জোটবদ্ধ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, ছাড় দেবে যোগ্য শরিকদের

জাফর আহমেদ, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৩:৫৫
অ- অ+

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল জোটগতভাবে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে বৈঠক হচ্ছে দফায় দফায়। প্রথম দিকে জোটের শরিকরা অর্ধশত আসন চাইলেও মঙ্গলবার আমির হোসেন আমুর বাসার বৈঠক শেষে জোট নেতারা ২০টি আসন চাওয়ার কথা জানান। তবে, শরিকদের মধ্যে যারা যোগ্য আওয়ামী লীগ তাদের জন্য ৫-৭টি আসন ছাড়তে রাজি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

শরিকদের আসন চূড়ান্ত করতে মঙ্গলবার ১৪ দলের কয়েকজন নেতা জোট সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সঙ্গে বৈঠক করেন তার ইস্কাটনের বাসায়। বুধবার জাতীয় পার্টি জেপির সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হবে। জোটের আসন বন্টন ও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

শরিকজোট থেকে কারা আসন পাচ্ছেন- তা এখনো পরিস্কার করা হয়নি। তবে, আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, আজকালের মধ্যে জানা যাবে শরিকদের মধ্যে কোন কোন নেতা নির্বাচন করবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিকদের দাবি ২০টি আসন। কিন্তু আওয়ামী লীগ কাউকে ঢালাওভাবে আসন দিতে নারাজ। ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে আসলেও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন ভাবনা দেখা গেছে ক্ষমতাসীন এ দলটিতে। বলা হচ্ছে, শরিকদের মধ্যে যারা যোগ্য তাদের ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ।

সোমবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতারা জোটনেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করেন। বৈঠকে নির্দিষ্ট করে আসন ভাগাভাগি না হলেও এটি সমাধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমির হোসেন আমু, ওবায়দুল কাদেরসহ চার নেতাকে। তারা আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করে চূড়ান্ত করবেন শরিকদের আসন।

১৪ দল নেতারা জানিয়েছেন, শরিকরা আওয়ামী লীগের কাছে ২০টি আসন চেয়েছিল। কিন্তু, আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের জানিয়েছেন, যারা যোগ্য তাদেরকেই শুধু মনোনয়ন দেওয়া হবে। কারণ এবারের নির্বাচন একটি ভিন্ন ধরণের নির্বাচন হতে চলেছে। নির্বাচনের মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আছেন। তাই একটাই লক্ষ্য- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা। নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ কারণেই তিনি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে ১৪ দলের শরিকদের ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার অনুরোধ জানান।

আসন ভাগাভাগি নিয়ে মঙ্গলবার বিকালে, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, শিরিন আখতার বৈঠক করেন ১৪ দলের প্রধান সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সঙ্গে। সোমবার শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক পরে শরিকদের পাচঁ থেকে সাতটি আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানা গেছে। কিন্তু সেই প্রার্থীরা কারা তা এখনো ঘোষণা করা হয়নি।

মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, দুই-একদিনের মধ্যে আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। এটি নিয়ে কোনো মনমালিন্য নেই। শরিকদের মধ্যে যারা যোগ্য আওয়ামী লীগ তাদেরকে ছাড় দেবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শরিকদের দলের মধ্যে কয়েকজন নেতাকে নির্বাচনি মাঠে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বলা হয়েছে, রাজশাহী-২ আসন থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কুষ্টিয়া-২ আসনে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বরিশাল-২ অথবা বরিশাল-৩ আসন থেকে রাশেদ খান মেনন এবার নির্বাচন করবেন। যে আসনটিতে তিনি নির্বাচন করতে চান তা আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেবে। পিরোজপুর-২ আসনটি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর জন্য চট্টগ্রাম-২ আসন ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। এছাড়া, ঢাকা-১৪ আসনে আলোচনায় আছেন জেপি (মঞ্জু) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম।

তবে, ১৪ দলের প্রার্থী হতে জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারসহ আরও কয়েকজনের নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে। আরও পাঁচটি আসনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ১৪ দল নেতারা। শিরিন আখতারকে যদি জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীরা করা না হয়, পরে সংরক্ষিত নারী আসনে তাকে এমপি করা হবে। এমন আলোচনার কথাই শোনা যাচ্ছে নানা সূত্রে।

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচন করব এটা বলা হয়েছে। আসন ভাগাভাগি হয়নি। শরিকদের আসন ভাগাভাগি করতে আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটা টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, নির্বাচনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জোটবদ্ধভাবে অংশ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আসন ভাগাভাগি করার আলোচনা হয়েছে। আজ-কালের মধ্যে শরিকদের প্রার্থী ঠিক করা হবে।

বর্তমানে জাতীয় সংসদে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে চারটি দলের ৮জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। এদের মধ্যে জাসদের তিনজন, ওয়ার্কার্স পার্টির তিনজন, জেপির (মঞ্জু) একজন ও তরিকত ফেডারেশনের একজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। এবার এই ৮টি আসনের মধ্যে ৭টিতেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। আসন সমঝোতার পর দলের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেআওয়ামী লীগ সূত্র।

(ঢাকাটাইমস/০৫ডিসেম্বর/জেএ/বিবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনার সামনে রাতভর অবস্থানের পর সকালেও বিক্ষোভ
এলাকাবাসীর বিক্ষোভ-অবস্থানের মধ্যে অভিযানের সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর গ্রেপ্তার সাবেক মেয়র আইভী
মানবিক করিডরের নামে কোনো কিছু জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, মির্জা ফখরুলের হুঁশিয়ারি 
জম্মু-কাশ্মীরে হামলার ভারতীয় প্রতিবেদন ‘ভুয়া এবং মিথ্যা’: পাকিস্তান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা