রাজবাড়ীর ১৭ সিনেমা হল এখন বিপণিবিতান

বাংলার গ্রামগঞ্জে একসময় বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল সিনেমা হল। ওই সময় সিনেমা দেখার জন্য টিকিট সংগ্রহ করাও ছিল রীতিমতো যুদ্ধ। সহজে টিকিট পাওয়াটা ছিল সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার মতো।
কখনো কখনো উচ্চমূল্য দিয়ে ব্ল্যাকে কিনতে হতো টিকিট। এসব চিত্র এখন কেবলই স্মৃতি। দর্শক সংকটের কারণে সারাদেশের মতো রাজবাড়ীর সিনেমা হলের সংখ্যাও প্রায় শূন্যের কোঠায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ছয়টি, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ছয়টি, পাংশা উপজেলায় চারটি, গোয়ালন্দ উপজেলায় তিনটি এবং কালুখালী উপজেলায় একটিসহ জেলায় ২০টি সিনেমা হল ছিল।
দর্শক সংকটে পড়ে হলগুলোর ১৭টিই বন্ধ হয়ে গেছে। হলগুলো ভেঙে গড়ে তোলা হয়েছে বিপণিবিতান, গ্যারেজ, গোডাউন ও আবাসিক ভবন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার ‘সাধনা সিনেমা হল’, কালুখালী উপজেলার ‘ বৈশাখী’ এবং গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটের‘মনোরমা’ সহ তিনটি সিনেমা হল চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। দর্শক থাকলে চলে, না থাকলে বন্ধ থাকে।
সরেজমিন এসব সিনেমা হল ঘুরে দেখা যায়, শো চলার নির্ধারিত কোনো সময় নেই। দর্শকদের চাহিদার উপর নির্ভর করে মাঝেমধ্যে একটি-দুটি শো চালানো হয়। দর্শক সংকটের কারণে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে এই হলগুলোও।
সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টরা দায়ী করছেন স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, মানহীন সিনেমা ও বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনকে। তারা জানান, নব্বই দশক পর্যন্ত সিনেমা হলগুলোতে উপচেপড়া ভিড় থাকতো। ২০০০ সালের পর থেকে হলবিমুখ হতে শুরু করেন দর্শকরা।
তাদের ধারণা, পরিবারের সবাই মিলে দেখার মতো মানসম্মত ও শিক্ষণীয় সিনেমা তৈরি হলে দর্শকরা আবারও হলমুখী হবেন।
মনোরমা সিনেমা হলের মালিক তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, ‘রাজবাড়ীতে অনেক সিনেমা হল ছিল। সবচেয়ে বেশি সিনেমা হল ছিল আমাদের। কিন্তু লোকসান গুনতে গুনতে একসময় সিনেমা হলগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। এখন মাত্র একটি সিনেমা হল আছে। সেটিও যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
মনোরমা সিনেমা হলের কর্মচারী নারায়ণ চন্দ্র জানান, দর্শক সংকটে পড়ে হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন হল শ্রমিকরা।
মধুমতি সিনেমা হলের মালিক নায়েব আলী শেখ বলেন, ‘দর্শক না হওয়ায় ১২-১৩ বছর আগে আমাদের সিনেমা হলটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।’
গোধূলী সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘অনেক আগেই সিনেমা হলের ব্যবসা শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু কাগজে-কলমে এই ব্যবসা টিকে রয়েছে।’
(ঢাকা টাইমস/১০নভেম্বর/এজে)

মন্তব্য করুন