তুপ জমে আছে বিএনপি সূত্র জানিয়েছে।

জানা গেছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি করার ক্ষেত্রেও মনোমালিন্যের কারণে অসংখ্য নেতাকর্মীকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারাও ক্ষমা চেয়ে অব্যাহতি ফিরিয়ে নিতে আবেদন করেছেন।

বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। এর আগে যদি অব্যাহতি বা বহিষ্কৃতদের দলে ভেড়ানো না হলে তারা অন্য দলে চলে যেতে পারেন। এর ফলে প্রতিপক্ষকেই শক্তিশালী করা হবে।’

তার মতে, নিজের দলে ফিরতে চেয়ে বহিষ্কৃতদের আবেদন গ্রহণ করে তাদেরকে ফেরানো উচিত। নইলে অনেকে তৃণমূল বিএনপির দিকে ঝুঁকতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি। আর তেমন হলে সেটি দলের জন্য মঙ্গল হবে না বলেই ভাষ্য এই বিএনপি নেতার।

২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির দুই নেতা অংশ নিলেও ২০২৩ সালে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে কেউ মেয়র নির্বাচনে অংশ নেননি। এটি দলের প্রতি নেতাদের প্রতিশ্রুতির একটি বড় উদাহরণ বলেই মনে করেন বিএনপি নেতারা।

দলটির একাধিক নেতা বলছেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কাউন্সিলরসহ অন্য পদে যারা অংশ নিয়েছেন তারাও দলের ত্যাগী নেতা। তারাও প্রত্যেকে এ সরকারের দ্বারা নির্যাতিত এবং মামলায় জর্জরিত।

নির্বাচনে অংশ নিয়ে দল থেকে বহিষ্কার হওয়া বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা টাইমস। কেন তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তাও ব্যাখ্যা করেন।

তারা বলছেন, এলাকায় আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। আবার নির্বাচন করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়েছেন। বাড়িঘর লুট হয়েছে, আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, জেলেও যেতে হয়েছে। এরপরও অধিকাংশ জায়গাতে বিজয়ী হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমনই এক বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নির্বাচিত হয়েও দল ছাড়িনি। দল বহিষ্কার করলেও সরকার পতনের লক্ষ্যে বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচিতে কর্মীদের নিয়ে মাঠে আছি। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দল আমাদের প্রতি সুবিচার করবে বলে আশাবাদী।’

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয় নেতা। তারা দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতি করে আসছেন। এছাড়া শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যেও কয়েকজনকে ‘আজীবন বহিষ্কার’ ও অব্যাহতি দেওয়া হয়। তারাও স্থানীয় রাজনীতিতে অনেক প্রভাবশালী নেতা।

এমন নেতাদের মধ্যে আছেন—খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, কুমিল্লার সাবেক মেয়র ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু এবং কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে অংশ নেন বিএনপির সিনিয়র নেতা তৈমুর আলম খন্দকার। ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি তাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। তবে এরপরও তিনি দলটির প্রতিটি কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন। সম্প্রতি তিনি প্রয়াত নাজমুল হুদার দল তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে দলটির মহাসচিবের দায়িত্ব নিয়েছেন।

২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে এখনো ২৭টি মামলা চলমান। খুলনা বিএনপির দূর্দিনের কান্ডারী বলে পরিচিত মঞ্জুকে বিএনপি অব্যাহতি দিলেও তিনি দলের প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে সক্রিয়।

ঢাকা টাইমসকে মঞ্জু বলেন, ‘শহীদ জিয়া ও বিএনপি আত্মার অভিন্ন অংশ। তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন রাজপথে আছি এবং থাকবো। আমার অব্যাহতি প্রত্যাহার না হলেও কর্মী হিসেবে রাজপথে থাকবো। বিএনপির একজন কর্মী হিসেবেই মরতে চাই।’

২০২২ সালের ১৯ মে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অপরাধে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় মনিরুল হক সাক্কুকে। এলাকায় তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়। বহিষ্কারের তিনি দলের হয়ে সক্রিয় আছেন রাজপথে।

এদিকে ইনসাফ নামের একটি প্লাটফর্ম গঠনের অভিযোগে ২০২২ সালের ২৩ মার্চ বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদকে। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ইনসাফ কোনো রাজনৈতিক সংগঠন বা প্লাটফর্ম নয়। এটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন।’

বহিষ্কৃতদের ক্ষমা করে দলে ফেরানোর বিষয়ে বিএনপির কোনো চিন্তা আছে কি-না বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের কাছে জানতে চেয়েছে ঢাকা টাইমস। তারা বলছেন, ‘দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অথবা সরকারের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগে যারা বহিষ্কার হয়েছেন তাদের আর বিএনপিতে জায়গা নেই।’

তবে দলে যাদের অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা আছে, তাদের দলে ফিরিয়ে আনা শ্রেয় বলেই মনে করেন তারা। বলেন, ‘এতে দল আরো শক্তিশালী হবে। তারেক রহমান অচিরেই তাদের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন।’

এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বহিষ্কৃতদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে নিশ্চিত চিন্তাভাবনা আছে। এর প্রতিফলন অতিদ্রুত দেখা যাবে। যারা অনুতপ্ত হয়ে চিঠি দিয়েছে তাদের বিষয়টি আগে দেখা হবে। নিকট ভবিষ্যতে অধিকাংশকেই দলে ফিরিয়ে আনা হবে।’

গত তিন মাস ধরে তিনমাস শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকায় এ বিষয়ে কিছু তার জানা নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বলেন, ‘আমি অনেকগুলো স্থায়ী কমিটির সভায় উপস্থিত থাকতে পারিনি। তাই এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’

অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যাদের অপরাধ নগন্য তাদের পর্যায়ক্রমে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। তবে, যারা বিএনপির জন্য ক্ষতিকর তাদের কোনো ক্ষমা নেই, ফেরার সুযোগও নেই।’

(ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টেম্বর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :