জি এম কাদেরের স্ত্রী বলে কথা!

ঢাকা-১৮ সংসদীয় আসন। আগামী নির্বাচনে এই আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে এমপি হতে চান শেরিফা কাদের। আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে জাপার প্রার্থী হিসেবে চালাচ্ছেন প্রচারণা। তার পোস্টারে ছেয়ে গেছে রাজধানীর এই সংসদীয় আসনটির বিভিন্ন এলাকা। যদিও তার মনোনয়নের বিষয়ে দলের কোনো সিদ্ধান্ত নেই বলেই নেতাদের ভাষ্য।
শেরিফা কাদের জাপা চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপির স্ত্রী। সাংস্কৃতিক পার্টির আহ্বায়ক শেরিফা একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের উপনির্বাচনে জাপার মনোনয়নে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
জাপার একাধিক নেতাও দলের চেয়ারম্যানের স্ত্রীর এমন আগাম প্রচারণায় বিরক্ত। তারা বলছেন, পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এরশাদের অনুজ জি এম কাদের জাপার দায়িত্ব নেওয়ার পর গণমাধ্যমে এক ধরনের বক্তব্য দেন। তবে তার দলীয় কর্মকাণ্ডে সেসব বক্তব্যের প্রতিফলন হয় না।
জাপার এক কো-চেয়ারম্যান বলেন, সর্বশেষ ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত দলের প্রেসিডিয়াম ও এমপিদের যৌথসভায়ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অথচ, খোদ চেয়ারম্যানের স্ত্রী শেরিফা কাদের ঢাকা-১৮ আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য এলাকাবাসীর দোয়া চেয়ে পোস্টারিং করছেন।
তিনি বলেন, ‘আজকে যদি পার্টির অন্য কেউ এই ধরনের কাজ করতেন তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতো। কিন্তু জাপা চেয়ারম্যানের স্ত্রী বলে কথা। তাই এক্ষেত্রে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি।’
জাপার নেতারা বলছেন, জিএম কাদেরের সঙ্গে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের মূল বিরোধ সরকারের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেওয়া না-নেওয়াকে কেন্দ্র করে। রওশন সরকারের পক্ষে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দিলে তা দলীয় নয় ব্যক্তিগত বলে পাল্টা অবস্থান নেন জিএম কাদের।
জাপা আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে রওশন এরশাদ এমন ঘোষণা দিলেও রওশনপন্থী কেউ এখন পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারে নামেনি। অন্যদিকে জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা রীতিমতো কোমর বেঁধে নির্বাচনী মাঠে নামায় বিস্মিত নেতাকর্মীরা।
দলের সিদ্ধান্ত ছাড়াই নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়ায় নেতাকর্মীদের অনেকেই যেমন শেরিফার সমালোচনা করছেন, তেমনি স্বামী জি এম কাদেরও সমালোচিত হচ্ছেন। নেতাকর্মীরা দলের চেয়ারম্যানের এমন দ্বৈতনীতি নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন।
এ বিষয়ে রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রওশন এরশাদ শুরু থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা বলে আসছেন। আবার জিএম কাদের এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বলেও প্রার্থী ঘোষণা দিচ্ছেন। তার নিজ স্ত্রীও পুরোদমে নির্বাচনী মাঠে। এমন দ্বিমুখী নীতি কর্মীরা ভালো নেয় না।’
জাপার শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে ঢাকা টাইমস জানতে পেরেছে, দলের ২৪ জন সংসদ সদস্যসহ মনোনয়নপ্রত্যাশী আর কোনো নেতা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা ভোট চেয়ে কোনো পোস্টার করেননি।
এ বিষয়ে জানতে শেরিফা কাদেরের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা টাইমস। তিনি বলেন, ‘জনগণের কথা বিবেচনায় নিয়ে জাপা নির্বাচনে যাবে। আর আমিও নির্বাচন করবো বলেই ঢাকা-১৮ আসনের প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালানোর কাজ শুরু করেছি।’
শেরিফা কাদেরের এই প্রচার-প্রচারণাকে অতিউৎসাহী কর্মকাণ্ড মনে করেন জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে জিএম কাদেরের প্রতি নেতাকর্মীদের যে শ্রদ্ধাবোধ ছিল তা কমতে বসেছে বলেই তার ভাষ্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নেতাকর্মীরা মনে করছেন শেরিফা কাদের যে নির্বাচনী পোস্টার লাগিয়েছেন তা অবশ্যই জিএম কাদেরের সম্মতিতে করছেন। তার স্ত্রীর জন্য এক আইন আর অন্য নেতাদের জন্য আরেক আইন!’ এমন দ্বিমুখী নীতি কেন সেই প্রশ্নও তোলেন জাপার এই প্রেসিডিয়াম সদস্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিএম কাদের ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে ঘোষণা আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বলা যাবে না জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে না।’
ঢাকা-১৮ আসনে প্রার্থী হিসেবে স্ত্রী শেরিফা কাদেরের প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে জাপা চেয়ারম্যান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা এখনো এই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি।’
উল্লেখ্য, ঢাকা-১৮ আসন রাজধানীর দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, তুরাগ, উত্তরা এবং উত্তরখান থানা এবং আশপাশের কয়েকটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ হাবিব হাসান বর্তমানে এই আসনের এমপি।
(ঢাকাটাইমস/১৯অক্টোবর/ডিএম)

মন্তব্য করুন