বদলগাছীতে ‘নাসিক এন-৫৩’ জাতের পেঁয়াজ চাষে সফলতা
পেঁয়াজের নতুন জাত নাসিক রেড এন-৫৩। এটি চাষে কৃষকের তেমন নেই কোনো খরচ। গ্রীষ্মকালীন এই ফসলের ফলন বেশ ভালো এবং শতভাগ লাভজনক। ফলে ভালো ফলন ও আশানুরূপ দাম পাওয়ায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। ফলে সম্ভাবনা ও আশা জাগাচ্ছে বদলগাছীর কৃষকদের মাঝে। অসময়ের এই ফসলে এরইমধ্যে কৃষকের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়নের কেশাইল গ্রামে গিয়ে কথা হয় কৃষক আব্দুল ছালামের সঙ্গে। তিনি ৮ শতাংশ জমিতে আবাদ করেছেন গ্রীষ্মকালীন নতুন জাতের পেঁয়াজ ‘নাসিক এন-৫৩’। বীজ, সারসহ অন্যান্য উপকরণ দিয়েছে বদলগাছী উপজেলা কৃষি অফিস থেকে। মাত্র এক মাসের মধ্যে পেঁয়াজে গুটি আসতে শুরু করেছে। আর এক মাসের মধ্যে বাজারে তুলতে পারবে পেঁয়াজ।
ভালো ফলনে খুশি হয়ে তিনি বলেন, এই চারা এতো ছোট প্রথমে আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি। এখন জমির পেঁয়াজ অনেক সুন্দর হয়েছে। আশা করছি প্রায় ৩০ মণ পেঁয়াজ পাবো। নিজেদের খাওয়ার জন্য রেখে বাকিগুলো বাজারে বিক্রি করবো। যা বিক্রি হবে তার সবটুকুই লাভ।
কৃষক ছালাম আরও বলেন, কৃষি অফিস থেকে নতুন এই জাতের পেঁয়াজের আবাদ করার জন্য আমাদেরকে উৎসাহ করা হচ্ছে। কৃষি দপ্তরের লোকজন সবসময় পরামর্শ দিচ্ছেন। কৃষি দপ্তরের সহায়তা পেলে আগামীতে আরও বেশি জমিতে অফসিজনের এই পেঁয়াজের চাষ করব।
একই ইউনিয়নের কেশাইল দক্ষিণ পাড়া গ্রামের আরেক কৃষক রোস্তম আলী চঞ্চল বলেন, আমি এবার ২২ শতক জমিতে নতুন এই জাতের পেঁয়াজ লাগিয়েছি। ২ মাসের মধ্যে প্রায় ৫৫-৬০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছি। ইতিমধ্যে অনেক পেঁয়াজ পাইকারি ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। বিনামূল্যে বীজ ও সারসহ অন্যান্য উপকরণ কৃষি অফিস থেকে পেয়েছি। এখানে নিজের পরিশ্রম বাদে সবকিছুই বিন্যামূল্যে পেয়েছি। এবং লাভ সবগুলোই হয়েছে। সামনের বার আরও বেশি জমিতে এই ধরনের পেঁয়াজ আবাদ করবো।
এদিকে কৃষি বিভাগের আশা সারা বছর পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নাসিক এন-৫৩ জাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আর স্থানীয় চাষিরা বলেন, বীজ পাওয়ার কারণে পেঁয়াজ থেকে আমরা ভালোই লাভ করতে পেরেছি। আমরা যদি এইরকম সুবিধা পাই তাহলে এটি আবাদ করতে উৎসাহিত হব। সারা বছর এভাবে যেন সহযোগিতা করেন তারা। এছাড়া চাষে প্রশিক্ষণসহ স্বল্প সুদে ঋণ সহায়তার দাবি জানিয়েছেন কৃষকেরা।
বদলগাছী কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন ও নাজমুল হক বলেন, আমরা কৃষকদের বীজের সঙ্গে ডিএপি ২০ কেজি, পটাশ ২০ কেজি দিয়েছি। এছাড়া অন্যান্য উপকরণসহ পরামর্শমূলক সহযোগিতা সবসময় করছি। নাসিক ফিফটি ত্রি বা এন-৫৩ জাতের এই পেঁয়াজের এক কেজি বীজ দিয়ে এক বিঘা জমিতে চাষ করা যাবে। এর পরিচর্যা খরচও কম, সেটাও আমরা দিয়েছি। যদি ফলন ভালো হয় তাহলে ৭-৮ পেঁয়াজে এক কেজি হয়। এবং বিঘা প্রতি ৭০-৮০ মণ পেঁয়াজ হয়ে থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাবাব ফারহান বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ নাসিক এন-৫৩ জাতটি ভারতীয়। পেঁয়াজ সংকট দূর করার লক্ষ্যে কৃষকদেরকে অধিক ফলনশীল এই পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আমরা এই উপজেলায় একশত ৫০ জন কৃষককে প্রণোদনা সহায়তা দিয়েছি। পরিচর্যার জন্য নগদ টাকাও দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগ অধিক লাভজনক এই পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের সবধরণের পরামর্শ দেওয়ায় আবাদ আশানুরূপ ভালো হয়েছে। এরইমধ্যে জমি থেকে পেঁয়াজ তোলা শুরু করেছেন কৃষকেরা। বাজারদরও ভালো রয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় এ আবাদের প্রতি কৃষকের আগ্রহও বাড়ছে।
(ঢাকাটাইমস/৩০নভেম্বর/ইএইচ)