৫০ বছর ধরে পদ্মার ভাঙনকবলিত এলাকা এখন পর্যটন কেন্দ্র

মো. মেহেদী শিকদার, শরীয়তপুর
| আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:১৭ | প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:২০
পর্যটন কেন্দ্র:

পদ্মার ভাঙনে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জাজিরা, নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার নদীপাড়ের হাজার-হাজার পরিবার হয়েছে নিঃস্ব। তারা কখনো কল্পনাই করতে পারেনি পদ্মার এমন আগ্রাসনও একদিন থেমে যাবে। এটি শুধু ভাঙন কবলিতদেরকে স্থায়ীভাবে ভাঙন থেকেই রক্ষাই করেনি জীবনযাত্রায়ও এনে দিয়েছে আমূল পরিবর্তন।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অক্লান্ত পরিশ্রমে তিলে-তিলে গড়া জেলার নড়িয়ার জয়বাংলা এভিনিউ শুধু ভাঙন কবলিতদের স্বপ্নই পূরণ করেনি, পাল্টে দিয়েছে জীবনযাত্রা। ১০ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ জয়বাংলা এভিনিউ এখন জেলার একমাত্র নদী ভিত্তিক পর্যটন এলাকা।

এছাড়াও নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ও নওপাড়া ইউনিয়ন এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের ১২ দশমিক ০৫ কিলোমিটার স্থায়ী রক্ষা বাঁধের কাজও ৯৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। ভেদরগঞ্জ উপজেলার সোনারবাংলা এভিনিউয়ের চলমান কাজের অগ্রগততিও হয়েছে ২০ শতাংশ। আর সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর জাজিরাকে ভাঙন থেকে স্থায়ী রক্ষায় একনেকে প্রধানমন্ত্রী জাজিরাবাসীকে পদ্মার ভাঙন থেকে রক্ষায় ৮ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার স্থায়ী রক্ষা বাঁধ প্রকল্প অনুমোদন করেন। এই প্রকল্পটি ২০২৬ সালের জুন মাসে শেষ হলে শরীয়তপুরের পদ্মাপাড়ের ভাঙন কবলিতরা স্থায়ীভাবে রক্ষা পাবে।

নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা ইব্রাহিম হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন , বিগত ৫০ বছরেরও বেশি সময় থেকে আমরা পদ্মার আগ্রাসনের কবলে ছিলাম। বর্ষা মৌসুম আসলেই আমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেতো। প্রতিবারই কোনো না কোনো এলাকায় ভাঙন দেখা দিতো। আমাদের ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসা, গাছ-পালাসহ ফসলি জমি পদ্মা কেড়ে নিত। ২০১৯ সালে জয়বাংলা এভিনিউয়ের কাজ শুরু হওয়ার পর আমরা ভাঙন থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি পেয়েছি। এখন বর্ষাকাল আসলেও আমাদের কোন চিন্তা থাকে না। এই এলাকাকে ভাঙন থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমাদের পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের প্রতি চির কৃতজ্ঞ।

জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের ৮৫ বছর বয়সের বৃদ্ধা জোহরা বেগম ঢাকা টাইমসকে বলেন, বর্ষাকাল আসলেই ছেলে-সন্তান, নাতি-নাতনি নির্ঘুম রাত কাটাতে হতো। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল নড়িয়ার মতো করে একটি স্থায়ী বাঁধের। গত মাসে শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা মা আমাদের জন্য রুপসীবাংলা নামে স্থায়ী বাঁধ পাস করেছেন। এই বাঁধটি হয়ে গেলে আমরাও নড়িয়ার মতো ভাঙনের হাত থেকে বেঁচে যাব। শেখ হাসিনা আমাদের জন্য যা করলেন আর কোনো সরকারই আমাদের জন্য তা করে নাই। আল্লাহর কাছে দোয়া করি শেখ হাসিনাকে আল্লাহ দীর্ঘ নেক হায়াত দান করুন। শেখ হাসিনা যতদিন ক্ষমতায় আছে ততদিন আমাদের কোনো চিন্তা নাই।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে নড়িয়ার জয়বাংলা এভিনিউতে ঘুরতে আসা শরীয়তপুর সদরের আবিদ হাসান রনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, পাঁচবছর আগেও এই বর্ষা মৌসুমে এখানে আসলে পদ্মার আগ্রাসনে সব হারানোদের আর্তনাদে ভেতরটা বেদনায় নীল হয়ে যেতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে প্রধামন্ত্রী ও আমাদের প্রিয় এনামুল হক শামীম ভাইয়ের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তা এখন ধূসর স্মৃতি। ছুটিরদিনের এই আনন্দ উল্লাসের চিত্র দেখলে কে বলবে এটা ছিল ভাঙন আতংকের জায়গা?

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব ঢাকা টাইমসকে বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জয়বাংলা এভিনিউ রক্ষা বাঁধের মাধ্যমে পদ্মার ভাঙন রোধে কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ দশমিক ২ কিলোমিটার নড়িয়ার জয়বাংলা এভিনিউ’র কাজ ২০২৩ এর জুন মাসে শেষ হয়েছে। চরাত্রা, নওয়াপাড়া ও কাচিকাটায় ৫৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ দশমিক ৫ কিলোমিটার স্বাধীন বাংলা এভিনিউ নামের রক্ষা বাঁধের কাজও ৯৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। সখিপুরের উত্তর তারাবুনিয়ায় ৫৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার সোনারবাংলা এভিনিউ রক্ষা বাঁধের চলমান কাজের অগ্রগতি ২০ শতাংশ। সর্বশেষ জাজিরার ৮৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার রুপসীবাংলা এভিনিউ নামের রক্ষা বাঁধের প্রকল্পও একনেকে অনুমোদন হয়েছে। ২০২৬ সালের জুন মাসে জাজিরা প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার মধ্যদিয়ে ৫ দশকের বেশি সময় থেকে শরীয়তপুরের নদী ভাঙন কবলিতরা স্থায়ীভাবে রক্ষা পাবেন।

পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ২০১৭-১৮ সালে শরীয়তপুরের নড়িয়ায় শতাব্দির ভয়াবহ ভাঙনের যে চিত্র বিশ্বাবাসী দেখে মর্মাহত হয়েছিল তা এখন কেবলই ফেলে আসা স্মৃতি। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় জয়বাংলা এভিনিউ বাস্তবায়নের ফলে এলাকাটি এখন জেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। শুধু ঈদ, পূজা-পার্বনই নয় সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও থাকে পর্যটকদের ভিড়। এছাড়াও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে নড়িয়ার উপজেলার চরাত্রা, নওয়াপাড়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ের ভাঙন কবলিত ১২ দশমিক ৫ কিলোমিটার স্বাধীনবাংলা নামে স্থায়ী রক্ষা বাঁধ কাজের ৯৬ শতাংশ শেষ করেছে। সখিপুর থানার উত্তর তারবুনিয়ায় সোনারবাংলা এভিনিউ নামের রক্ষা বাধের চলমান কাজের অগ্রগতিও ২০ শতাংশ। নতুন করে জাজিরাকে পদ্মার ভাঙন থেকে স্থায়ী রক্ষায় গত ১২ সেপ্টেম্বর একনেকে প্রধানমন্ত্রী ৮ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার স্থায়ী রক্ষা বাঁধের অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা আশা করছি, আগামী অক্টোবর মাসে জাজিরার বাঁধের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতে পারবো। যদিও ইতোমধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। জাজিরার বাঁধের কাজ ২০২৬ সালের জুন মাসে রুপসীবাংলা বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার মধ্যদিয়ে পুরো শরীয়তপুর জেলা পদ্মার ভাঙন থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পাবে। পদ্মার ভাঙন রোধে ৩৭ দশমিক ১৭ কিলোমিটার রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হলে পদ্মা সেতু থেকে মেঘনার মোহনা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার এলাকা হয়ে উঠবে বিশ্বের অন্যতম নদী ভিত্তিক পর্যটন এলাকা। আর পদ্মাপাড়ের ভাঙন কবলিতদের জন্য উদিত হবে জীবন যাত্রার মানোন্নয়নের সোনালী সূর্য।

(ঢাকাটাইমস/২৯সেপ্টেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :